শিল্পী ছিলেন সুস্মিত বসু (বাঁ দিকে), শোভনসুন্দর বসু। ছবি: কৌশিক সরকার
বব ডিলান নোবেল পেলেন ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর। ওই ১০ তারিখেই ১৯১৩ সালে নোবেল পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ঠিক এই দিনটিতেই কলকাতায় অনুষ্ঠিত হল লিরিক্যাল সাহিত্যের অনুষ্ঠান।
বব ডিলানের গানের সঙ্গী সুস্মিত বসু এক সময়ে গানের সুবাদে পৃথিবীর নানা প্রান্ত ঘুরেছেন। সেই অভিজ্ঞতার বেশ কিছু গানের কয়েকটি এ দিন শোনালেন শ্রোতাদের। সুস্মিতের ‘ট্রেন টু ক্যালকাটা’র পরেই শোভনসুন্দর শোনালেন গীতাঞ্জলির ‘কৃপণ’ কবিতার ইংরেজি ও বাংলায় আবৃত্তি। বা ‘দ্য টাইমস দে আর চেঞ্জিং’ বব ডিলানের প্রতিবাদী গানে সুর ও সাম্যের সুন্দর আবাহন মনকে বড় নাড়া দেয়। ভাল লাগল ডিলান-সঙ্গীত জন্মের বিভিন্ন ইতিহাসও।
সুস্মিতের গিটার ও হারমোনিকার সঙ্গে দেবাশিস ভট্টাচার্যের কি-বোর্ড, অপূর্ব অধিকারীর তালবাদ্য এক অন্য মাত্রা এনে দেয় প্রতিটি আবৃত্তি ও গানের ক্ষেত্রে। বব ডিলানের জীবন ও সৃষ্টিকে কবিতার রূপে ধরতে চেয়েছেন কবি অদিতি বসু রায়। সেটি আবৃত্তিও করলেন শোভনসুন্দর। এ ছাড়াও তিনি শোনালেন সলিল চৌধুরীর ‘শপথ’, কবীর সুমনের ‘উত্তরও তো জানা’। ফৈয়াজ আহমেদ ফৈয়াজ-এর একটি উর্দু কবিতার আবৃত্তি শোভনসুন্দর এ দিন পাঠ করলেন নিখুঁত উচ্চারণে।
অনুষ্ঠান শেষ হয় সুস্মিত ও শোভনসুন্দরের যৌথ পরিবেশনে। বব ডিলানের প্রিয় গানের সুরে কণ্ঠ মেলালেন সুস্মিত, শোভন পাঠ করলেন রবীন্দ্র-কবিতা।
শিখা বসু।
জগৎ জুড়ে
সুচিত্রা মিত্রের ষষ্ঠ প্রয়াণ দিবস ও রবিতীর্থ প্রতিষ্ঠানের সত্তর বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠানটি হল শিশির মঞ্চে। সেখানে সরাসরি এসে পড়ল প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ গোলযোগের কথা। এ দিন তা সর্বসমক্ষে নিয়ে এলেন মীনাক্ষী গোস্বামী। যিনি সুচিত্রার প্রথম দিককার ছাত্রী। তাঁরই বাড়িতে ছিল রবিতীর্থ-র উত্তর কলকাতার শাখা। যে সকল অগ্রজ শিল্পীরা অনেক কারণে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন তাঁদের তিনি আহ্বান জানালেন, সকলে মিলে সুচিত্রা’র স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে। অবশ্য ভবিষ্যৎই বলবে তা কতটা কার্যকর হবে। শুরুতেই প্রাণহীন পরিবেশনায় ছিল পাঁচটি সম্মেলক গান। পরিচালনায় অনিতা পাল, মন্দিরা মুখোপাধ্যায়। এঁরাই পরে একক গান শোনালেন শুভ্রা সাহাকে সঙ্গে নিয়ে।
প্রথমে তিন জন গাইলেন ‘জগৎ জুড়ে উদার সুরে’। শুভ্রা’র গাওয়া গানগুলি প্রাণবন্ত। মন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের গানগুলিতে সুর ছুট থেকে শুরু করে তারসপ্তকে অস্বস্তি-দুর্বলতা প্রকট। একটি বিষয়ে অনিতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। গানের কোনও শব্দে আবেগ তাড়িত হয়ে অকারণে বেশি ঝোঁক দিয়ে ফেলেন তিনি। তবে নিবেদনে খুবই যত্নশীল ছিলেন।
বারীন মজুমদার
সময়ের হাতছানি
নচিকেতা, শুভমিতার গানে
অন্তবিহীন পথ চলাই জীবন-শিল্পী নচিকেতা। তাঁর চব্বিশ বছরের সঙ্গীত জীবনের পূর্ণতা আনলেন এই অনুষ্ঠানে ‘আপনি আমি এবং এক ঝাঁক নচিকেতা’। আয়োজক স্পর্শ মিউজিক ও থিজম। অনুষ্ঠানে গানের সঙ্গী হয়েছিলেন শুভমিতা, রূপক দে, সুদেষ্ণা গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। শুরুতেই পার্থপ্রতিম সাহা শিল্পীকে বরণ করে নিলেন ফেলে আসা চব্বিশ বছরের গানের সাফল্যকে শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরে। একের পর এক গানে নচিকেতা তুলে ধরলেন মানুষের মনের কথা, সুখ-দুঃখের বা বঞ্চনা ও প্রাপ্তির জীবনমুখী দিনলিপি। এক দশক আগেও বেশ আলোড়ন তুলেছিল গানগুলি। উল্লেখযোগ্য গানগুলি হল ‘কে যাবি আয়’, ‘কৃষ্ণ তোমার সঙ্গে যাব’, ‘অ্যামবিশন’, ‘নীলাঞ্জনা’, ‘যখন সময় থমকে দাঁড়ায়’ প্রভৃতি। শুভমিতার গানগুলিও যেন সেই ফেলে আসা সময়ের হাতছানি। মন জয় করার হাতছানি। ‘সারাদিন ভেবে তোমার কথা’ ও ‘সন্ধ্যা নেমে নিয়ে গেল’। সুদেষ্ণা গঙ্গোপাধ্যায় শোনালেন ‘যদি হঠাৎ আবার’। ভোলা ভট্টাচার্যের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানের মঞ্চ পরিকল্পনায় বেশ নতুনত্ব ছিল।
শি. ব
চিরসখা হে
সংকল্প নৃত্যায়ন মঞ্চস্থ করল ওড়িশি নৃত্যানুষ্ঠান। পরিচালনায় সুবিকাশ মুখোপাধ্যায়। শুরুতেই সংস্থার সদস্যরা পরিবেশন করল শান্তি মন্ত্র, মেঘ পল্লবী। দ্বিতীয়ার্ধে ‘চিরসখা হে’ সুবিকাশের একটি নতুন প্রযোজনা। সুবিকাশের সুচারু নৃত্যাবিন্যাস, মুখজ অভিনয় ও সুমনা ভাদুড়ি ও বিম্বাবতী দেবীর লেখনির নিখুঁত বুনোটে প্রয়োজনাটি রসোত্তীর্ণ হয়। কৃষ্ণের ভূমিকায় সম্রাট ও পদ্মাবতীর ভূমিকায় রেশমী প্রশংসার দাবি রাখে। সহ-শিল্পীদের নৃত্যেও দীর্ঘ অনুশীলনের ছাপ বিদ্যমান। সুমন সরকারের আবহসঙ্গীত ও উত্তীয় জানার আলোকসজ্জা অনুষ্ঠানটিকে আরও নান্দনিক করে তোলে।
চৈতি ঘোষ
শিবস্তুতি
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডান্স গ্রুপ ফেডারেশনের উদ্যোগে জ্ঞানমঞ্চে আয়োজিত হল ‘স্টারস অব টুমরো’। অর্কদেব ভট্টাচার্যর পরিচালনায় ভরতনাট্যম শিল্পী মধুরিমা সেন ও সৌরভ দত্তর ‘শিবস্তুতি’-র মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। অংশগ্রহণ করেছিল অনন্যা দত্ত ও ভায়োলিনা ঠাকুরিয়া। জয়দেবের গীতগোবিন্দ আধারিত অষ্টাপদী নৃত্যপদে মধুরিমা ও কীর্তনম ‘শঙ্করা শ্রী গিরি’ নৃত্যাংশে সৌরভের একক উপস্থাপনা বেশ সম্ভাবনাময়। খগেন্দ্রনাথ বর্মনের সুচারু নৃত্যনির্মাণ ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। ভরতনাট্যম নৃত্যাঙ্গিকের নৃত্যপদ তিল্লানার মাধ্যমে অনুষ্ঠানে পরিসমাপ্তি।
চৈতি ঘোষ
মনের মানুষ
রবীন্দ্রসদনে সুরঙ্গমা কলাকেন্দ্র আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল সম্মেলক গান ‘অন্ধকারের উৎস থেকে’। সুন্দর পরিবেশনা। এ দিন অনুষ্ঠানে গান শুনিয়ে মন ভরিয়ে দিলেন মনোময় ভট্টাচার্য। যে কোনও গানেই মনোময় তাঁর শৈল্পিক নিজস্বতায় এক অন্য মাত্রা আনেন। তিনি দরাজ কণ্ঠে নজরুলগীতি গাইলেন ‘মনে পড়ে আজ’। পরে তাঁর প্রিয় আধুনিক গান ‘মনের মানুষ চিনলি না রে’। অনুষ্ঠানে বড় প্রাপ্তি গৌতম মিত্রের (বাঁ দিকে) গাওয়া ‘এই পথ চলাতেই আনন্দ’। সুচিন সিংহ শোনালেন ‘নাই রস নাই’। অনুশীলা বসুর ‘আমার ভিতর ও বাহিরে’, মৌসুমি কর্মকারের ‘অন্ধজনে দেহ আলো’ মন্দ নয়। এ ছাড়াও এ দিন প্রায় এগারো জন শিল্পী গান ও কবিতা শোনালেন। কারও কারও আরও চর্চার প্রয়োজন।
শেষ জবানবন্দি
বিজন ভট্টাচার্যের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে মানিকতলা দলছুট প্রযোজিত নাটক জবানবন্দি। গ্রামের এক অবস্থাপন্ন কৃষক পরিবার সময়ের প্রেক্ষিতে নিঃস্ব হয়ে যায়। দু’ মুঠো অন্নের সন্ধানে পরিবারটি কলকাতায় চলে আসে এবং ফুটপাথে আশ্রয় নেয়। দেখা যায় সেখানেও খাদ্যের জন্য হাহাকার পড়ে গেছে। এক রাতে চাষির ছেলের বৌকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় টাকার টোপ দিয়ে। পরিবারের প্রধান পরাণ মারা যান। বলে যান ‘তোমরা আবার গ্রামে ফিরে যাও, এখানে কিছু নেই, গ্রামে ফিরে গিয়ে সোনা ফলাও!’ নাটকের বিষয়বস্তু ভাল। কুশীলবদের বিভিন্ন সংলাপে গ্রামবাংলার একটা টান ছিল। চরিত্রগুলির সঙ্গে মানিয়েছে ভাল। নির্দেশনায় বিজয় ভট্টাচার্য।
পিনাকী চৌধুরী
গানে-গানে
কলাকুঞ্জে এক সন্ধ্যায় প্রায় ১৬টি রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনালেন লন্ডন প্রবাসী শিল্পী শিখা চৌধুরী। বিভিন্ন পর্যায়ের গান থেকে যে গানগুলি বেছে নিয়েছিলেন তাই শোনালেন শ্রোতাদের। তার মধ্যে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য হল ‘আমি রূপে তোমায় ভোলাবো’, ‘আমার প্রাণের পরে’, ‘এ কী লাবণ্য’ প্রভৃতি। এর আগে ছোটদের নৃত্যনাট্যেও তিনি ৬টি গান গেয়ে প্রশংসা আদায় করে নিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy