Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
science news

লকডাউনে নেই দূষণ, পরিষ্কার আকাশে বহু অচেনা তারার খোঁজ পেলেন বাঙালি বিজ্ঞানীরা

৭৫ বছর পর সেই সুখ-স্মৃতিই ফিরিয়ে আনল লকডাউনের দূষণ-হীন পরিষ্কার আকাশ! করোনার ভয়ে গোটা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মানুষও যখন ঘরবন্দি, তখন আকাশে দেখা মিলল এমন এক ঝাঁক তারা, বহু বহু দূরে থাকার ফলে যাদের কথা আমরা এর আগে কখনও জানতেই পারিনি।

যে টেলিস্কোপে হদিশ মিলেছে বহু নতুন তারার। ছবি সৌজন্যে: আইসিএসপি।

যে টেলিস্কোপে হদিশ মিলেছে বহু নতুন তারার। ছবি সৌজন্যে: আইসিএসপি।

সুজয় চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০ ২২:০৮
Share: Save:

৭৫ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার সেই দুঃস্বপ্নের রাতেরও ছিল একটি সুখ-স্মৃতি! রাতের আকাশে এক রোমাঞ্চকর জ্যোতির (‘এয়ার গ্লো’) প্রথম হদিশ পেয়েছিলেন এক বঙ্গসন্তান। অধ্যাপক শিশির কুমার মিত্র।

৭৫ বছর পর সেই সুখ-স্মৃতিই ফিরিয়ে আনল লকডাউনের দূষণ-হীন পরিষ্কার আকাশ! করোনার ভয়ে গোটা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মানুষও যখন ঘরবন্দি, তখন আকাশে দেখা মিলল এমন এক ঝাঁক তারা, বহু বহু দূরে থাকার ফলে যাদের কথা আমরা এর আগে কখনও জানতেই পারিনি। তাদের কোনওটা আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিরই অন্য এক প্রান্তের। কোনওটা বা আরও অনেক অনেক দূরের কোনও গ্যালাক্সির।

খুব দূরে আছে বলে বড় টেলিস্কোপেও এত দিন যাদের চেনা, জানা যায়নি, মেদিনীপুরের সীতাপুরে সেই ‘অচেনা অতিথি’রা ধরা দিল মাত্র ২৪ ইঞ্চি লেন্সের টেলিস্কোপে। কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স (আইসিএসপি)’-এর বাঙালি গবেষকদের চোখে।

৭৫ বছর আগে কী হয়েছিল?

৭৫ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলকাতায় পড়েছিল জাপানি বোমা। কলকাতার আকাশে রাতে অবিরত যুদ্ধবিমানের টহলদারিতে ত্রস্ত কলকাতায় তখন আক্ষরিক অর্থেই ‘ব্ল্যাক আউট’। ভাগ্যিস ব্ল্যাক আউট! তাই বিশ্বে প্রথম এয়ার গ্লো আবিষ্কার‌ করতে পেরেছিলেন এক বঙ্গসন্তান আর তাঁর এক ছাত্র সত্যেন্দ্রনাথ ঘোষ।

আরও পড়ুন- প্রলয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ব্রহ্মাণ্ডে, তৈরি হল ১০০ কোটি সৌরমণ্ডলের আকারের গর্ত!

আরও পড়ুন- পরিচয়ভেদে মস্তিষ্কের নির্দেশে বদলে যায় গলার স্বর, দেখালেন বেহালার ভীষ্মদেব​

দেখেছিলেন দিনভর সূর্যের আলো গায়ে আছড়ে পড়ায় তেতে ওঠা বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন অণুরা সন্ধ্যা নামার পর থেকেই লাল, নীল নানা রঙের আলো বিকিরণ করতে শুরু করে ঠান্ডা হবে বলে। তার ফলে, সন্ধ্যার অনেক পরেও জমাট বাঁধা অন্ধকারে লাল, নীল নানা রঙের আলোয় রঙীন হয়ে থাকে আকাশ। সেই আবিষ্কারের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল আম্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এ।

এ বার কী দেখা গেল লকডাউনের আকাশে?

লকডাউনের আকাশে যাদের হদিশ। অন্য গ্যালাক্সির অচেনা তারা (লাল বৃত্ত), এই গ্যালাক্সির যুগ্ম তারা (সবুজ বৃত্ত)

আইসিএসপি-র অধিকর্তা দেশের বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘আমরা অনেকগুলি তারার হদিশ পেয়েছি। যাদের অনেকগুলির কথাই আগে জানা ছিল না। তাই তাদের নিয়ে এর আগে কোনও গবেষণাও হয়নি। আগে কেউ এই তারাদের হদিশ পেলে তাদের নামকরণ করা হত। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও রেকর্ডেই এদের নামধাম, কতটা দূরে রয়‌েছে তারা, তার কোনও উল্লেখ নেই। আগে যদি ১০০ কোটি আলোকবর্যে দূরে থাকা কোনও তারার খোঁজ পেতাম আমরা, লকডাউনের আকাশ তা হলে আমাদের ২০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে থাকা তারাকেও দৃশ্যমান করে তুলল। করে তুলল অনেক বেশি উজ্জ্বল।’’ গবেষকদলে রয়ে‌ছেন সন্দীপের তিন ছাত্র অসীম সরকার, শ্যাম সরকার ও পবিত্র শীল।

লকডাউনের আগের আকাশ। যে উজ্জ্বলতায় দেখা গিয়েছে এই তারাদের।

‘নতুন অতিথি’দের মধ্যে যারা উজ্জ্বলতর, সন্দীপ জানাচ্ছেন, সেগুলি রয়েছে আমাদের থেকে প্রায় ১৬০০ আলোকবর্ষ দূরে। আর যেগুলির আলো খুবই ক্ষীণ সেগুলি রয়েছে আরও দূরের কোনও গ্যালাক্সিতে।

সন্দীপ এও বলছেন, ‘‘মনে হচ্ছে, যেগুলি থেকে খুব কম আলো আসছে আমাদের দিকে, সেগুলি কোনও তারা না-ও হতে পারে। হত‌ে পারে অন্য কোনও কিছু। তবে সেগুলি কী, তা এখনও আমরা বঝে উঠতে পারিনি। সামনে পূর্ণিমা। তাই আকাশ আলোয় ভরে থাকবে বলে এই অচেনাদের চেনার সুয‌োগ তখন পাব না। তবে পূর্ণিমা থেকে অমাবস্যার মধ্যে তাদের চাক্ষুষ করার সুযোগ আমরা পাব বলেই মনে হচ্ছে। তখনও তো চলবে লকডাউন!’’

ছবি সৌজন্যে: ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স (আইসিএসপি)।

অন্য বিষয়গুলি:

GALAXY STARS ICSP SANDIP CHAKRABARTI SITAPUR
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE