সঙ্গীত কলা মন্দির ও আদ্যম থিয়েটারের উদ্যোগে কলকাতায় দেখা গেল মুম্বইয়ের রেজ-এর প্রযোজনা ইংরেজি নাটক, ‘টুয়েলভ অ্যাংরি জুররস’ (রচনা: রেজিনান্ড রস, পরি: নাদির খান)। পঞ্চাশের দশকের এই মার্কিন নাটক মূলত টেলি-নাটক হলেও সিনেমার পর্দায় ও মঞ্চ-প্রযোজনাতেও সফল। নাটকের আবহে ভারত, যদিও জুরির বিচার এ দেশে নেই। কোর্টে সাক্ষ্য-প্রমাণে পিতৃহত্যায় দোষী সাব্যস্ত হয় এক বস্তি-বালক। চূড়ান্ত রায়ের ভার পড়ে বারো জন জুরি সদস্যদের ঐক্যমতের ওপর। অভিযুক্তের অপরাধ সম্পর্কে সকলেই নিশ্চিত কিন্তু একজন প্রশ্ন তোলে সাক্ষ্য-প্রমাণের স্বচ্ছতা নিয়ে। প্রচণ্ড তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। এই বাক-বিতণ্ডাই নাটকীয় অ্যাকশন। তর্ক যতই এগোয় উত্তেজনা ততই বাড়ে। প্রশ্নকারী এক এক করে প্রতিটি সাক্ষ্যপ্রমাণ অকাট্য যুক্তি দিয়ে নাকচ করেন আর এক এক করে বালকের অপরাধের সপক্ষে ভোট পড়ে। তর্কযুদ্ধ চালিয়ে যায় কয়েক জন। এক একজন লড়ে অন্ধ বিশ্বাস, সংস্কার, অহংবোধ এবং শ্রেণি-উন্নাসিকতার তাড়নায়। ক্রমে সকলেই বিবাদীপক্ষকে সমর্থন করে কেবল একজন তর্ক ছেড়ে বলপ্রয়োগে মীমাংসা চায়। এক বলশালী সদস্যের হস্তক্ষেপে নিবৃত্ত হয়ে আত্মগ্লানির বশে পক্ষে ভোট দেয়।
সংলাপ-প্রধান প্রযোজনা হলেও প্রতিটি মুহূর্ত নাটকীয়। একটি আদালত ঘরের এসি থাকলেও অচল-আবদ্ধ পরিবেশে নিরন্তর তর্করত বারো জন কুশীলবের সমাবেশ এই নাটকের আদর্শ মঞ্চদৃশ্য।
এমন পরিবেশেই নাছোড় বাদীপক্ষ যত তর্কে হারে ততই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে আর নাটক ও টেনশন চরম অভিঘাতে পৌঁছয়। যদিও দর্শকদের একঘেয়ে লাগে না কারণ পিছনপটে জানলার মতো বহির্দৃশ্যের ভিডিও ফুটেজ, মিশ্র চরিত্রা ভূমিকা (যদিও মূল নাটক ‘টুয়েলভ অ্যাংরি মেন’), তাদের পোশাক বৈচিত্র আর মঞ্চে উত্তেজনায় অস্থির জুরি দস্যদের ঘন ঘন স্থানবদল। কিন্তু প্রযোজনার আসল সাফল্য অভিনয়ে। সকলের অভিনয়ই ধারালো।
তবে মনে রাখার মতো মুখ্য ভূমিকায় প্রযোজনার প্রাণ রাজিত কপূরের প্রথম বিবাদী, প্রেম চাওলার উন্নাসিক দশ নম্বর জুরি সদস্য আর দেবেন খোটের বদমেজাজি বলপ্রয়োগী তিন নং জুরর।
প্রাধান্য গানেই
সম্প্রতি শরৎসদনে অন্বেষার সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় শুরুতেই নীলার্ঘ্য মুখোপাধ্যায় শোনালেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘প্রাণ চায় চক্ষু না চায়’। এর পর শ্যামল মিত্রের একটি জনপ্রিয় গান শ্রোতাদের শোনালেন সৈকত মিত্র। ‘আমি চেয়ে চেয়ে দেখি সারা দিন’। স্বর্ণযুগের সেই সব গান আজও মনকে নাড়া দেয়। শমীক পাল শোনালেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া অন্য একটি জনপ্রিয় গান ‘শোনো কোনও একদিন’।
এর পরে ছিল কবিতা ও পাঠ। সুপ্রকাশ মুখোপাধ্যায়ের বেশ কয়েকটি কবিতা বেশ ভাল। তার মধ্যে অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় ‘প্রার্থনা’, ‘প্রেম’ কবিতা দুটি।
আবারও গানের আসরে বেশ সুন্দর কয়েকটি গান শোনালেন কয়েক জন শিল্পী। তার মধ্যে তানিয়া দাশের ‘আমি চিনি গো চিনি’, সাহানা বক্সির ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে’।
দীপঙ্কর পালের গাওয়া ‘সারাদিন তোমায় ভেবে’ গানটি শিল্পীর কণ্ঠে অন্য মাত্রা পায়। এ ছাড়াও গাইলেন সুতপা চৌধুরী, বেলা সাধুখাঁ, দীপক ঠাকুরতা, আশিস দাশগুপ্ত প্রমুখ।
আজি নূতন রতনে
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মেলবন্ধনে দ্বিজেন্দ্রগীতি
সম্প্রতি ‘লাবণ্যমঞ্জরী দাস’ স্মারক অনুষ্ঠান আয়োজিত হল ইন্দুমতী সভাগৃহে। আয়োজক বঙ্গীয় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ। ‘দ্বিজেন্দ্রগীতি, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন’ এই বিষয়ে সঙ্গীত সহযোগে আলোচনা করলেন প্রবীণ শিল্পী নীলা মজুমদার। দ্বিজেন্দ্রলাল ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতির সঙ্গে ‘ওয়েস্টার্ন মিউজিক স্টাইল’-এর যে রসায়ন ঘটিয়েছেন, ফলে বাংলা গানে নতুন সুর সৃষ্টি হয়েছে। সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে গান শোনালেন শিল্পী। শুরুতেই শোনালেন ‘মহাসিন্ধুর ওপার থেকে’।
এর পরে ভৈরবীতে একটি বন্দিশ গেয়েই পাশাপাশি ভৈরবীতে দ্বিজেন্দ্রলাল রচিত ‘আজি নূতন রতনে ভূষণে যতনে’ গানটি শোনালেন তিনি। অপূর্ব গায়কি।
পরে শোনালেন প্রথমটি ভীষ্ম নাটকের ‘আমরা মলয় বাতাসে’ এবং পরেরটি ‘সাজাহান’ নাটকের ‘আজি এসেছি বঁধূ হে’। দ্বিজেন্দ্রলালের সঙ্গীত-মননের একটি বৈশিষ্ট্য হল নাটকের সিচুয়েশন অনুযায়ী প্রাচ্য বা পাশ্চাত্য সুরক্ষেপণ। যেখানে যুদ্ধবিগ্রহ, উত্তেজনা অথবা নৃত্যগীত — সেখানে ভারতীয় রাগসঙ্গীত থেকে রসগ্রহণ করেছেন তিনি। শিল্পী গাইলেন ‘সাজাহান’ নাটকের একটি রোম্যান্টিক মুহূর্তের রাগভিত্তিক গান ‘সারা সকালটি বসে বসে’।
দ্বিজেন্দ্রলালের একটি হাসির গানও ‘আমরা বিলেত ফের্তা ক’ভাই’ শোনাবার পর শ্রোতাদের অনুরোধে শিল্পী শোনালেন ‘নীলগগন চন্দ্রকিরণ’ এবং দরবারী কানাড়ায় ‘তোমারেই ভালবেসেছি’। সব শেষে সমবেত কণ্ঠে ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ গানটির মধ্য দিয়ে শেষ হল অনুষ্ঠান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy