সমুদ্রের পাড়ে নৌকা তুলে আনছেন মৎস্যজীবীরা। ছবি: এএফপি।
আরও কাছে চলে এল ঘূর্ণিঝড় ফণী। ওড়িশার পুরী থেকে আর মাত্র ৩৩০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে অতি শক্তিশালী এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়। দিঘা থেকে তার দূরত্ব ৬১৫ কিলোমিটার। যার জেরে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি হয়েছে ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী অঞ্চলে। বিপর্যয় মোকাবিলা করতে তৎপর ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের সরকার। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার ক্যাবিনেট সচিব, মুখ্য সচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিব-সহ আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং আর কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, সে সব নিয়ে আলোচনা করতেই এই বৈঠক।
ইতিমধ্যেই ওড়িশার স্কুল-কলেজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। পশ্চিমবঙ্গেও স্কুলের গরমের ছুটি এগিয়ে আনা হয়েছে। আগামিকাল থেকে দু’মাস স্কুলে ছুটি থাকছে।
ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি কলকাতার রাস্তাঘাট থেকে সমস্ত হোর্ডিং খুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এই মুহূর্তে ফণীর অবস্থান
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুরীর সমুদ্র নামা নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। দিঘা-মন্দারমণিতেও সমুদ্রে নামা নিষেধ করা হয়েছে। ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে মাইক নিয়ে পর্যটক এবং স্থানীয়দের সতর্ক করছে পুলিশ।
এ দিন সকালে ১২টার মধ্যে পুরীর সমুদ্রের কাছাকাছি সমস্ত হোটেল খালি করে দিতে বলা হয়েছে পর্যটকদের। পর্যটকেরা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন তার জন্য সকাল ১০টা থেকে ৪০টি বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করেছে ওড়িশা সরকার। রেলওয়ের হেল্পলাইন নম্বরগুলো হল, ০৩২২২ ২২১৬৯৬, ০৩২২২ ২৫৫৭৫৮, ০৬৭৮২ ২৬২৭৬, ০৩৩২৬৪১ ২৯৭৫। ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার মাঝরাত থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় কোনও বিমান ওঠানামা করবে না বলে জানা গিয়েছে।
উত্তাল সমুদ্র, শুরু হয়েছে বৃষ্টি ওড়িশায়। ছবি: পিটিআই।
আরও পড়ুন: ফুঁসছে ফণী, ক্ষয়ক্ষতি আটকাতে আটঘাট বেঁধে তৈরি প্রশাসন
পাশাপাশি ভারতীয় রেলের তরফে তিনটি বিশেষ ট্রেনেরও ব্যবস্থা করা হয়। তিনটির মধ্যে দু’টো ট্রেন পুরী থেকে হাওড়া পৌঁছনোর কথা আর একটি পুরী থেকে শালিমার পৌঁছনোর কথা। ট্রেনগুলো যথাক্রমে বেলা দেড়টা, বেলা তিনটে এবং সন্ধ্যা ৬টায় পুরী থেকে ছাড়ার কথা। পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে এবং ইস্ট কোস্ট রেল এখনও পর্যন্ত মোট ১০৩টি ট্রেন বাতিল করেছে।
আরও পড়ুন: হুদহুদ থেকে আয়লা হয়ে ফণী, হানা দিয়েছে যে সব বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়
আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, ওড়িশার ১৯টি জেলায় এর প্রভাব পড়তে পারে। প্রভাব পড়বে পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্ধ্রপ্রদেশের তিনটি জেলায়। ১ মে থেকে ৫ মে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করেছে আবহাওয়া দফতর। পুরী, কেন্দ্রাপড়া, বালেশ্বর, ময়ূরভঞ্জ, গজপতি, কটক, জাজপুর-এর মতো অঞ্চলগুলো থেকে ইতিমধ্যে আট লক্ষেরও বেশি মানুষকে ওড়িশা উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের জন্য ৮৭৯-এরও বেশি সাইক্লোন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। উপকূলবর্তী অঞ্চলের মানুষদের এই সাইক্লোন সেন্টারেই আপাতত রাখা হয়েছে। নৌবাহিনী, উপকূল রক্ষা বাহিনী এবং বির্পযয় মোকাবিলা বাহিনীর ৭৮টি দল ইতিমধ্যে উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলায় ১১৫ কিলোমিটার বেগে ‘ছোবল’ মারতে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী
এ দিন ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে যায় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ধ্বজা। ২১ ফুট উচ্চতার ধ্বজা থাকে মন্দিরের শীর্ষে। ঝড়ের কারণে ধ্বজা উড়ে যাওয়া আটকাতে সেই উচ্চতা কমিয়ে সাড়ে সাত ফুট করা হয়েছিল। ঝড়ের কারণে ধ্বজা উড়ে গেলে পুজো বন্ধ রাখতে হবে, সেই কারণেই মন্দির কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ঝোড়ো হাওয়ায় সেই নিচু ধ্বজাও উড়ে যায়। পরে নতুন করে ধ্বজা লাগানোর ব্যবস্থা করে মন্দির কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy