ছবি: সংগৃহীত।
হাতে সময় কম। করোনাভাইরাসের দু’টি ভারতীয় সম্ভাব্য টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ তাই কার্যত একই সঙ্গে চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। শীঘ্রই শুরু হবে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা, খাতায়-কলমে যাতে অন্তত ছয় থেকে ন’মাস লাগার কথা। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন আজ দাবি করলেন, ভারত বায়োটেকের টিকা তৈরি হয়ে যাবে ডিসেম্বরের মধ্যেই। সেই গতিতেই কাজ এগোচ্ছে। নতুন বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যে ওই টিকা দেওয়ার কাজও শুরু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বর্ধন জানান, শুরুতে স্বাস্থ্যকর্মী ও জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের ওই টিকা দেওয়া হবে। পরবর্তী ধাপে বয়স্কদের টিকা দেওয়ার মাধ্যমে আমজনতার টিকাকরণও আরম্ভ হবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষা এত কম সময়ে হলে ভারত কি রাশিয়ার পথেই হাঁটবে না? তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা ব্যর্থ হলে ডিসেম্বরে টিকা আসবে কি? গবেষকদের বদলে মোদী সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এমন নিশ্চিত ঘোষণা করেনই বা কী ভাবে?
ভারতের বাজারে আসার দৌড়ে রয়েছে মূলত তিনটি সংস্থার সম্ভাব্য টিকা। দু’টি ভারতীয় সংস্থার তৈরি— ভারত বায়োটেকের ‘কোভ্যাক্সিন’ এবং জ়াইডাস ক্যাডিলার ‘জাইকভ-ডি’। তৃতীয়টি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কোভিশিল্ড’, ভারতে যার উৎপাদন, গবেষণা ও প্রয়োগের বিষয়টি দেখছে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। বিদেশি সংস্থার টিকা বাজারে ছাড়তে হলে অন্তত তৃতীয় ধাপের পরীক্ষাটি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উপরে করার নিয়ম রয়েছে। কোভিশিল্ডের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে। সিরাম জানিয়েছে, সব ঠিক থাকলে নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যেই ওই টিকা আসবে।
আরও পড়ুন: ‘শপিং মল খোলা, শুধু ধর্মে আপত্তি’, প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির
আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহেই মোদীর জন্য ‘এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান’
ভারত বায়োটেক ও আইসিএমআরের যৌথ উদ্যোগে তৈরি কোভ্যাক্সিন মানবদেহে প্রয়োগের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষা শেষের মুখে। সেপ্টেম্বর থেকেই তৃতীয় পর্যায় শুরু হতে চলেছে। আমদাবাদের সংস্থা জ়াইডাস ক্যাডিলার প্রথম-দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষাও শেষের পথে। সংস্থা সূত্রের খবর, সুরক্ষা ও কার্যকারিতার দিক থেকে সফল হয়েছে ওই ভ্যাকসিন। ২০২১ সালের গোড়ায় টিকা বাজারে আনার লক্ষ্য রয়েছে জ়াইডাস ক্যাডিলারও।
যত গন্ডগোল এই সময়সীমা নিয়েই। এর আগে ১৫ অগস্টের মধ্যে ভারত বায়োটেকের টিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন আইসিএমআর-এর ডিজি বলরাম ভার্গব। বিজ্ঞানীরা তখন বলেছিলেন, প্রথম ধাপে টিকার নিরাপত্তা, দ্বিতীয় ধাপে কার্যকারিতা দেখার পরে তৃতীয় ধাপে তা কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবকের উপরে প্রয়োগ করা হয়। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। একটি পর্ব শেষ হলে সেই রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে পরের পর্বে যেতে হয়। রিপোর্ট নেতিবাচক এলে তা করা যায় না। নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভি কে পলেরও বক্তব্য ছিল— যে কোনও গবেষণায় সাফল্যের সম্ভাবনা যতটা থাকে, ব্যর্থতার আশঙ্কা ততটাই। কিন্তু সূত্রের খবর, এর পরেও সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে ভার্গব বলেছেন, সরকার চাইলে এখনই দু’টি টিকাকে ছাড়পত্র দিতে পারে। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি আইসিএমআরের সঙ্গে জোট বেঁধে কি বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে ভারত বায়োটেক? ভ্যাকসিন নিয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘পরিকাঠামোগত সাহায্য ছাড়া বাড়তি কিছুই দেওয়া হচ্ছে না। চূড়ান্ত পর্যায়ের সাফল্য না-এলে টিকা বাজারে ছাড়া যায় না। ১৩০ কোটির দেশ ভারতে কোনও সংস্থার পক্ষে একা এত টিকা জোগানো অসম্ভব। তাই সরকারের লক্ষ্য, সুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দ্রুত টিকা বাজারে আনা।’’
টিকা তৈরিতে সিরামের হাত ধরেছে মার্কিন সংস্থা নোভাভ্যাক্স। ‘স্পুটনিক ভি’ টিকা তৈরিতে ভারতকে পাশে চায় রাশিয়াও। কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষা রাশিয়া ঠিকমতো করেনি বলে অভিযোগ ওঠায় তাদের টিকা নিয়ে দ্বিধায় দিল্লি। বিরোধীদের আশঙ্কা, তাড়াহুড়ো করলে একই রকম অভিযোগ ভারতের বিরুদ্ধেও উঠবে না তো? স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পরে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘দিনক্ষণ দেখে টিকা আবিষ্কার করা যায় না।’’
সরকারের একটি সূত্রের বক্তব্য, টিকা তৈরির প্রথম দুই ধাপে সাফল্যের অর্থ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া-হীনতা ও অ্যান্টিবডি তৈরির বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে যাওয়া। বাকি থাকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীতে প্রয়োগ। অতিমারির পরিস্থিতিতে অক্সফোর্ডের টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষাও কিন্তু অনেকটাই দ্রুত সারা হচ্ছে। ভাইরোলজিস্ট টি ভি বেঙ্কটেশ্বরনের মতে ২০২০ সালের মধ্যে এই টিকাগুলি জনগণের মধ্যে প্রয়োগের জায়গাতেই পৌঁছবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy