কৃষি বিল ঘিরে এ ভাবেই অশান্তি ছড়িয়েছিল রাজ্যসভায়। ছবি’ পিটিআই।
গুরুতর অসঙ্গতি! নরেন্দ্র মোদী সরকারের বয়ান এবং রাজ্যসভা অধিবেশনের ভিডিয়ো ফুটেজে। গত রবিবার (২০ সেপ্টেম্বর) ধ্বনিভোটে বিতর্কিত জোড়া কৃষি বিল পাশের সময় তুমুল অশান্তির ঘটনা নিয়ে।
সে দিন কৃষি বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে অসংসদীয় আচরণের দায়ে আটজন বিরোধী সাংসদকে বাদল অধিবেশন পর্বের জন্য সাসপেন্ড করেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন, কংগ্রেসের রাজীব সাতভ, সিপিএমের কে কে রাগেশরা সভা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংহকে নিগ্রহ করেছেন।
যদিও বিরোধীদের পাল্টা অভিযোগ, ডেপুটি চেয়ারম্যান নিরপেক্ষতা পালন করেননি। গোটা বিরোধী শিবির এমনকি, তখনও এনডিএ জোটের শরিক শিরোমণি অকালি দল ভোটাভুটির (ডিভিশন) দাবি তুললেও তা খারিজ করেছেন। সরকারকে বাঁচাতে একতরফা সিদ্ধান্তে ধ্বনিভোটের মাধ্যমে বিল পাশ করিয়েছেন।
বস্তুত, সে দিন সংসদের উচ্চকক্ষে এডিএমকে, জেডি-ইউ ও ওয়াইএসআর কংগ্রেস ছাড়া কৃষি সংস্কারের জোড়া বিলে আর কেউই বিজেপির পাশে দাঁড়ায়নি। ভোটাভুটি হলে সরকার হেরে যাবে বা সামান্য ব্যবধানে জিতবে, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল বিজেপি শিবিরে। বিরোধীদের অভিযোগ, পরিস্থিতি আঁচ করে ঝুঁকি না-নিয়ে ধ্বনিভোটের মাধ্যমেই মোদী সরকার জোড়া কৃষি বিল পাশের সিদ্ধান্ত নেয়। আর ডেপুটি চেয়ারম্যান তাঁর নিরপেক্ষতা বিসর্জন দিয়ে সরকারকে আগলানোর চেষ্টা করেন।
সিপিএমের কে কে রাগেশের অভিযোগ, বিরোধীরা একযোগে প্রথমে বিল দু’টিকে সংসদীয় সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি তুলেছিল। প্রয়োজনে এ নিয়ে ভোটাভুটিতেও রাজি ছিল। কিন্তু ডেপুটি চেয়ারম্যান সে ক্ষেত্রেও ভোটাভুটি না করে, ধ্বনিভোটের মাধ্যমে দাবি খারিজ করে দেন। হরিবংশ এবং সরকারপক্ষের পাল্টা অভিযোগ, বিরোধী সাংসদরা যখন জোড়া বিলকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো কিংবা ধ্বনিভোটের বদলে ভোটাভুটির দাবি তুলেছিলেন, তখন তাঁরা নিজেদের আসনেই ছিলেন না। নেমে এসেছিলেন ওয়েলে। ফলে সেই দাবি মানা হয়নি।
যদিও রবিবার একটি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ত্রিচি শিবা, রাগেশ-সহ দু’-তিন জন বিরোধী সাংসদ নিজেদের আসন থেকেই কৃষি বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি জানাচ্ছেন হরিবংশের কাছে। ওই ফুটেজে দেখাচ্ছে, সে দিন গন্ডগোলের সূত্রপাত হয়েছিল দুপুর ১টা নাগাদ। বিরোধীরা অধিবেশনের সময়সীমা না বাড়িয়ে সে দিনের মতো সভা মুলতুবি করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেছিলেন, ‘‘বিল নিয়ে আগামিকালও আলোচনা হতে পারে। মন্ত্রী জবাব দিতে পারেন।’’ কিন্তু তা উপেক্ষা করে সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর প্রস্তাব মেনে সভার সময়সীমা বাড়িয়ে দেন ডেপুটি চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত অগ্নিমিত্রা পাল, ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে
গত দু’দশকের রাজ্যসভা সাংসদ ডিএমকে-র শিবা বলেন, ‘‘সংসদীয় রীতি অনুযায়ী রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই অধিবেশনের সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু ১২টি বিরোধী দল পূর্ব নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী অধিবেশন মুলতুবির দাবি করেছিল। ডেপুটি চেয়ারম্যান তা উপেক্ষা করেন। তাঁর পদক্ষেপ সংসদীয় কার্যবিধির ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।’’
আরও পড়ুন: প্রয়াত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জসবন্ত সিংহ
সেদিন বেলা ১টা ১১-এ রাগেশ তাঁর ৯২ নম্বর আসন থেকেই বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভোটাভুটির (ডিভিশন) দাবি জানিয়েছিলেন। তাঁর এক মিনিট আগে নিজের আসন থেকে একই দাবি তুলেছিলেন শিবা। তাঁর দাবি, সংসদীয় কার্যবিধির ২৫২(৪) (এ) উপ-অনুচ্ছেদ বলছে, সভা পরিচালনাকারী যদি দ্বিতীয় বারও প্রস্তাবের সঙ্গে অসম্মত হন তবে ধ্বনিভোটের বদলে ভোটাভুটি (ডিভিশন) চাইবেন তিনি। যন্ত্রে বোতাম টিপে বা মাথা গুণে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদের মতে সায় দেবেন। কিন্তু ডিভিশনের পরিবর্তে হরিবংশ ধ্বনিভোটের সাহায্য নেন।
কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের দাবি, সংসদীয় বিধি মেনেই বিল পাশের জন্য সভার সময়সীমা বাড়ানোর জন্য ডেপুটি চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন প্রহ্লাদ। তাঁর কথায়, ‘‘এটি সংসদের একটি সাধারণ পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ-সংখ্যালঘু হিসেব করা হয় না। কিন্তু বিরোধীরা আসন ছেড়ে ওয়েলে নেমে এসে হট্টগোল শুরু করে দেন।’’ যদিও ওই ফুটেজকে হাতিয়ার করে রাগেশের মন্তব্য, ‘‘সাংসদেরা আসনে ছিলেন না বলে সরকার যে অভিযোগ করছে, তা পুরোপুরি মিথ্যা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy