ঘটনার পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি উমর। সোমবার। পিটিআই
দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবের সামনে আক্রান্ত হলেন জেএনইউ-এর প্রাক্তন ছাত্র নেতা উমর খালিদ। অভিযোগ, আজ বেলা দেড়টা নাগাদ উমরকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এক ব্যক্তি। গুলি উমরের গায়ে লাগেনি। কেউ হতাহতও হয়নি। কিন্তু সংসদের ঢিল ছোড়া দূরত্বে এ ভাবে গুলিচালনার ঘটনায় এক দিকে প্রশ্ন উঠেছে দিল্লির নিরাপত্তা নিয়ে। অন্য দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে অসহিষ্ণুতায় ইন্ধন জোগানো মেরুকরণ এবং ঘৃণার রাজনীতির বিরুদ্ধেও। ঘটনায় রীতিমতো অস্বস্তিতে দিল্লি পুলিশ। রাত পর্যন্ত দুষ্কৃতীর পরিচয় জানা যায়নি।
বছর তিনেক আগে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে আফজল গুরুর স্মৃতিতে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করার দায়ে শিরোনামে আসেন পিএইচডি-র ছাত্র উমর। কানহইয়া কুমার এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্যর সঙ্গেই গ্রেফতার হন তিনি। আপাতত
জামিনে মুক্ত। জেএনইউ-এর অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি অবশ্য তাঁকে বহিষ্কার করার পক্ষে মত দিয়েছিল। উমর তার বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানি রয়েছে।
ইতিমধ্যে আজ কনস্টিটিউশন ক্লাবে ‘খউফ সে আজ়াদি’ (ভয় থেকে মুক্তি) নামে একটি আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখার কথা ছিল উমরের। অনুষ্ঠানের মাঝে ক্লাবের বাইরে একটি দোকানে চা খেতে আসেন উমর ও তাঁর বন্ধুরা। চা-দোকানের মালিক ঘনশ্যাম পরে বলেন, ‘‘তিন-চারটি ছেলে দোকানের পাশে ছায়াতে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিল। হঠাৎ দেখি সাদা শার্ট পরা একটি ছেলে হাতে পিস্তল নিয়ে পিছন থেকে এসে আর একটি ছেলের (উমর) গলা জড়িয়ে ধরেছে। ধস্তাধস্তিতে দু’জনেই মাটিতে গড়িয়ে যায়। উমর ওর হাত থেকে পিস্তলটা নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। পিস্তল হাতে ছেলেটি তখন উঠে দৌড়ে পালাতে থাকে।’’
উমরের বন্ধুদের অভিযোগ, পালানোর সময়েই দুষ্কৃতী উমরের উদ্দেশ্যে গুলি চালায়। উমর ভারসাম্য রাখতে না পেরে পড়ে যাওয়ায় গুলি তাঁর গায়ে লাগেনি। দুষ্কৃতী নিজে দৌড়তে দৌড়তে প্রথমে রাস্তার উল্টো দিকে আইএনএস ভবনের সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘‘তখনই গুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। হুমড়ি খেয়ে পড়লে তার হাত থেকে পিস্তল ছিটকে যায়। তার পরে সে ফের উঠে দৌড়ে পালিয়ে যায়।’’ উমরের সঙ্গী আর একজন প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, ‘‘উমরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার পরে
দুষ্কৃতী আকাশেও গুলি ছুড়েছিল। তার পরেই পিস্তলটি পড়ে যায়।’’ ঘটনাস্থল থেকে পিস্তলটি পরে
উদ্ধার করে পুলিশ। দিল্লি পুলিশের ডিসিপি মধুর বর্মা বলেন, ‘‘উমরকে লক্ষ্য করেই গুলি চালানো হয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হামলার উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয়।’’
তবে দেশ জুড়ে বিরোধী স্বরকে চাপা দেওয়ার যে চেষ্টা চলছে, উমরের উপরে এই আক্রমণ তাতেই নতুন সংযোজন বলে মনে করছে অনেকে। গুজরাতের বিধায়ক, দলিত নেতা জিগ্নেশ মেবাণী টুইটারে প্রধানমন্ত্রীর অফিসকে ট্যাগ করে অভিযোগ করেন, বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি নিজে, উমর এবং জেএনইউ-এর আর এক ছাত্রনেত্রী শেহলা রশিদ নানা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছিলেন। পুলিশি নিরাপত্তা চাইলেও এখনও অবধি তার ব্যবস্থা করা হয়নি। উমর নিজে বলেন, ‘‘গণপিটুনির বিরুদ্ধে বলতে এসে নিজেই আক্রান্ত হলাম। এক মুহূর্তের জন্য আমার গৌরী লঙ্কেশের কথা মনে পড়েছিল। মনে হয়েছিল, জীবনের শেষ মুহূর্তটা বোধহয় এসে গিয়েছে।’’
ঘটনাটি ঘিরে কিছু ধোঁয়াশা অবশ্য রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বন্দুক হাতে এসে কেন ধস্তাধস্তিতে জড়াতে গেল ওই যুবক? কেন সরাসরি গুলি চালাল না? ঘটনাচক্রে সে সময়ে ওই ক্লাবে বিজেপিরও একটি অনুষ্ঠান চলছিল। বিষয়টি জানাজানি হতেই সেখানে উপস্থিত দিল্লির সাংসদ মীনাক্ষি লেখি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘‘সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে ওই হামলা করানো হয়নি তো?’’ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দিল্লি জুড়ে এখন লাল-সতর্কতা। সেখানে এমন ঘটনায় সবচেয়ে অস্বস্তিতে অবশ্য দিল্লি পুলিশই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy