Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
খেলাধুলা...

বিরাশির এশিয়াডে বিরিয়ানি না হোক পোলাও রাঁধাই যেত

মহাকাব্যিক পঁচিশ বছর! কখনও লাল-হলুদ, কখনও সবুজ-মেরুন। কখনও নীল জার্সির ভারত। পুরনো সেই সাম্রাজ্য বিস্তার আর তার ভাঙাগড়ার রুদ্ধশ্বাস কাহিনি নিয়ে দীর্ঘ এত বছর বাদে অকপট স্বয়ং প্রদীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ ষষ্ঠ কিস্তি। ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে তাঁর স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের খতিয়ানে তিনি নিজেই।ডাঁটাচচ্চড়ির মশলা দিয়ে বিরিয়ানি রান্না হয় না! কথাটা বিরাশির দিল্লি এশিয়াডে ভারতীয় দল নিয়ে আমার সমস্ত স্বপ্ন ধূলিসাৎ হওয়ার পর বলার জন্য কম গালাগাল খাইনি এ দেশের ফুটবলমহলের কাছে! বিশেষ করে তার পর থেকেই তো আমাকে শুনতে হয়েছে— পিকে-র কোচিং কেরিয়ায়েই ভারতীয় দলের খেলায় হীনমন্যতার আগমন! কেউ কেউ এমনও অভিযোগ তুলেছেন— যে হেতু আমার কৈশোর দারিদ্রের মধ্যে কেটেছিল, তাই ভবিষ্যতে তার ছাপ নিজের কোচিং জীবনে পড়েছিল!

অনুলিখন: সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়।
শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

ডাঁটাচচ্চড়ির মশলা দিয়ে বিরিয়ানি রান্না হয় না!

কথাটা বিরাশির দিল্লি এশিয়াডে ভারতীয় দল নিয়ে আমার সমস্ত স্বপ্ন ধূলিসাৎ হওয়ার পর বলার জন্য কম গালাগাল খাইনি এ দেশের ফুটবলমহলের কাছে!

বিশেষ করে তার পর থেকেই তো আমাকে শুনতে হয়েছে— পিকে-র কোচিং কেরিয়ায়েই ভারতীয় দলের খেলায় হীনমন্যতার আগমন!

কেউ কেউ এমনও অভিযোগ তুলেছেন— যে হেতু আমার কৈশোর দারিদ্রের মধ্যে কেটেছিল, তাই ভবিষ্যতে তার ছাপ নিজের কোচিং জীবনে পড়েছিল!

ক্লাব কোচিংয়ে কিছুটা সাহসটাহস নাকি দেখালেও আম্তর্জাতিক স্তরে জাতীয় দলকে অ্যাটাকিং খেলানোর ব্যাপারে তেমন ঝুঁকি নিইনি... আগে বাঁচো রণনীতি নাকি বেশি ছিল আমার ইন্ডিয়া টিমের কোচিংয়ে।


ভারতীয় দলের সঙ্গে

আমার বিরুদ্ধে এই দু’টো অভিযোগই কোচিং ছেড়ে দেওয়ার এত বছর পরে পরিষ্কার অস্বীকার করছি আমি।

একই সঙ্গে স্বীকার করে নিচ্ছি, যে পূর্ণ স্বাধীনতা আর কম্যান্ড নিয়ে আমি ক্লাব লেভেলে বছরের পর বছর ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানে কোচিং করেছি, তার ষাট ভাগও ভারতীয় দলকে কোচিং করানোর সময় পাইনি। পেলে, বাজি ধরে বলছি, যা রেজাল্ট দিয়েছি, তার দ্বিগুণ দিতামই।

তবে চচ্চড়ির মশলা দিয়ে বিরিয়ানি হয় না— কথাটা বলেছিলাম দু’শো ভাগ নিজের ওপর রাগে। তীব্র অনুশোচনায়। বহু দিনের লালিত একটা বিরাট স্বপ্ন আচমকা ভেঙে খানখান হয়ে যাওয়ার গভীর যন্ত্রণায়!

বিশ্বাস করুন, আমার সেই ভারতীয় টিমের ছেলেদের দক্ষতাকে ছোট করার মোটেই কোনও রকম ইচ্ছে ছিল না ওই মন্তব্য করার পেছনে।

বাষট্টিতে ফুটবলার হিসেবে এশিয়াডে সোনা জিতেছিলাম। বিরাশির এশিয়াডের দায়িত্ব যে দিন দিল্লি পেয়েছিল আর আমাকে ইন্ডিয়া টিমের চিফ কোচ করেছিলেন অশোক ঘোষ-প্রিয়বাবুরা, সে দিন থেকে একটাই স্বপ্ন বুকে আঁকড়ে নিজের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম— ফুটবলারের মতোই কোচ হিসেবেও দেশকে এশিয়াডে সোনার পদক এনে দেবই!

তাই জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে যে রাতে সৌদি আরবের কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে শেষ মুহূর্তের একমাত্র গোলে হেরে গেলাম, তার পরে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারিনি। ডাঁটাচচ্চড়ি আর বিরিয়ানির মশলা-র উপমাটা টেনে বসেছিলাম সরাসরি মিডিয়ার সামনেই।

আজ বত্রিশ বছর পর স্বীকার করে নিচ্ছি, বিরিয়ানি না হোক, যে টিম বিরাশির এশিয়াডে আমার হাতে ছিল, তা দিয়ে অন্তত পোলাও রান্না করাই যেত। কিন্তু সেটাও সম্ভব হয়নি। অনেকগুলো কারণ, দুর্ভাগ্য, বিতর্ক আর সন্দেহজনক ব্যাপারের জন্য!

পরিষ্কার বলছি, বেশ কয়েকটা ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। প্রথমত, সল্টলেক স্টেডিয়ামে দীর্ঘ দু’মাসের কোচিং ক্যাম্প বসানোটা উচিত হয়নি। কোচিং ক্যাম্প তো নয়, যেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্প!

রোজ রোজ মাঠে প্র্যাকটিস আর সেখান থেকে সটান করুণাময়ী-তে আধা তৈরি যে বাড়িগুলোতে জাতীয় ফুটবলারদের রাখার বন্দোবস্ত করেছিল ফেডারেশন, তাতে গিয়ে ঢুকে পড়া— এই ছিল ছেলেদের একমাত্র কাজ।

কোনও রকমের আমোদপ্রমোদের সুযোগ নেই। ঘরে টিভি পর্যন্ত নেই। ক্লাব খেলা বন্ধ। শুধু প্র্যাকটিস আর প্র্যাকটিস। অথচ তার জন্য এক টাকাও ইনসেনটিভ নেই।

একটা সময় এমন অবস্থা হল যে, বাইরের লোকের মুখ দেখতে পর্যন্ত পেত না প্রসূন-প্রশান্ত-ভাস্কর-পারমিন্দর-পারমাররা।

বেশ বুঝতে পারছিলাম, শুধু আমার দেশাত্ববোধক বক্তৃতা শুনিয়ে আধুনিক প্রজন্মের ছেলেদের উদ্বুদ্ধ করা যাচ্ছে না। তার জন্য ওদের যুগের উপযোগী আমোদের উপকরণ দরকার। কিন্তু সেটা আর হল কোথায়!

শেষ পর্যন্ত ফুটবলারদের জাতীয় ক্যাম্প ছেড়ে চলে গিয়ে সেই বিদ্রোহ! যার জন্য প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর কাছে পর্যন্ত আমাকে জবাবদিহি করতে হয়েছিল। “মিস্টার ব্যানার্জি, আপনার প্লেয়াররা কিন্তু এই কাজটা ঠিক করেনি। এটা কিন্তু অনেকটা দেশদ্রোহিতা!” দিল্লিতে আমাকে বলেছিলেন ম্যাডাম গাঁধী।

মাথা নিচু করে শোনা ছাড়া আমার অন্য উপায় ছিল না সে দিন। আসলে সেই সত্তরে ইন্ডিয়া টিমের কোচিং যখন থেকে শুরু করেছি, বারবার দেখেছি, কোচিং স্টাফে আরও অন্য লোক থাকলেও গালাগাল খাওয়ার লোক সব সময় আমিই। সে প্রধানমন্ত্রীর বকুনি হোক কিংবা সমালোচকদের নিন্দেমন্দ— সবারই টার্গেট পিকে!

সে দিন জাতীয় ক্যাম্প ছেড়ে চলে গিয়েছিল আমার ভাই প্রসূনও। না গেলে ও-ই দিল্লি এশিয়াডে ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন হত। ভাস্করও ভাল ক্যাপ্টেন, কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু সহোদর দুই ভাইয়ের এক জন কোচ আর অন্য জন ক্যাপ্টেন থাকলে সেই দলে একটা আলাদা আত্মিক যোগাযোগ সৃষ্টি হয়। সেই বাড়তি প্লাস বিরাশির এশিয়াডে আমি খুইয়ে বসেছিলাম।

আসলে প্রসূন নিয়ে উইং কম্যান্ডার গাঙ্গুলি কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকের কান ভাঙিয়ে ছিলেন। মানুষটা প্রবাসী বাঙালি হয়েও বরাবরের বাঙালি বিদ্বেষী। বাহাত্তরে ইস্টবেঙ্গল যখন আমার কোচিংয়ে ত্রিমুকুট জিতেছিল, ডুরান্ডে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে আমার সেরা কোচের মেডেল পাওয়া একদম পাকা। তখনও দিল্লিবাসী গাঙ্গুলির অঙ্গুলিহেলনে শেষমেশ আমার কপালে মেডেল জোটেনি।

আর দিল্লি এশিয়াডের সময় তো উইং কমান্ডার গাঙ্গুলি এআইএফএফ নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান! প্রচণ্ড চেষ্টা করেছিলেন, বাংলার বাইরের কাউকে ক্যাপ্টেন করার। আমি শেষমেশ থাকতে না পেরে প্রিয়বাবুকে বলেছিলাম, “এটা কী হচ্ছে! ভারতীয় ফুটবলে বাংলার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে যেখানে কোনও সন্দেহ নেই, তখন কেন সেরা রাজ্যের কেউ দেশকে নেতৃত্ব দেবে না?” তার জেরেই প্রসূন না হোক, অন্তত বাংলারই একজন ফুটবলার দিল্লি এশিয়াডে দেশের ক্যাপ্টেন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল!

সে বার টিমে কোনও বিশেষজ্ঞ ফিজিও পর্যন্ত দেয়নি ফেডারেশন। একজন কল্যাণ মুখোপাধ্যায় কিংবা দুর্গা ভট্টাচার্যের স্ট্যান্ডার্ডের ফিজিও টিমে পেলে আমার টিম বিরাশি এশিয়াডে অন্য চেহারায় থাকত। কিন্তু সে রকম উঁচুদরের ফিজিও রাখার টাকা কে দেবে?

ফেডারেশন হাত তুলে দিয়েছিল। আর আমি টুর্নামেন্ট শুরুর ঠিক দু’দিন মাত্র আগে প্রথম দলের চার-চার জন প্লেয়ারকে চোটের কারণে হারিয়ে বসলাম!

কী কী সব ফুটবলার তৈরি করেছিলাম বিরাশির এশিয়াডের জন্য! সার্ভিসেসের একটা ছ’ফুটের সেন্টার ফরোয়ার্ড সি বি থাপা তখন রোজ প্র্যাকটিস ম্যাচে দুর্ধর্ষ গোল করছে। বল ধরা, বল ছাড়া, শ্যুটিং, উইথ দ্য বল স্পিড, স্ট্রাইড দেখলেই মনে হবে, হ্যাঁ, একটা আন্তর্জাতিক মানের স্ট্রাইকারের খেলা দেখছি! সেই সি বি থাপা গোড়ালিতে চোট পেয়ে বসল এশিয়াড শুরুর আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে!

তার পর জেভিয়ার পায়াস। ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের সেরা টার্নার। পাঁচ গজ ব্যাসার্ধের মধ্যে বল সমেত টার্নিং নিতে পারত। সে কুঁচকিতে লাগিয়ে বসল। সঙ্গে প্রবল জ্বর।

ডিফেন্স থেকে খসে পড়ল শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় দেশের দ্রুততম সাইড ব্যাক। কী প্রচণ্ড গতিতে ওভারল্যাপ করত, আবার বিপক্ষের কাউন্টার অ্যাটাকের সময় চোখের নিমেষে নেমে আসতে পারত! শ্যামলের হাঁটুতে ইনজুরি হল।

সব শেষে হরজিন্দর সিংহও হাঁটুতে চোট পেয়ে বসল। এখনও ভাবলে অবিশ্বাস্য লাগে, সময়-সময় কিছুটা সন্দেহও জাগে যে, এক দিনে আমার চার-চারটে অপরিহার্য ফুটবলার দিল্লি এশিয়াডের ঠিক আগে কী ভাবে চোট পেয়েছিল! অত বড় ধাক্কাটাও হয়তো সামলে নেওয়া যেত, যদি টিমে একটা বড়মাপের ফিজিও থাকত। কিন্তু হায়! তা-ও ছিল না আমার।

তা সত্ত্বেও টুর্নামেন্টটা দারুণ শুরু করেছিলাম। বাংলাদেশকে ৩-০, মালয়েশিয়াকেও ৩-০ হারালাম। চিনের সঙ্গে ২-২ ড্র। তার পর সেই সৌদি ম্যাচ! ম্যাচের শেষ দশ মিনিটে গোল খেলাম। যার মিনিট পাঁচেক আগে থেকেই কম্পটন দত্ত আর সুদীপ চট্টোপাধ্যায় মাঠের ভেতরে চেঁচিয়ে চলেছে, “আর পারছি না... আর পারছি না...।”

কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্টের প্রতি আমার পরিষ্কার নির্দেশ ছিল, ম্যাচে প্লেয়ার বদল একমাত্র আমিই করব। কোচিং স্টাফের অন্যরা আমাকে পরামর্শ দিতেই পারেন। তাঁদের নিজেদের ইচ্ছেও জানাতে পারেন। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব আমি। কিন্তু সে দিন টিমের অন্য তিন কোচ— ডেটমার ক্র্যামার, মহম্মদ হাকিম আর অরুণ ঘোষের অনুমতি নিয়ে সুদীপ আর কম্পটন সেকেন্ড হাফের শেষের দিকে বসে গিয়েছিল।

পরে অরুণ, ক্র্যামাররা আমার কাছে ওঁদের কৃতকর্মের জন্য দুঃখপ্রকাশও করেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গিয়েছে। আমার, ভারতীয় দলের, ভারতীয় ফুটবলের!

সেই রাতে আমি সারাক্ষণ হোটেলের ঘরে কেঁদেছিলাম। ক্র্যামার আমার রুমমেট ছিলেন। উনি আমার কোচিং-গুরুও বটে। ’৬৭-৬৮-তে প্রথমে মুম্বইয়ে এক মাস, তার পর টোকিওতে সাড়ে তিন মাস ফিফার কোচিং কমিটির চেয়ারম্যান ভদ্রলোকের কাছেই আমি কোচিং কোর্স করে সার্টিফিকেট পেয়েছিলাম।

ক্র্যামার দিল্লিতে আমার সেই স্বপ্নভঙ্গের রাতে আমাকে অনেক সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। “প্রদীপ, ইটস ফুটবল... ইটস লাইফ... ইটস হ্যাপেন...” বলেটলে।

কিন্তু জার্মান সাহেব বুঝবেন কী করে যে, আমার সারা জীবনের স্বপ্ন সে দিন এক ধাক্কায় ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল, দেশকে এশিয়া-সেরা করার আমার জীবনের শেষ সুযোগটা।

কারণ সত্যি বলতে কী আমি জানতাম, বিরাশির দিল্লি গেমসে দারুণ ভাল করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি যে প্রাণপাত পরিশ্রম করেছিলাম, যে ভাবে প্রসূন-ভাস্কর-প্রশান্তদের মতো পুরনো নিউক্লিয়াসের পাশে শ্যামল-মনোরঞ্জন-পারমার-সি বি থাপা-সুদীপদের নিয়ে নতুন একটা নিউক্লিয়াস তৈরি করে সোনার পদকের আশায় বুক বেঁধেছিলাম, সেটা আবার ভবিষ্যতে আমার দ্বারা করা আর হয়তো সম্ভব নয়।

আরে, আমাকে কম ঝক্কি পোহাতে হয়েছিল বিরাশির এশিয়াডে! পুরো ঘটনা এখানে লিখলে এত বছর বাদেও ভারতীয় ফুটবলে আগুন জ্বলে উঠবে!

তাই এটুকু বলছি, তখনকার ফেডারেশনের এক অন্যতম শীর্ষকর্তা, যিনি বেঙ্গালুরুবাসী এবং ঘড়ির ব্যবসা করতেন, সেই কর্তাটি আমার টিমে এমনকী হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদের পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলেন!

পরের সংখ্যায় আরও বিস্তারিত বলব।

(চলবে)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE