Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
National News

ব্রিটিশ আমলে জেলে গিয়েছিলেন, ‘হারানো’ স্ত্রীকে খুঁজে পেলেন ৭২ বছর পর

কেরলের কাভুম্বায়ি গ্রামে উত্তাল কৃষক আন্দোলনের দাউদাউ আগুনে ছারখার হয়ে গিয়েছিল নারায়ণন-সারদার দাম্পত্য। তখনও স্বাধীনতা আসেনি। হয়নি দেশভাগ। সেটা ১৯৪৬।

ছবি- সংগৃহীত।

ছবি- সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
কান্নুর (কেরল) শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:২৬
Share: Save:

ভাঙা সেতু জুড়ে দিল সময়। ৭২ বছর পর প্রথম স্ত্রী সারদার সঙ্গে দেখা হল ৯৩ বছর বয়সী ই কে নারায়ণনের। অভিমানে বাকরুদ্ধ হয়ে থাকলেন ৮৯-এ পা দেওয়া সারদা। ‘কারও উপরেই রাগ নেই’, বললেন শুধু এই টুকুই!

কেরলের কাভুম্বায়ি গ্রামে উত্তাল কৃষক আন্দোলনের দাউদাউ আগুনে ছারখার হয়ে গিয়েছিল নারায়ণন-সারদার দাম্পত্য। তখনও স্বাধীনতা আসেনি। হয়নি দেশভাগ। সেটা ১৯৪৬। পুলিশ এসে ভেঙে দিয়েছিল দু’জনের দাম্পত্য। সংসার। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে নারায়ণন আর তাঁর বাবা থালিয়ান রমন নাম্বিয়ারকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল কান্নুরের পুলিশ। দু’জনকেই জেলে পুরেছিল। তার ঠিক এক বছর আগে ১৩ বছরের সারদার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বছর সতেরোর নারায়ণনের।

৭২ বছর পর সারদার সঙ্গে প্রথম মোলাকাতে নারায়ণন তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘এত দিন পর দেখা হল। কথা বলছ না কেন?’’ তীব্র অভিমানে জলে ভরে গিয়েছিল সারদার চোখ। যেন তাঁর অনুচ্চারিত প্রশ্ন ছিল, বিয়ের ১০ মাস পরেই কেন চলে যেতে হল নারায়ণনকে? যাবেনই যদি, তা হলে বিয়েটা করেছিলেন কেন সারদাকে?

হ্যাঁ, বিয়ের ১০ মাসের মাথায় উত্তাল কৃষক আন্দোলনের জন্যই বাবাকে নিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়েছিলেন নারায়ণন। তার দু’মাসের মধ্যেই ব্রিটিশ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন নারায়ণন ও তাঁর বাবা। তাঁদের ৮ বছরের জেল হয়েছিল।

নারায়ণনের ভাইপো মধু কুমার জানিয়েছেন, তার আগেই সারদা-নারায়ণনের দাম্পত্য ভেঙে যাওয়ার প্রক্রিয়াটা শুরু হয়ে যায়। নারায়ণন আর তাঁর বাবার খোঁজে মালাবারের বিশেষ পুলিশ বাহিনী গভীর রাতে এসেছিল কান্নুরের কাভুম্বায়ি গ্রামে। বাড়িতে সারদাকে একা দেখে, পুলিশ তাঁকে তাঁর বাপের বাড়িতে রেখে এসেছিল।

আরও পড়ুন- এসএসকেএমে দেখাতে এসে বিহারের যৌনপল্লিতে বিক্রি হয়ে গেলেন মালদহের তরুণী

আরও পড়ুন- কোলে তিন মাসের দগ্ধ শিশু, ওয়ার্ড খুঁজতেই এক ঘণ্টা ঘুরপাক খেলেন মা​

কবে ফিরে আসবেন স্বামী নারায়ণন, তার অপেক্ষাতেই ছিলেন সারদা। কিন্তু তার মধ্যে যে অনেক ঘটনা ঘটে গেল! ৪ বছরের মাথায় ১৯৫০-এ সালেম জেলে পুলিশের গুলিতে মারা গেলেন নারায়ণনের বাবা। ২২টি বুলেট ঢুকেছিল তাঁর শরীরে। তিনটি আর বের করা যায়নি। ও দিকে, এক জেল থেকে অন্য জেলে স্থানান্তর শুরু হল নারায়ণনের। কখনও কান্নুরে, কখনও ভিয়ুর বা সালেম জেলে।

নারায়ণনের জন্য নিষ্ফল অপেক্ষা ছেড়ে সারদার মা, বাবা তাঁদের মেয়ের আবার বিয়ে দিলেন। জেল থেকে বেরিয়ে ফের বিয়ে করলেন নারায়ণনও। সেটা ১৯৫৭। তার কয়েক দশক পর সারদার ছেলে ভার্গবনের সঙ্গে আচমকাই দেখা হয়ে যায় নারায়ণনের এক আত্মীয়ের। ভার্গবন তখন চাষবাস করছেন। তাঁর বাবা, সারদার দ্বিতীয় পক্ষের স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। সারদার ৬ ছেলেমেয়ের মধ্যে ২ জন মারা গিয়েছেন। দ্বিতীয় স্ত্রীকে হারিয়েছেন নারায়ণনও। দু’কথা-চার কথার পর ভার্গবন জানতে পারেন, তাঁর মায়ের প্রথম স্বামী নারায়ণন।

তখনই ঠিক হয়ে যায়, দু’জনকে দেখা করিয়ে দিতে হবে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। যে কথা সেই কাজ। সারদার সঙ্গে দেখা করতে আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে নারায়ণন চলে আসেন পারাসিনিকাদাভুয়ে ভার্গবনের বাড়িতে। কিন্তু প্রথমে ঢুকতে পারেননি নারায়ণন। ভার্গবন বেরিয়ে এসে জানান, ‘‘মা দেখা করতে চাইছেন না।’’ তার পর ভার্গবনকে অনেক বুঝিয়েসুজিয়ে রাজি করান নারায়ণন আর তাঁর আত্মীয়স্বজন। ৮৯ বছর বয়সী সারদার সঙ্গে দেখা হয় নারায়ণনের। ৭২ বছর পর।

ভার্গবনের কথায়, ‘‘দু’জনেই বেশ কিছু ক্ষণ চুপ করে বসেছিলেন। কোনও কথাই বলতে পারেননি। দু’জনেই কাঁদছিলেন অঝোরে। তার পর দু’জনে এক সঙ্গে দুপুরের খাবার খান।

নারায়ণনের নাতনি শান্তা কাভুম্বায়ির লেখা একটি বই বেরিয়েছে কিছু দিন আগে। তার নাম- ‘ডিসেম্বর থার্টি’। ১৯৪৬-এর সেই কৃষক আন্দোলন নিয়ে লেখা।

এ বার কি সেই আন্দোলনের জেরে ভেঙে যাওয়া একটি সম্পর্কের ৭২ বছর পর ‘সেতুবন্ধন’ নিয়ে লেখা হবে অন্য কোনও বই?

না হলে যে অভিমান থেকে যাবে দু’জনেরই, সারদা আর নারায়ণনের!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE