Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Migrant Workers

করোনা নয়, ভয় অনাহারের, বিহার-উত্তরপ্রদেশ থেকে দলে দলে কাজে ফিরছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা

সরকার রোজগার প্রকল্পের ঘোষণা করলেও, নিজের রাজ্যে কাজের সুযোগ মিলছে না বলে অভিযোগ পরিযায়ী শ্রমিকদের।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
লখনউ শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২০ ১১:৫৫
Share: Save:

করোনা মোকাবিলায় আমেরিকার চেয়েও ভাল কাজ করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। সম্প্রতি এ ভাবেই যোগী সরকারকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিভিন্ন রাজ্য থেকে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের যাতে কাজের সন্ধানে অন্যত্র যেতে না হয় তার জন্য ‘আত্মনির্ভর উত্তরপ্রদেশ রোজগার অভিযান’ প্রকল্পেরও উদ্বোধনও করেন তিনি। বলা হয়, এই প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের ১ কোটি ২৫ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ির কাছেই কাজের সুযোগ পাবেন। কিন্তু তাঁর এই ঘোষণার দু’দিনের মাথাতেই কাজের সন্ধানে ফের ভিন্ রাজ্যের উদ্দেশে রওনা দিতে শুরু করলেন সে রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরা। তাঁদের কথায়, ‘‘না খেতে পেয়ে মরার চেয়ে করোনা ঢের ভাল।’’

গত ২৪ মার্চ দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রায় ৩০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক উত্তরপ্রদেশে ফিরে এসেছিলেন। আনলক পর্ব শুরু হতে তাঁদের একটা বড় অংশই এখন দলে দলে ফের কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়তে শুরু করেছেন। এই মুহূর্তে গোরক্ষপুর জংশন থেকে মহারাষ্ট্র, গুজরাত-সহ অন্যান্য রাজ্যে হাতে গোনা কিছু ট্রেন চলছে। তাতে চেপেই কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা দিতে শুরু করেছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। গোরক্ষপুর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে দেওরিয়া বাসস্ট্যান্ডে তাই সকাল থেকেই লাইন দিচ্ছেন তাঁরা। দেওরিয়া থেকে বাসে চেপে প্রথমে গোরক্ষপুর, তার পর সেখান থেকে গন্তব্যে রওনা দেওয়াই উদ্দেশ্য তাঁদের।

তবে ফিরে গেলেই যে কাজে ফিরতে পারবেন, তেমন সম্ভাবনা নেই। কারণ এখনও বহু কল-কারখানা বন্ধ রয়েছে। তবু আগে-ভাগে পৌঁছতে পারলে কিছু একটা বন্দোবস্ত হয়ে যাবে বলে আশাবাদী ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা। তাঁদের মধ্যে থেকে খুরশিদ আনসারি নামের এক জন মুম্বইয়ে কাপড়ের কারখানায় কাজ করেন। এক মাস আগেই বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। কিন্তু হাতে টাকা না থাকায় সংসার চালাতে সমস্যায় পড়েছেন। তাই বেরিয়ে পড়েছেন বলে জানান তিনি। খুরশিদ আনসারি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে কাজের সুযোগ থাকলে ফিরে যেতাম না। আমাদের কারখানা এখনও চালু হয়নি। কিন্তু অন্য কিছুও যদি পাওয়া যায়, তার জন্যই যাচ্ছি। না খেতে পেয়ে মরার চেয়ে করোনা ঢের ভাল। আমি করোনায় মরলে দুঃখ নেই। ছেলেমেয়েগুলো যেন বাঁচে।’’

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত প্রায় ২০ হাজার, বাড়ল সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও​

কলকাতায় একটি সংস্থায় টেকনিশিয়ানের কাজ করেন দিবাকর প্রসাদ। হোলিতে বাড়ি ফিরে লকডাউনে আটকে পড়েছিলেন। আনলক পর্ব শুরু হতে কলকাতায় তাঁর সংস্থায় কাজকর্ম চালু হয়ে গিয়েছে। স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তানকে বাড়িতে রেখে তাই কাজে ফিরতে বেরিয়ে পড়েছেন তিনি। সংবাদমাধ্যমে দিবাকর বলেন, ‘‘আতঙ্কে রয়েছি। কিন্তু এখানে থাকার সাহস পাচ্ছি না। নিজে কী খাব আর পরিবারকেই বা কী খাওয়াব?’’

উত্তরপ্রদেশের মতো একই পরিস্থিতি বিহারেও। ১০০ দিনের কাজের আওতায় এই মুহূর্তে রাজ্যে ৬০ লক্ষ মানুষ কাজ পেয়েছেন বলে শনিবারই দাবি করে নীতীশ কুমার ও বিজেপির জোট সরকার। কিন্তু তাঁর কাছে কোনও কাজের সুযোগ এসে পৌঁছয়নি বলে জানিয়েছেন সিদ্ধার্থ নগরের বাসিন্দা, তিরিশ ছুঁইছুঁই মহম্মদ আবিদ। মুম্বইতে এসি টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘মুম্বইতে ভাল রোজগারের সুযোগ রয়েছে। এখানে সংসার চালাতেই পারছি না। সরকার যদি প্রকল্প চালু করেও থাকে, তা আমাদের কাছে পৌঁছচ্ছে না। এখানে কোনও কাজ নেই। যার কাছেই যাই না কেন, মুখের উপর কাজ নেই বলে দেন।’’

আরও পড়ুন: চিনের নয়া শিবির, সেনা বাড়াচ্ছে ভারত, লাদাখে জমি ফিরবে কি?​

বালিয়া স্টেশনে ট্রেন ধরতে আসা রাজেশকুমার বর্মা জানান, অমদাবাদে ভাড়ায় মুদিখানার দোকান চালান তিনি। তিনি বাড়ি চলে আসায় গত তিন মাস ধরে দোকান বন্ধ। কিন্তু ভাড়া গুনে যেতেই হচ্ছে। তাই ফিরে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই তাঁর কাছে। রাজেশ বলেন, ‘‘সরকার চাল-ডাল দিচ্ছে। কিন্তু তা ছাড়াও অন্যান্য খরচ রয়েছে। ১০০ দিনের কাজ ছাড়া এখানে আর কোনও কাজের সুযোগ নেই। অমদাবাদে আমার দোকান রয়েছে। একটা ঘর ভাড়া নিয়ে দোকান চালাই। দোকান বন্ধ থাকলেও ভাড়া দিতেই হচ্ছে। ফিরে না গেলে ভাড়া মেটাব কী করে?’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy