ছবি: সংগৃহীত।
দোকান-বাজার, শপিং মল খুলতে বাধা নেই। কিন্তু ধর্মীয় স্থান খুলতে সরকারের আপত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন দেশের প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডে।
এই নীতিকে ‘অদ্ভুত’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক স্বার্থ’ জড়িত থাকলে ‘তথাকথিত’ করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েও সরকার তৈরি। কিন্তু ধর্মের প্রশ্ন এলেই, কোভিড ও বিপদের কথা উঠে আসছে।
এই অবস্থান থেকেই আজ সুপ্রিম কোর্ট আগামী দু’দিন ‘পর্যুষণ’ পালনের জন্য মহারাষ্ট্রের তিনটি জৈন মন্দির খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে। তবে পারষ্পরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে। এর আগে স্বাস্থ্যবিধির শর্ত চাপিয়ে পুরীতে রথযাত্রারও ছাড়পত্র দিয়েছিল শীর্ষ আদালত।
আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহেই মোদীর জন্য ‘এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান’
আরও পড়ুন: মুখে সব ভাষার কথা, শিক্ষামন্ত্রীর ভরসা হিন্দিতেই
লকডাউনের জেরে অর্থনীতি ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে পৌঁছেছিল। মূলত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করতেই করোনার সঙ্কট সত্ত্বেও ধাপে ধাপে ‘আনলক’ পর্ব চালু করেছে কেন্দ্র। মন্দির ও অন্য উপাসনাস্থল খোলার ছাড়পত্র দেওয়া হলেও, এখনও ধর্মীয় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তার মধ্যেই অবশ্য অযোধ্যার রামমন্দিরের শিলান্যাস করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু মহারাষ্ট্রের মতো অনেক রাজ্যে সংক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি বলে সেখানকার সরকার ধর্মীয় স্থল খোলারও অনুমতি দেয়নি। এমনকি, এ বছর মহারাষ্ট্রে গণপতি উৎসবেও জমায়েতের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
জৈনদের সংগঠন শ্রীপার্শ্বতিলক শ্বেতাম্বর মূর্তিপূজক জৈন ট্রাস্ট তাদের পর্যুষণ পর্ব পালনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। দাবি ছিল, মুম্বইয়ের দাদর, বাইকুল্লা ও চেম্বুরে তিনটি জৈন মন্দিরে প্রার্থনার অনুমতি দেওয়া হোক। মহারাষ্ট্র সরকার এর অনুমতি দেয়নি। ট্রাস্টের হয়ে আইনজীবী দুশ্যন্ত দাভে প্রশ্ন তোলেন, “রাজ্য সরকার কি এখন শপিং মলে নজরদারি করছে? সেলুন, মদের দোকানে নজরদারি হচ্ছে? হাজার হাজার লোক মদের দোকানে লাইন দিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। কিন্তু জৈন সম্প্রদায় বলছে তারা নিজের লোকেদের উপরে নজরদারি করবে, তা হলে কেন ছাড় দেওয়া হবে না?”
মহারাষ্ট্র সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনুসিঙ্ঘভি আপত্তি তুলে বলেছিলেন, রাজ্যে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা বিপুল ভাবে বাড়ছে। মহারাষ্ট্র সরকার সব রকম ধর্মীয় সমাবেশে বিধিনিষেধ চাপিয়েছে। মহারাষ্ট্রের সব থেকে বড় উৎসব গণেশ চতুর্থী শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে। তার আগে পর্যুষণের প্রার্থনার অনুমতি দিয়ে বৈষম্য হবে। অন্যরাও একই আর্জি নিয়ে হাজির হবেন।
মোদী সরকারের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, কেন্দ্র জৈনদের আর্জিকে বিরূপ চোখে দেখছে না। তাঁর মন্তব্য, ‘‘অর্থ কোনও ভাবেই আধ্যাত্মিকতার আগে স্থান পেতে পারে না।’’ সিঙ্ঘভি কটাক্ষ করেন, ‘‘এই বিবৃতি কি টিভির জন্য?” তিনি যুক্তি দেন, মহারাষ্ট্র সরকার কোনও ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু এটা রাজ্যের বিষয়। রাজ্যকেই সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া হোক।”
প্রধান বিচারপতি বলেন, “রথযাত্রার সময়ও আমরা একই সমালোচনা ও কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছিলাম। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস ছিল, দূরত্ব বজায় রেখে শুধু রথের দড়ি টানলে কোনও ক্ষতি হবে। এখনও পর্যন্ত কোনও সমস্যা হয়নি।” একই ভাবে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধির যাবতীয় শর্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হলে, তিনটি মন্দিরে প্রার্থনার অনুমতি দিলে সমস্যা তৈরি হবে না বলে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে একই সঙ্গে আদালত বলেছে, এই ছাড়পত্রের সঙ্গে অন্য মন্দির বা গণেশ চতুর্থী উদ্যাপনের সম্পর্ক নেই। কারণ সেখানে ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, “প্রভু জগন্নাথ আমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। আপনাদের ভগবানও আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy