৮ জনেরই গলার শ্বাসনালী কেটে দেওয়া হয়েছে। ৫ জন মৃত। —প্রতীকী চিত্র।
কুয়াশা ঢাকা শীতের রাতে মেঘনা নদীর মাঝখানে মালবাহী জাহাজ ‘এম ভি আল বাখেরা’ নোঙর করে ঘুমোতে যান সারেং ও নাবিক মিলিয়ে ৮ জন। চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদীতে কাফকো জেটি থেকে ৭২০ টন সার নিয়ে রবিবার রওনা হয় জাহাজটি। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি যাওয়ার কথা ছিল সেটির। সোমবার সকাল থেকে মালিক কারও ফোন না পেয়ে নিজের অন্য একটি জাহাজের কর্মীদের দেখতে পাঠান। তাঁরা বিকেলে পৌঁছে দেখেন ৮ জনেরই গলার শ্বাসনালী কেটে দেওয়া হয়েছে। ৫ জন মৃত। ৩ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে দু’জনের মৃত্যু হয়। এক জন কর্মী কেবল গুরুতর জখম অবস্থায় বেঁচে রয়েছেন, কিন্তু শ্বাসনালী কেটে দেওয়ায় তিনি কথা বলতে পারছেন না। কাগজে নিজের নাম জুয়েল এবং ফোন নম্বরটি তিনি লিখে দেন।
মেঘনা-পদ্মায় হামেশাই পণ্যবাহী জলযানে ডাকাতেরা উঠে লুটপাট করে। ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তা আরও বেড়েছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে জাহাজের একটি সারের বস্তাও সরিয়ে নিয়ে যায়নি দুষ্কৃতীরা। এই ‘রহস্যময়’ বিষয়টিই কপালে ভাঁজ ফেলে গোয়েন্দাদের। ৭ জন নাবিককে ঘুম পাড়িয়ে খুন করা এক জনের কাজ বলে যে দাবি পুলিশ করেছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়, দাবি গোয়েন্দাদের।
এর আগে ২০০৪-এর ১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার আমলে চট্টগ্রামের কর্ণফুলিতে শিল্প দফতরের জেটিতে আলফার জন্য আনা বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র, রকেট লঞ্চার, রকেট এবং গোলাগুলি ১০টি ট্রাকে তোলার সময়ে ধরা পড়ে যায়। সেই সময়েও তদন্তের নামে জর্জ মিয়াঁ নামে এক জনকে আসামি সাজিয়ে বিস্তর নাটক করেছিল পুলিশ। পরে ক্ষমতা দখল করে সেনা-সরকার নতুন করে তদন্ত করে চক্রান্ত ফাঁস করে। চক্রান্তে যুক্ত থাকার অভিযোগে স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুতফুজ্জামান বাবর, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু-সহ কয়েক জনকে প্রাণদণ্ড দেয় আদালত। খালেদার পুত্র তারেক রহমান-সহ ১৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত ইউনূস সরকারের আমলে সবাইকে বেকসুর বলে মুক্তি দিয়েছে হাই কোর্ট।
এই ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সূত্রে গোয়েন্দাদের কাছে খবর মিলেছে, ভারত ও বাংলাদেশে নাশকতা চালানোর লক্ষ্যে জাহাজটি করে সারের বস্তার আড়ালে প্রচুর পরিমাণে আরডিএক্স পাচার করা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যার মধ্যে তা হাত বদলও হয়ে গিয়েছে। তার পরে রাতে জাহাজটির সব কর্মীকে খুন করে সাক্ষী লোপাট করার চেষ্টা হয়। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, যে পরিমাণ আরডিএক্স আনা হয়েছে, তা দিয়ে অন্তত ৩০০ জায়গায় বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটানো সম্ভব। পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এই বিস্ফোরক পাঠিয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। ইউনূস সরকার ক্ষমতায় আসার পরে উত্তরপূর্বের সঙ্গে ভারতের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগকারী সরু অংশ ‘চিকেন নেক’ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিচ্ছে জঙ্গিরা। এই বিস্ফোরক পাচারের সঙ্গে গোয়েন্দারা সেই চক্রান্তের যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছেন।
এই বিস্ফোরক-তথ্য সামনে আসার পরে উত্তরপূর্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীকেও সতর্ক করা হয়েছে। জাহাজটি সম্পর্কে আরও তথ্য সন্ধানে নেমেছেন গোয়েন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy