ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর দুই রাষ্ট্রপ্রধান। ছবি: রয়টার্স।
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও একটু মজবুত করে ফেলল ভারত।
শুক্রবার রাজধানীর হায়দরাবাদ হাউসে রাশিয়ার সঙ্গে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করে ফেলল ভারত। পুতিনের দেশের সঙ্গে নয়াদিল্লির এই ধরনের সামরিক চুক্তি ট্রাম্প প্রশাসনকে চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিল। কারণ, ভারত দীর্ঘদিন থেকে দৌত্য চালালেও এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থেকে নয়াদিল্লিকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে আগেই সতর্ক করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। তা সত্ত্বেও মার্কিন হুমকিকে অগ্রাহ্য করে ৫০০ কোটি ডলারের এই চুক্তি করে কিছুটা ভারতীয় উপমহাদেশে খানিকাট সুবিধাজনক অবস্থায় পৌঁছল নয়াদিল্লি।
এ দিন প্রতিরক্ষা-সহ ২০টি বিষয়ে চুক্তি করেছে ভারত। পুতিন ছাডা়ও চুক্তির সময় উপস্থিত ছিলেন রুশ উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউরি বোরিসোভ, বিদেশমন্ত্রী সের্জেই লাভরোভ, শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী ডেনিস মান্তুরোভ।
বৃহস্পতিবার রাতেই দিল্লি পৌঁছন ভ্লাদিমির। তাঁকে স্বাগত জানান বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবন ৭ লোককল্যাণ মার্গে গিয়ে বৈঠক করেন পুতিন। তার পরে সেখানেই নৈশভোজের টেবিলে একান্তে কথাবার্তা হয় দু’জনের। রাশিয়ার নোভোসিবিরস্ক শহরে একটি ইন্ডিয়ান মনিটরিং স্টেশন তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা।
নয়াদিল্লির কূটনীতিক ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বেশ কয়েকটি কারণে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার বিষয়টি জরুরি হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: এগুলিই কি বিশ্বের বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ?
প্রথমত, চিন ও পাকিস্তানের মোকাবিলায় এই ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হাতে থাকা জরুরি। সম্প্রতি চিনও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়ার থেকে এস-৪০০ কিনেছে।
আরও পড়ুন: সাইবার হানায় রুশ-যোগ, দাবি ব্রিটিশ রিপোর্টে
দ্বিতীয়ত, ভারত বেশ কিছু সময় ধরেই আমেরিকার দিকে ঝোঁকায় কাছাকাছি এসেছে রাশিয়া-চিন-পাকিস্তান। ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়ানোয় সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে নৌবাহিনী সমঝোতা চুক্তি করে বসেছে ইসলামাবাদ। এখন সেই সমীকরণ ভেঙে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বহু পুরনো সম্পর্ককে আরও মজবুত করা প্রয়োজন। গত কয়েক বছরে পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বাড়িয়ে গিয়েছেন মোদী।
এ বছরে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনে ভারতের পূর্ণ সদস্য হওয়ার পিছনেও সহযোগিতা ছিল রাশিয়ার। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হতে ভারতের দীর্ঘদিনের দাবিকেও সমর্থন করছে তারা। আর বেজিং যতই আটকাক, এনএসজিতে প্রবেশের প্রশ্নেও একই ভাবে নয়াদিল্লির পাশে রয়েছে পুতিনের দেশ।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
তিন, চিনকে আটকাতে নয়াদিল্লিকে পাশে চায় আমেরিকা। কিন্তু রাশিয়া, ইরানের মতো ভারতের বন্ধু দেশগুলি থেকে সামরিক ব্যবস্থা কিংবা তেল কিনলে আটকাচ্ছে তারা। এই চাপের কাছে মাথা না নুইয়ে দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়াতে চাইছে নয়াদিল্লি। এই প্রেক্ষাপটেই ৫০০ কোটি ডলারের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কেনা নিয়ে চুক্তি হল দুই দেশের মধ্যে, রাশিয়ার থেকে ক্রিভাক-ক্লাস ফ্রিগেট যুদ্ধজাহাজ এবং কেএ-২২৬ হেলিকপ্টার কেনা নিয়েও কথা হয়েছে এদিন। ভারতে কুড়ানকুলামের পরে রাশিয়ার সহযোগিতায় দ্বিতীয় পরমাণু চুল্লি বসানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছএ সংবাদ সংস্থা। ২০২২-এ ভারতের মহাকাশ অভিযানেও সাহায্য করবে মস্কো। কথা হয়েছে বাণিজ্য বাড়ানোর প্রশ্নেও।
আগামী বছরে ভারত-মার্কিন যৌথ সামরিক মহড়ার পরিকল্পনার কথা সেপ্টেম্বরেই ঘোষণা করা হয়েছিল। ভারতের সঙ্গে জরুরি সামরিক তথ্য আদানপ্রদানেও রাজি হয়েছে আমেরিকা। এই পরিস্থিতিতে পুতিনের দিল্লি সফরে ট্রাম্প প্রশাসন বিশেষ নজর রেখে চলেছে তা বলাই বাহুল্য।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy