ছবি: সংগৃহীত।
বাংলায় ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে জোট নিয়ে কংগ্রেস ও সিপিএম নেতৃত্বের মধ্যে এখন মধুর সম্পর্ক। ও দিকে কেরলে বাম সরকারের সঙ্গে কংগ্রেসের নতুন করে খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল।
পিনারাই বিজয়নের বাম সরকার কেরলে অধ্যাদেশ জারি করে ফেসবুক-টুইটারে কোনও ‘আপত্তিকর’ পোস্ট-এর ‘অপরাধ’-এ পাঁচ বছর পর্যন্ত জেলে পাঠানোর বন্দোবস্ত করেছে। ইমেল, হোয়াটসঅ্যাপে ‘আপত্তিকর’ বার্তা পাঠালেও একই শাস্তি। এই অধ্যাদেশ জারির পরেই আজ কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কেরলের বাম সরকারকে তুলোধনা করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, বাম সরকার বাক্-স্বাধীনতার অধিকার খর্ব করতে চাইছে। সিপিআই-এমএল লিবারেশনও এ জন্য সিপিএম নেতৃত্বকে নিশানা করেছে।
পশ্চিমবঙ্গে ‘আপত্তিকর’ ইমেল পাঠানোর জন্য অম্বিকেশ মহাপাত্রকে গ্রেফতার করার পরে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। এ বার কেরলে বাম সরকার একই আইন জারি করায় বাংলার সিপিএম নেতারাও অস্বস্তিতে। তাঁদের দাবি, কেরলে কী আইন সংশোধন হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও তাঁরা অবহিত নন। তবে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘নাগরিক অধিকার ও বাক্-স্বাধীনতার জন্য বামপন্থীরা বরাবর লড়াই করেছে। সেই কারণেই অম্বিকেশ মহাপাত্রের গ্রেফতারের ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলাম। মানুষের অধিকারকে কোনও আইনেই খর্ব করা উচিত নয়, এটাই বিশ্বাস করি।’’
সীতারাম ইয়েচুরিকে কটাক্ষ করে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম আজ কটাক্ষ করেছেন, “আমার বন্ধু, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক কী ভাবে এমন নির্মম সিদ্ধান্তের পক্ষে সওয়াল করবেন?” তাঁর মন্তব্য, “তথাকথিত আপত্তিকর পোস্টের জন্য ৫ বছরের জেলের ব্যবস্থা করতে কেরলের বাম সরকারের আইন দেখে আমি স্তম্ভিত।” সিপিআই-এমএল লিবারেশনের পলিটব্যুরো নেত্রী কবিতা কৃষ্ণণের মন্তব্য, “সিপিএম গোটা দেশে দানবীয় আইনের বিরুদ্ধে, বাক্-স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলে। সিপিএম সরকার দয়া করে এমন আইন এনে গোটা বামকে লজ্জিত করবেন না।”
এমনিতেই কেরলের বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের রমেশ চেন্নিতালার বিরুদ্ধে পিনারাই সরকার ভিজিল্যান্স তদন্তের অনুমোদন দেওয়ায় কংগ্রেস নেতারা খড়্গহস্ত হয়েই ছিলেন। এই হাতিয়ার পেয়ে তাঁরা আরও ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর বলেন, “এই আইনকে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ায় যে কোনও রাজনৈতিক আক্রমণে এই আইনের ধারা প্রয়োগ হতে পারে।”
আক্রমণের মুখে আজ কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন নিজে বিবৃতি দিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, এই আইন কোনও ভাবেই বাক-স্বাধীনতা বা নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে না। তাঁর দাবি, কেরল পুলিশ আইনে এই সংশোধনী নিয়ে আশঙ্কা একেবারে অমূলক। তাঁর যুক্তি, অনেক ক্ষেত্রেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের পিছনে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ, অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িয়ে থাকে। সে কারণেই এই আইন। রাজ্যের আইনমন্ত্রী এবং সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ কে বালনের ব্যাখ্যা, সামাজিক মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে ভুয়ো তথ্য ছড়ানো এবং ঘৃণা ও হিংসার বাতবরণ তৈরির লাগাতার প্রচেষ্টা রুখতেই পুরনো আইনকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে।
কেরলে ২০১১ সালের পুলিশ আইনের ১১৮ (এ) ধারায় সংশোধনী এনে বলা হয়েছে, উস্কানি, অবমাননা বা বিদ্বেষমূলক কোনও বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হলে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই মামলা রুজু করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির তরফে মানহানির অভিযোগ দায়েরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। বিশেষত, মহিলা ও শিশুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্ররোচনা থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি, কোনও বক্তব্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষ নন, এমন কেউও এই ধারায় অভিযোগ জানাতে পারবেন। আইনমন্ত্রী বালনের বক্তব্য, ‘‘বিভাজন ও অশান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সামাজিক মাধ্যমে ধারাবাহিক ভাবে বিদ্বেষ ও হিংসার উস্কানি ছড়াচ্ছে কিছু পক্ষ। তাই আইনে সংশোধনী প্রয়োজন ছিল। নাগরিক বা বিরোধীদের বাক্-স্বাধীনতা হরণের প্রশ্ন এখানে নেই। এই আইনে মামলা দায়ের হলেও আদালতে বিচার চাওয়ার দরজা সকলের জন্যই খোলা।’’ কিন্তু শশী তারুরের অভিযোগ, এমন ভাবে আইন তৈরি হয়েছে যে তা রাজনৈতিক বিরোধী, সমালোচক, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও কাজে লাগানো যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy