Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

এ কোন নিবেদিতা

দীনেশচন্দ্র সেন ইংরেজিতে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লিখছেন তখন । নিবেদিতার বোসপাড়া লেনের বাড়ির কাছেই থাকতেন তিনি । মস্ত পাণ্ডুলিপি নিয়ে হাজির হলেন নিবেদিতার কাছে। দীনেশবাবুর ইংরেজি শুধরে দেন তিনি। বই নিয়ে নানা পরামর্শ দেন।

 নিজের পড়ার টেবিলে

নিজের পড়ার টেবিলে

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

আপনার লজ্জা করে না?

দীনেশচন্দ্র সেন ইংরেজিতে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লিখছেন তখন । নিবেদিতার বোসপাড়া লেনের বাড়ির কাছেই থাকতেন তিনি । মস্ত পাণ্ডুলিপি নিয়ে হাজির হলেন নিবেদিতার কাছে। দীনেশবাবুর ইংরেজি শুধরে দেন তিনি। বই নিয়ে নানা পরামর্শ দেন। তবে একটাই শর্ত বইতে নিবেদিতার নাম করা যাবে না। কী আর করেন দীনেশ্চন্দ্র ! মেনে নিলেন। নিবেদিতা মাঝে মাঝেই দীনেশচন্দ্রকে বকুনি দেন । তাঁর মতে দীনেশচন্দ্র ভালমানুষ, কিন্তু ভিতু। একদিন তাঁরা বাগবাজারের রাস্তায়। একটা ষাঁড় আসছে। ষাঁড় দেখে দীনেশবাবু হাওয়া। নিজের প্রাণ বাঁচাতে কোথায় যে পালালেন! ষাঁড় যে নিবেদিতার ক্ষতি করতে পারে সে খেয়ালই নেই। পরে দীনেশবাবু ফিরতে নিবেদিতা একহাত নিলেন । ‘‘আপনার লজ্জা করে না’’—কী বকুনি! দীনেশবাবুকে রাজনীতি নিয়ে একটা কথাও বলতেন না । রাজনীতি ভিতুদের জন্য নয় ।

ইংরেজদের নিয়ে কড়া লেখা

রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের ইংরেজি কাগজ ‘মডার্ন রিভিউ’ প্রকাশিত হল। ইংরেজি কাগজে ভাল লেখা পাওয়া শক্ত। রামানন্দবাবু জগদীশচন্দ্রের কাছে লেখা চেয়ে আবেদন করলেন। জগদীশচন্দ্র বললেন, নিবেদিতার কথা। নিবেদিতার সঙ্গে রামানন্দের সাক্ষাৎ পরিচয় ছিল না। তবে নিবেদিতা বললেন লিখবেন। মডার্ন রিভিউ-তে নানা রকম লেখা লিখতেন নিবেদিতা। মাঝে মাঝে টীকা-টিপ্পনী দিতেন। সেই সব টীকা-টিপ্পনীতে ইংরেজ সরকার সম্বন্ধে অনেক সময় কড়া কথা থাকত। রামানন্দ সেই সব কথা কেটে দিতেন। ইংরেজ সরকার তখন কাউকে সমালোচনা করতে দেখলেই তাকে দেশদ্রোহী বলে চিহ্নিত করছে। নিবেদিতা নির্ভীক, সম্পাদক রামানন্দবাবু তত বড় বিপ্লবী নন।

ঘর সাজাতে আসবাব নয়

সিত্তি ঊন্‌ নিসা সুদূর পারস্য থেকে এসেছিলেন ভারতে। শাহজাহানের মেয়েদের পড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সিত্তি খুবই গুণী। স্বাভাবিক সৌন্দর্যবোধের তিনি অধিকারিণী। বাদশাহের ঘর সাজান তিনি, অলংকার নির্বাচন করেন। এই সিত্তিকে নিয়ে যদুনাথ মডার্ন রিভিউতে প্রবন্ধ লিখেছিলেন, ‘দ্য কম্প্যানিয়ন অফ অ্যান এম্প্রেস’। নিবন্ধটি পড়ে নিবেদিতা খুব আনন্দ পেয়েছিলেন। মেয়েদের এই সহজাত সৌন্দর্যবোধ তাঁর মতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকারকে খুশি হয়ে চিঠি লিখলেন নিবেদিতা। —বাড়ি-ঘর সাজাতে দামি আসবাবপত্র কেন লাগবে! মেয়েদের হাতের আলপনা, আসন বোনা, কাঁথার নকশা এ সবেও তো সেজে ওঠে ঘর গেরস্তালি!

রংটাই যা সাদা

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশন হল। লর্ড কার্জন এসেছিলেন উপাধি বিতরণ সভায়। ভারতবাসীদের তিনি কৌশলে মিথ্যেবাদী বললেন। পরদিন খবরের কাগজে একটি খবর বেরোল। কোরিয়ায় রাজদূত হয়ে গিয়েছিলেন লর্ড কার্জন। তখন নিজের প্রকৃত বয়স গোপন করেছিলেন তিনি। ভারতবাসীরা নন, কার্জনই মিথ্যেবাদী। নিবেদিতাই লিখেছিলেন সে লেখা। সাধে বিনয়কুমার সরকার বলতেন, মেয়েটা একটা হৃদয়ওয়ালা সত্যিকার মানুষ। ঘটনাচক্রে রংটা তার সাদা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy