Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

গিরিশের ক্ষোভ থেমে থাকেনি

‘আশার নেশায়’ নাটকটিতে। লিখছেন পিয়ালী দাসবাংলা থিয়েটারকে উচ্চবিত্তের ঘেরাটোপ থেকে মুক্ত করে জনমানসে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। জীবনের প্রায় অর্ধ শতক থিয়েটারেই সঁপে দিয়েছিলেন প্রাণ। তবুও বঙ্গসংস্কৃতির অঙ্গনে থেকে গেছেন প্রান্তিক হিসেবেই।

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

বাংলা থিয়েটারকে উচ্চবিত্তের ঘেরাটোপ থেকে মুক্ত করে জনমানসে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। জীবনের প্রায় অর্ধ শতক থিয়েটারেই সঁপে দিয়েছিলেন প্রাণ। তবুও বঙ্গসংস্কৃতির অঙ্গনে থেকে গেছেন প্রান্তিক হিসেবেই। সেই অনুভবের জায়গা থেকেই নাট্য নির্দেশক শেখর সমাদ্দার এবার মঞ্চে তুলে আনলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষের জীবন এবং সময়কে। আভাষ-এর প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হল ‘আশার নেশায়’ নাটকটি। এ কালের এক নাট্যকারের বয়ানে উঠে এল সমস্ত ঘটনা। গিরিশের শৈশব থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীর অকালমৃত্যু। থিয়েটার প্রীতি থেকে নাটক নির্দেশনা, একাকীত্ব, সম্মানহানির মতো ঐতিহাসিক সব মুহূর্ত।

সমস্ত ঘটনা উঠে এল অনেকটা ন্যারেশনের ধাচে। স্বয়ং গিরিশ ঘোষের সঙ্গে এ কালের এক নাট্যকার বেলবাবুর (রাজা বর্ধন) কথোপকথন, পর্দায় ভেসে ওঠা পুরনো কলকাতার চিত্র এবং বিবিধ নাটকের অংশবিশেষ অভিনয়ের মাধ্যমে। তবে ঘটনার নির্মাণে ইতিহাস যেমন আছে, সত্য যেমন আছে তেমনই কিছুটা রূপকেরও আশ্রয় নিয়েছেন নির্দেশক।

গিরিশ ঘোষের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পরিচালক শেখর সমাদ্দার। কখনও চরম আত্মবিশ্বাসী, কখনও হতাশাগ্রস্ত বা আবেগপ্রবণ, এই বিভিন্ন মেজাজের গিরিশকে সঠিক মাত্রায় ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। মুক্ত কণ্ঠে গাইতেও (সুখ কি সতত হয় প্রণয় হ’লে) শোনা যায় তাঁকে। থিয়েটারকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠায় গিরিশের যে লড়াই, জাতীয়তাবোধকে জাগিয়ে তোলার যে প্রচেষ্টা সে সব ঘটনাও উঠে এল। বাংলা থিয়েটারের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে নটি বিনোদিনীও। কাজেই তাঁকেও প্রত্যক্ষ করা গেল নাটকে। সেই সঙ্গে উঠে এলেন গুর্মুখ রায়, কুমার বাহাদুররা। এ নাটকে হৃদয়বান, আবেগপ্রবণ গিরিশকে দেখা গেলেও উঠে আসেন রাজনীতিক গিরিশও। যিনি থিয়েটারের স্বার্থেই ব্যবহার করেন স্নেহের বিনোদিনীকে। কাছের মানুষ গিরিশ তখন হয়ে ওঠেন ষড়যন্ত্রকারী। বিনোদিনী শর্ত দিয়েছিলেন তাঁর নামে নতুন থিয়েটারের নামকরণ করতে হবে বি থিয়েটার। কিন্তু গিরিশ এ যুক্তিই প্রতিষ্ঠিত করতে চান, একটা বেশ্যার নামে থিয়েটার হলে শিক্ষিত সমাজ দেখবে? অন্য দিকে গিরিশের গলায় তখন ঝরে পড়ে হতাশা, যখন বলে ওঠেন ‘আমি যাত্রাওয়ালা, পাঁচালীওয়ালা গিরিশ’। নিজের হাতে সৃষ্টি করেছিলেন একাধিক নারী চরিত্র, তবুও বুঝে উঠতে পারেননি মেয়েদের মন। এ আক্ষেপও ধরা পড়ে গিরিশের গলায়।

তিনকড়ি (শিপ্রা মুখোপাধ্যায়), গোলাপসুন্দরী, তারাকুমারী (সবিতা দাস)—বিনোদিনীর পাশাপাশি এই সমস্ত নতুন প্রতিভাদেরও তুলে এনেছিলেন গিরিশ। তারাও জীবন্ত হয়ে উঠলেন মঞ্চে। বিনোদনীর ভূমিকায় শ্রীময়ী চট্টরাজের সাবলীল অভিনয় মুগ্ধ করে। এ নাটকে গুর্মুখ রায়ের (ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়) সেই গাম্ভীর্য খুঁজে পাওয়া গেল না। বেশভূষায় রামকৃষ্ণকে (সুপ্রিয় হরি) মানিয়ে গেলেও অভিব্যক্তিতে সদা হাস্যময়, স্নেহ পরায়ণ মাটির মানুষটির প্রাণটাকে খুঁজে পাওয়া গেল না। গিরিশচন্দ্রের নাট্য প্রতিভা স্ফুরণে বিশেষ সাহায্য করেছিলেন বান্ধবী মিসেস লুইস (মহাশ্বেতা চক্রবর্তী)। উঠে আসে তাদের অন্তরঙ্গতার কথাও। গিরিশের সময়কালকে ধরতে প্রয়োজন ছিল সঠিক মঞ্চ রূপায়ণ। সেটা সম্ভব হল মঞ্চ (মদনগোপাল হালদার), আবহ (স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়), রূপসজ্জা (মহ আলি) এবং আলোর (কল্যাণ ঘোষ) সদ্ব্যবহারে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy