উমর খালিদের ঘরে তাঁর ফেরার অপেক্ষায় মা। —নিজস্ব চিত্র
ছেলে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই নিকট আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবদের ফোন আসছে মায়ের কাছে। কান্নাকাটি করছেন কেউ কেউ। দেশদ্রোহের মতো ধারায় অভিযুক্ত ছাত্রনেতার ভবিষ্যৎ নিয়ে চাপা আতঙ্কও প্রকাশ পাচ্ছে তাঁদের কারও কারও গলায়। কিন্তু তিপান্ন বছরের সাবিহা খানুম প্রত্যেকের ফোন ধরে শান্ত, অবিচল ভাবে কথা বলছেন।
জানিয়ে দিতে ভুলছেন না— তিনি ভয় পাচ্ছেন না। রবিবার দিল্লির বাড়ি থেকে ফোনে সাবিহা যেমন বললেন, ‘‘আমি ভয় পাচ্ছি না। জানি, উমর সুবিচার পাবে। দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থার উপরে আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।’’
স্বাভাবিক যে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পড়ুয়া উমর খালিদের মা আর পাঁচ জনের চেয়ে মানসিক ভাবে বেশি শক্ত হবেন। এর আগেও তো ২০১৬ সালে দেশদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছিল উমরের বিরুদ্ধে। প্রাথমিক ভাবে তখন ধাক্কা খেয়েছিল পরিবার। কিন্তু এ বারের এই গ্রেফতারির জন্য তাঁর মা যেন খানিকটা মানসিক ভাবে প্রস্তুতই ছিলেন। সাবিহা বলছেন, ‘‘ও তো কোনও ভুল কাজ করেনি। সংবিধানের অধিকার রক্ষার কথা বলেছে। ওর যে ভিডিয়ো নিয়ে এত কথা হচ্ছে, তার কয়েক সেকেন্ডের ক্লিপিং দেখিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরো বক্তব্যের ভিডিয়োটা শুনলেই বুঝবেন, উমর শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদের কথা বলেছিল। শুধু এই দেশে নয়, গোটা বিশ্বে যখন রাষ্ট্রনেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়, এই ভাবেই তো হয়।’’
আরও পড়ুন: বিজেপি এলে সিবিআই তদন্ত, দাবি দিলীপের
সাবিহা স্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছেন, দিল্লি হিংসার সঙ্গে উমর কোনও ভাবেই জড়িত নন। বললেন, ‘‘একবার এলাকায় চোর ধরা পড়ে। উমরের তখন প্রবল জ্বর। অত শরীর খারাপের মধ্যেও বিছানা ছেড়ে বাইরে যায়। উত্তেজিত জনতার হাত থেকে অভিযুক্তকে উদ্ধার করে, তাকে গণপিটুনির হাত থেকে বাঁচায়। উমর তাঁদের বোঝায়— বিনা বিচারে শাস্তি দেওয়ার অধিকার নেই কারও। বরং তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হোক। এই ছেলে কোনও দিন কোনও অনৈতিক কাজ করেনি। ও আমার ছেলে, আমি জানি— ও কতটা নরম মনের মানুষ।’’
আরও পড়ুন: বিদেশি অনুদানে রাশ টানতে নয়া সংশোধনী
ছেলের সঙ্গে সিএএ-এনআরসি বিরোধী মিটিং-মিছিলে যোগ দিয়েছেন সাবিহাও। ছেলের বক্তৃতা শুনেছেন দর্শকাসনে বসে। তাঁর পর্যবেক্ষণ, দিল্লি পুলিশ ওই প্রতিবাদের সময়ে আগাগোড়া উমরের উপরে নজরদারি চালাত। সাবিহার অভিযোগ, ‘‘যন্তরমন্তর হোক বা অন্য কোনও মিটিং-মিছিল, আমি নিজে দেখেছি— উমর বক্তৃতা শুরু করলেই পুলিশের একটা টিম ক্যামেরা নিয়ে হাজির হয়ে যেত। ওর পুরো বক্তৃতা ভিডিয়ো করা হত। অন্য কারও ক্ষেত্রে তা হত না।’’
তার পরেও মনোবল ভাঙেনি উমর খালিদের মায়ের। কারণ, সাবিহা বিশ্বাস করেন, তাঁর ছেলে মানুষের অধিকারের কথা বলেন, গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলেন। তাই উমরের গ্রেফতারির পর দেশের সর্বত্র পথে নেমে প্রতিবাদ হয়েছে। কোভিডের কারণে যে সিএএ-বিরোধী আন্দোলন স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল, তা আবার যেন জ্বলে উঠেছে উমরের মুক্তির দাবিতে।
তবে সাবিহা খানুম শুধু তাঁর ছেলের মুক্তিটুকুই চান না। তিনি চান, ভীমা কোরেগাঁও বা দিল্লি হিংসা কিংবা দেশদ্রোহের মিথ্যে মামলায় জেলে থাকা সকল রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি দাবিতে একজোট হোক দেশ। কারণ, তাঁর লড়াইটা যে তাঁর একার নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy