মেয়েরাই পারে
আজকের মহিলারা দশভুজার মতো দশ হাত দিয়ে সংসার সামলান এবং পুরুষদের মতো সমান তালে চাকরি করে সংসারে অর্থনৈতিক সাহায্যও করেন। এ ছাড়া বর্তমানে নারীরা সংসার ছাড়া চাকরিজীবনেও অনেক বেশি উন্নতি করতে চান। কিন্তু মহিলা ও পুরুষদের কয়েকটি অমিলের মধ্যে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ হল নারীরা মা হতে পারেন যা পুরুষদের পক্ষে সম্ভব না। এ বার প্রশ্ন একজন স্বাভাবিক নারী আর একজন গর্ভবতী নারীর জীবনযাত্রা তো সমান হতে পারে না। তা হলে একজন চাকুরিরত মহিলা কী ভাবে গর্ভাবস্থায় তাঁর চাকরি বজায় রাখবেন। এই প্রশ্নটি আরও জটিল হয়ে যায় যখন কোনও নারী বেশি বয়সে গর্ভধারণ করেন এবং চাকরিতে সারাদিনে অনেকক্ষণ সময় কাজে ব্যস্ত থাকেন।
সমস্যা শুরুতেই
গর্ভাবস্থায় বেশির ভাগ মহিলাদেরই সকাল বেলার দিকে বমি ভাব, মাথা ঘোরা ইত্যাদি সমস্যাগুলো হয়। কিছু কিছু মহিলার ক্ষেত্রে তো সারাদিন থাকে। চেষ্টা করুন যে বিষয়গুলি থেকে আপনার বমি ভাব আসছে সেগুলির থেকে দূরে থাকতে। এই সময় খাবারের গন্ধে অনেক সময় এই সমস্যার বাড়বাড়ন্ত হয়। বিস্কুট বা অন্যান্য হালকা খাবার আপনাকে বাঁচাতে পারে এই সমস্যার হাত থেকে। কাজের জায়গায় এই ধরনের খাবার রেখে দিন এবং মাঝে মাঝে সেগুলি নিন। আদা মিশ্রিত পানীয় বা চা আপনাকে এই সময় সাহায্য করতে পারে। কর্মরত মহিলাদের গর্ভাবস্থায় অনেকক্ষণ খালিপেটে থাকা বারণ। এতে বাচ্চার ক্ষতি তো হয়ই, সঙ্গে বমি ভাব, মাথা ঘোরা, মাথার যন্ত্রণার সমস্যাগুলি বেড়ে যায়। তাই চাকুরিতে মহিলাদের সঙ্গে সব সময় পরিমাণ মতো উপযুক্ত খাবার রাখা উচিত।
খাওয়া-দাওয়া হিসেব করে
এমন খাবার খান যাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং প্রোটিন আছে। ক্লান্তি দূর করার জন্য এই দুটি পুষ্টির খুব প্রয়োজন আছে। পাঁঠার মাংস, পোলট্রি জাত খাবার, ছোট এবং সামুদ্রিক মাছ, সবুজ সবজি ইত্যাদি। প্যাকেট জাত খাবার, অর্ধেক রান্না করা খাবার খাবেন না। নেশা জাতীয় পদার্থ যেমন ধূমপান, মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন। কাজের টেবিলে জল বা ফলের রস জাতীয় পানীয় রাখুন এবং সারাদিন অল্প অল্প করে পান করুন। কফিজাত দ্রব্য যত পারবেন কম পান করবেন। দিনে খুব বেশি হলে ৩০০ মিলি গ্রাঃ। বিভিন্ন ধরনের বাদাম সঙ্গে রাখা খুব উপযোগী কারণ এতে ক্যালরি ও প্রোটিন উপযুক্ত মাত্রায় রয়েছে।
বাড়তি বিশ্রাম জরুরি
ইঁদুর দৌড়ের যুগে কর্মরত নারীদের পক্ষে কাজের মধ্যে বিশ্রাম নেওয়া খুব কঠিন। কারণ একটু পিছিয়ে পড়লেই আপনাকে ছাড়িয়ে অন্য জন এগিয়ে যাবে। মনে রাখবেন প্রেগন্যান্সিতে আপনার শরীর বেশি বিশ্রাম চায় আপনার গর্ভস্থ সন্তানকে সঠিক পুষ্টি দেওয়ার জন্য। তাই খুব ব্যস্ততার মধ্যেও প্রতি ২-৩ ঘণ্টায় অন্তত মিনিট ১৫ বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। কিছুক্ষণ পরে পরে কাজের জায়গা থেকে উঠে একটু ঘুরে আসুন বা আলো নিভিয়ে চোখ বন্ধ করে নিজেকে উজ্জীবিত করে তুলুন। কাজের শেষে বেশিক্ষণ বাইরে ঘুরে কেনাকাটা না করে সেগুলি অনলাইন করুন আর সেই সময়টা বাড়তি বিশ্রাম নিন। তার মানে এই নয় যে আপনাকে সবসময় বিছানায় শুতে হবে। কিছুক্ষণ পা ছড়িয়ে চেয়ারে শরীরটাকে এলিয়ে দিলেই যথেষ্ট। দুপুরে ১-২ ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে পারলে খুবই ভাল হয় বিশেষত বয়স্ক গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে। এটা আরও বেশি প্রয়োজন যাঁদের ব্লাড প্রেশারের সমস্যা আছে।
সারা দিন বসে কাজ হলে বসার চেয়ারটা একটু ভাল করে দেখে নিন যাতে পিঠের দিকে ঠেস দিয়ে বসতে পারেন। প্রয়োজনে পিঠের দিকে একটি বালিশ নিয়ে আরাম করে বসুন। পা দুটো একটি ছোট টুলের উপরে উঠিয়ে রাখতে পারলে ভাল হয়। যদি বেশির ভাগ সময় দাঁড়িয়ে কাজ হয় তবে একটি পা তুলে রাখুন ছোট টুলের উপর। আর কিছুক্ষণ পরে পরে পা পরিবর্তন করুন। নীচ থেকে কিছু তুলতে গেলে হাঁটু ভাঁজ করে নিচু হোন, কোমর ভাঁজ করবেন না।
চাই শারীরিক ব্যায়াম
প্রেগন্যান্সিতে কিছু শারীরিক ব্যায়াম আপনার এনার্জি বাড়ায় বিশেষত যদি আপনি সারা দিন এক জায়গায় বসে কাজ করেন। যদিও সারা দিন কাজের পরে আপনার ব্যায়াম করতে হয়তো একেবারেই ইচ্ছা করে না। তবে চেষ্টা করুন বাড়ি ফেরার সময় কিছুটা হাঁটতে অথবা কোনও সংস্থায় ভর্তি হয়ে প্রেগন্যান্সিতে করা যায় এমন ব্যায়ামের প্রশিক্ষণ নিন। তবে তার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিন। প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমোনোর চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ুন। মনে রাখবেন বামদিকে ফিরে শুলে বাচ্চা এবং মায়ের মধ্যে সব থেকে ভাল রক্ত চলাচল করে। পারলে পায়ের মাঝে আর পেটের তলায় একটা করে বালিশ দিয়ে দিন।
মানসিক চাপ কমাতে হবে
চাকরি করলে কিন্তু মানসিক চাপ থাকবেই তাই তাকে কী ভাবে কমাবেন সেটা আসল। প্রতিদিনের কাজের একটি তালিকা আগের দিনই তৈরি করে রাখুন। আর চেষ্টা করুন কাজ সবার মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার। কাজের জায়গায় অবসাদ মনের মধ্যে চেপে না রেখে কারও সঙ্গে ভাগ করে নিন। মানসিক শান্তির জন্য আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস নিন এবং চোখ বন্ধ করে অন্য কিছু চিন্তা করুন। প্রয়োজনে যোগাভ্যাস করতে পারেন। তবে তার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিন।
অফিস যাতায়াতের মাধ্যমটা নির্ধারণ করাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় নিজের গাড়ি বা ট্যাক্সিতে যাতায়াত করাটাই শ্রেয়। মোটর সাইকেল, বাই সাইকেল, সাইকেল রিকশা, অটো রিকশা, পাবলিক বাস ইত্যাদি যানবাহনে ওঠা একেবারেই উচিত না। কারণ এগুলিতে যেমন ভিড়ের সম্ভাবনা থাকে, পেটে আঘাত লাগতে পারে, তেমনই এতে ঝাঁকুনি বেশি হয় বলে তা প্রেগন্যান্সিরও ক্ষতি করতে পারে।
কাজের পরিবেশ বদলাতে হবে
প্রেগন্যান্সিতে কী ধরনের কাজ করবেন সেটা নির্ধারণ করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন কিছু কিছু কাজের পরিবেশ আপনার প্রেগন্যান্সির ক্ষতি করতে পারে। যেমন—
১) ক্ষতিকারক পদার্থের সামনে থাকা।
২) অনেকক্ষণ একটানা দাঁড়িয়ে কাজ করা।
৩) খুব ভারী জিনিস তোলা, বেশি বার সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা।
৪) খুব চিৎকার চেঁচামেচির মধ্যে থাকা।
৫) খুব বেশি কম্পনের মধ্যে থাকা বিশেষত বড় মেশিনের কম্পন।
৬) এমন কোনও জায়গা যেখানকার উত্তাপ মারাত্মক বেশি।
আজকের অর্থনীতি এবং জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে বেশিরভাগ পরিবারেই মহিলারাও চাকরি করেন। এখন সেই যুগও নেই যেখানে নারীকে সংসারের দোহাই দিয়ে ঘরবন্দি করে রাখা যায়। যদিও কিছু দিন আগেই ভারত সরকার ঘোষণা করেছেন বেসরকারি সংস্থাগুলোতেও প্রেগন্যান্সি চলাকালীন ও তার পরে সর্বোচ্চ ২৬ সপ্তাহ ছুটি পাবেন। যা এক দিকে এখানকার প্রেগন্যান্ট মহিলাদের ক্ষেত্রে খুশির খবর। কিন্তু এই ছুটিটার বেশিরভাগটাই লেগে যায় ডেলিভারির পরে সদ্য জন্মানো সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো বা সেই সন্তানকে দেখাশোনা করার জন্য।
চাই শারীরিক ব্যায়াম
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy