বিজেপির জয় প্রার্থনা করে চলছে যজ্ঞ। ছবি: পিটিআই।
ভাল করে আড়ামোড়াই ভেঙে উঠতে পারেনি শহরটা। আলো ফুটবে ফুটবে করছে। অথচ আলোচনায় ফুট ধরে গিয়েছে, সেই ভোর থেকে। শেষ দফা নির্বাচনের পর দু’দিনের বিশ্রাম। তার পরে ফল। কিন্তু কার ভাগ্যে বিহারের শিকে ছিঁড়বে, তাই নিয়ে জল্পনা শিখর ছুঁয়েছে। এখনও একটা গোটা দিন কী ভাবে এই উত্তেজনা নিয়ে কাটাবে পটনা?
‘‘উত্তেজনার তো কিছু নেই! সরকার তো গঠন হয়েই গিয়েছে।’’ চায়ের গরম গ্লাস ঠোঁটে ছেঁকা দিতে বাধ্য। মানে কি! গণনাই তো শুরু হল না! সরকার গঠন শেষ! যাঁর মুখ থেকে এই বাণী নিঃসৃত হল সেই বিজয় প্রসাদ কিন্তু নির্বিকার! আবারও বললেন, ‘‘এনডিএ তো সরকার গড়েই ফেলেছে।’’ তাঁকে এ বার জিজ্ঞেস করা গেল, ক’টা আসন পেল তা হলে জয়ী জোট? সরাসরি জবাব এল, ‘‘১৫৫ সে জেয়াদা।’’
তবে কি ভোটের বাটখারায় নীতীশের পাল্লা তেমন একটা সুবিধা জনক জায়গায় নেই? রে রে করে উঠলেন রাধেন্দ্র কুমার। রেলের ক্যাটারিং সার্ভিসের কর্মী। সকালের ট্রেনে পটনা ফিরেছেন। বললেন, ‘‘দেখুন, নীতীশ ছাড়া বিহারের মানুষ অন্য কিছু ভাবেইনি। কারণ, গত এক দশকে নীতীশ রাজ্যের যা উন্নতি করেছেন তা বিজেপি ভাবতেই পারে না। মোদী ঝড় নিয়ে বিহার ভাবে না। নীতীশ ১৪০-এর বেশি আসন নিয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী হবেন।’’পটনা স্টেশনের কাছেই একটি চায়ের গুমটি চালান এই বিজয়। বছর পঞ্চাশেক বয়স হবে। তবে একা বিজয় নন। গোটা শহরটাই কিন্তু সেই ভোর থেকে আলোচনায় নেমে পড়েছে। এবং আশ্চর্যের বিষয়, সকলেই নিজস্ব মত নিয়ে ময়দানে নেমে হাজির। কার্যত দু’টি পক্ষ। একে অপরের যুক্তিকে খণ্ডণ করছেন, তর্কও করছেন।
বিজয় কিন্তু এই যুক্তি খারিজ করছেন। ‘‘কেন বিজেপি নয় বলুন তো? এরা তো সারা জীবন জাতপাত নিয়েই ভেবে গেল। মুসলিমের উন্নতির কথা মুখে বলল। কাজের কাজ কী হল?’’ বিজেপি জাতপাতের কথা বলে না? এই তো অমিত শাহ বলে গেলেন, বিহারে বিজেপি হারলে পাকিস্তানে বাজি পুড়বে! বিজয় বলছেন, ‘‘সেটা হয়তো উনি অন্য ভাবে বলেছেন। আসলে ব্রাহ্মণ, দলিত, কুমোর, চামার— এ সব শুনতে আর ভাল লাগে না। তাও হিন্দু শব্দ দিয়ে যদি এক ছাতার তলায় আসা যায়।’’
বিজয়ের এই সান্ত্বনা যদিও এক ধাক্কায় উড়িয়ে দিল কলেজ ছাত্র কিশোর কুমার। ‘‘দেখুন, ক্ষমতায় যে আসবে, সে কী করতে পারে বিহারের মানুষের ভাল মতো ধারণা আছে। কাজেই আমাদের কাছে সব সমান।’’ আমাদের বলতে? জেন ওয়াই? রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্র কিন্তু বলছে, ‘‘না। গোটা বিহার। দেখলেন না এত বড় একটা নির্বাচন, অত উস্কানি, তা সত্ত্বেও কোথাও গণ্ডগোল হল কি? না, কারণ মানুষ বুঝেছে রাজনীতির এই ঘরানাটা শেষ করে দিতে না পারলে আখেরে নিজেদের ক্ষতি।’’
শিবকান্ত যাদব আবার অন্য কথা শোনালেন। সকাল বেলা খবরের কাগজ কিনতে আসেন রোজ ডাকবাংলো রোডে। প্রাতর্ভ্রমণ সেরে তার পর বাড়ি ফেরেন। তাঁর কাছে এ বারের নির্বাচন এতটাই শান্তিতে হয়েছে, যাতে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, ফল কোন দিকে এগোতে পারে। বললেন, ‘‘কড়কদার টক্কর হবে।’’ সরকারি কর্মীটি কিন্তু নীতীশের দিকেই পাল্লা ভারী করছেন শেষে। কারণ? ঘুরে ফিরে উন্নয়ন শব্দটাকেই বেছে নিলেন তিনি। নীতীশের আমলে যা কাজ হয়েছে, তাতে আরও এক বার ভদ্রলোককে সুযোগ দেওয়া উচিত বলে তাঁর মত। তবে লালুকে নেওয়াটা নীতীশের যে বেদম ভুল হয়েছে, সেটা অনেকেই স্বীকার করেছেন।
তবে রাধেন্দ্র একটা প্রশ্ন করেছিলেন। মন্তব্য মেশানো বাক্যটি এ রকম, ‘‘বিহার আর সেই বিহার নেই দাদা। এখন বিহারের সব ঐতিহ্য নাকি বাংলায় চলে যাচ্ছে? এখানে পাঁচ দফা নির্বাচনে কোনও রক্ত ঝরেনি। ২৪৩ আসনের বিধানসভা নির্বাচন শান্তিতে মিটেছে। আর নির্বাচন শেষে আমরা নিজেদের কথাটা জোর দিয়ে বলতে পারছি। তর্কও বিতর্ক যাই থাক, আলোচনা করছি। বাংলায় নাকি ইদানিং আর এমনটা হয় না?’’
কলকাতা থেকে পটনায় বিহার ভোটের ফল বুঝতে যাওয়া এই প্রতিবেদক তত্ক্ষণাত্ কী উত্তর দেবে ভেবে পায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy