ছবি: দেবর্ষি সরকার
একটা সময় ছিল, যখন জন্মদিন বলতে ছিল বেলুন-রিবন দিয়ে ঘর সাজানো। বন্ধু ও আত্মীয়দের নিয়ে কেক কাটা ও জমিয়ে খাওয়াদাওয়া। এখন দিন বদলেছে। ইদানীং জন্মদিনের পার্টি এইটুকুতেই শেষ হয়ে যায় না। তার পরতে পরতে থাকে চমক। প্রবেশপথের সাজসজ্জা থেকে রিটার্ন গিফট, কোথায় সারপ্রাইজ় লুকিয়ে রাখা যায়, খেলার হরেক উপকরণ, ডিজে... অবশ্য তারও আছে নানা নিয়মকানুন।
কেমন হবে বাচ্চাদের পার্টি
বাচ্চার বয়সের উপরেই নির্ভর করে পার্টির ধরন! জন্মদিন ঘিরে আপনার পরিকল্পনা আছেই, কিন্তু সন্তানের বয়স চার বছরের বেশি হলে তার মতামতকেও গুরুত্ব দিতে হবে। তার কাছে জানতে চান, অনুষ্ঠানে সে কী চায়। এ ভাবেই পুরো পার্টির সাজগোজ এবং আয়োজন বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে করুন। ঠিক করে নিন পার্টি কী ধরনের হবে ও নিমন্ত্রিতের সংখ্যা। সন্তানদের সঙ্গে বাবা-মাকেও বলবেন কি না, ঠিক করুন। অধিকাংশ পার্টিই এখন থিম নির্ভর। কার্ড বিতরণ থেকে রিটার্ন গিফট থিম অনুযায়ী হতে পারে। সন্তানের পছন্দের কার্টুন বা হবি থেকেই বেছে নিন থিম। কিন্তু আপনার বাজেটে না পোষালে থিম বাদ দিতে পারেন। তখন বেলুন আর রংবেরঙের রিবন দিয়েই সাজাতে পারেন। পার্টির মজা বাড়াতে পারে ডিজে।
নিমন্ত্রণ ও অতিথিকে স্বাগত
পার্টি কিন্তু আপনার সন্তানকে আতিথেয়তা শেখানোর আদর্শ জায়গা। সে শিখবে, কী ভাবে অতিথি আমন্ত্রণ করতে হয়। বাচ্চাই উপহার গ্রহণ করে পার্টির জায়গা দেখিয়ে দেবে। অতিথির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবে। এতে হয়তো বাচ্চাকে বারবার খেলা থেকে উঠে আসতে হবে, কিন্তু অনুষ্ঠানটি যেহেতু তাকে ঘিরেই ও অতিথিরা তার জন্যই এসেছে, তাই তাঁদের স্বাগত জানানোটা খুদেরই কর্তব্য। এতে আপনার সন্তান সকলের সঙ্গে মেলামেশার তাগিদও অনুভব করবে। কিন্তু বাচ্চা যদি পার্টির মধ্যেই উপহারের মোড়ক খুলতে চায়, তাকে বিরত করবেন।
সময় ও মনোরঞ্জন
পার্টি অযথা লম্বা করবেন না। শুধু মাত্র বাচ্চাদের নিয়েই পার্টি হলে দু’ঘণ্টার মধ্যে রাখুন। সন্তানদের সঙ্গে অভিভাবকরাও নিমন্ত্রিত হলে আরও এক বা দেড় ঘণ্টা বাড়িয়ে নিন। নিমন্ত্রণ করার সময়ে কার্ড বা মেসেজের মাধ্যমেও জানাতে পারেন। সময় নির্দিষ্ট করা থাকলে অতিথিরা যেমন আনন্দ করতে পারবে, তেমনই হোস্টেরও পরিশ্রম হবে কম। পার্টিতে গেম শো, কার্টুন চরিত্র, জোকার, অস্থায়ী ট্যাটু বানানোর ব্যবস্থা রাখতে পারেন। ম্যাজিক শো এখন অধিকাংশ পার্টিতেই রাখা হয়। পার্টি শুরু হলেই বাচ্চাদের আলাদা জায়গায় ডেকে নিন। খেয়াল রাখবেন, সেখানে যেন সব বাচ্চা ঠিক মতো দাঁড়াতে বা বসতে পারে। সম্ভব হলে এই কাজটি কোনও আত্মীয় বা অন্য বাচ্চার বাবা-মায়ের হাতেও ছেড়ে দিতে পারেন। পার্টিতে নাচ, গান, কৌতুক অভিনয়ের আয়োজন করলে, সেখানে পরিচিত জনদের গুরুত্ব দিন। আপনার খরচ কমবে।
বাচ্চা ও অভিভাবক
মনে রাখবেন, প্রতিটি বাচ্চার অভিভাবকের সঙ্গে আপনার পরিচয় না-ও থাকতে পারে বা সকলের সব কিছু পছন্দ না-ও হতে পারে। তাই বাচ্চাদের সঙ্গে বড়দের বিষয়টাও খেয়াল রাখতে হবে। বড়দের জন্য আলাদা জায়গা রাখুন, যাতে তাঁরা নিজেদের মতো গল্প করতে পারেন।
ফুড কাউন্টার
শুরুতেই খেয়াল রাখবেন, খেলা ও খাওয়ার জায়গা যেন আলাদা থাকে। ছুটোছুটি করতে গিয়ে যেন তারা খাবারের জায়গায় এসে না পড়ে। আবার মাত্রাতিরিক্ত খাবারের আয়োজন করবেন না। খাবারের চেয়ে বাচ্চার আগ্রহ কিন্তু খেলার দিকেই থাকে। ভারী খাবারের পরিবর্তে স্ন্যাক্স জাতীয় খাবার বেছে নিতে পারেন। কয়েক রকম নুডলস, আইসক্রিম রাখতে পারেন। কোল্ড ডিঙ্কের বদলে মজাদার ফ্রুট ককটেল বা মিল্কশেকের ব্যবস্থা করতে পারেন। গ্লাস থাকবে ছোট বড় মেশানো। ডেজ়ার্টে দিতে পারেন জন্মদিনের কেক। ছোট ছোট ফুড কাউন্টারে থাক পপকর্ন, কাপকেক, পাস্তা... হরেক কাউন্টার দেখলে তারা আনন্দে আটখানা হয়ে উঠবে। বাচ্চাদের উচ্চতা অনুযায়ী টেবিল-চেয়ারের বন্দোবস্ত করতে পারেন। অতিরিক্ত টিসু পেপার অবশ্যই রাখবেন। বাচ্চাদের গায়ে অসাবধানতার কারণে খাবার পড়ে যেতে পারে।
পার্টি মানেই ডিনার বা লাঞ্চের ধারণা বদলাচ্ছে। বাচ্চার বন্ধুরা নিমন্ত্রিত হলে বিকেলে শুরু করে সন্ধের মধ্যেই পার্টি শেষ করুন। পার্টির পুরো মজাটাই তাতে পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে বাদ থাকবে ডিনার। অনেক রকম স্ন্যাক্স ও পানীয়ের মধ্যেই মেনু থাকবে সীমাবদ্ধ। তাতে খরচেও রাশ টানা যাবে। অনেক হোটেল, রিসর্ট, কফি শপ বা রেস্তরাঁ জন্মদিনের পার্টি আয়োজন করে থাকে। তেমন কোনও জায়গাও বেছে নিতে পারেন নিজের বাজেট অনুযায়ী। তবে জন্মদিনের অনুষ্ঠান যেখানেই করুন না কেন, পার্টির পরিবেশ যেন শিশুর জন্য আরামদায়ক ও নিরাপদ হয়, সে দিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy