রবিবার হাসপাতালে ঢুকছেন শাহ।—ছবি পিটিআই।
দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই করোনায় আক্রান্ত! নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার কার্যত ‘নম্বর টু’ যিনি, সেই অমিত শাহ আজ নিজেই টুইট করে জানিয়েছেন, তিনি কোভিড পজ়িটিভ। ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে।
আজ বিকেল ৪টে ৪৩ মিনিটে অমিতের এই টুইটে নড়ে বসে গোটা দেশ। আর রাত সাড়ে ১১টায় কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা টুইটারে জানিয়ে দেন, কোভিড পজ়িটিভ তিনিও। ভাল আছেন, কিন্তু চিকিৎসকদের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এ দিকে, আজই করোনা ধরা পড়েছে তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল বনওয়ারিলাল পুরোহিতের।
গত বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অমিত শাহ। আগামী বুধবার দুপুর ১২টা বেজে ১৫ মিনিটে অযোধ্যায় রামমন্দিরের নির্মাণকাজের সূচনা হওয়ার কথা। আজ অমিতের করোনা-আক্রান্ত হওয়ার অর্থই হল, ওই দিন তিনি তো অযোধ্যায় উপস্থিত থাকতে পারবেনই না, উল্টে খোদ প্রধানমন্ত্রীরই যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। প্রশ্নের মুখে মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরাও। কারণ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এত দিন পরামর্শ দিয়ে এসেছে যে, করোনা-আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সংস্পর্শে যাঁরা গত তিন-চার দিনে এসেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের নিভৃতবাসে থাকা উচিত।
আরও পড়ুন: বুধবার বাড়ি গিয়েছিলেন অমিত, মোদী কি যাবেন নিভৃতবাসে?
আজ বিকেলে অমিত টুইটারে লেখেন, ‘‘আমি করোনা-আক্রান্ত। চিকিৎসকদের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছি।’’ তার পরেই তিনি ভর্তি হন দিল্লির উপকণ্ঠে গুরুগ্রামের মেদান্ত হাসপাতালে। তাঁর দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন সুশীলা কাটারিয়ার নেতৃত্বে চিকিৎসকের একটি দল। যাঁরা দীর্ঘ দিনের (ক্রনিক) অসুখের শিকার, তাঁদের গোড়া থেকেই সাবধানে থাকতে বলছেন চিকিৎসকেরা। অমিত দীর্ঘদিন যাবৎ ডায়াবিটিসে ভুগছেন। ফলে তাঁর শারীরিক অবস্থার দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি লাইপোমা অপারেশন হয় তাঁর। ভোটের আগে অমিত প্রায় কুড়ি কেজি ওজনও কমিয়েছিলেন।
অমিতের গতিবিধি
• ১ অগস্ট: বালগঙ্গাধর তিলকের জন্মদিবসের অনুষ্ঠান, সঙ্গে সাংসদ বিনয় সহস্রবুদ্ধে
• ৩১ জুলাই: বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, নিশীথ প্রামাণিক, বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে সাক্ষাৎ
• ২৯ জুলাই: কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক, হাজির নরেন্দ্র মোদী, রাজনাথ সিংহ, নির্মলা সীতারামনরা
• ২৪ জুলাই: হরিয়ানার বিজেপি সভাপতি ওম প্রকাশ ধনখড়ের সঙ্গে বৈঠক
• ২৩ জুলাই: গুজরাতের বিজেপি সভাপতি সি আর পাটিলের সঙ্গে বৈঠক
• ২৩ জুলাই: কয়লা মন্ত্রকের বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠান, সঙ্গে কয়লা মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী
• ২২ জুলাই: লালকৃষ্ণ আডবাণীর বাসভবনে তাঁর সঙ্গে বৈঠক, সঙ্গে বিজেপি নেতা ভূপেন্দ্র যাদব
• ২০ জুলাই: বাবুল সুপ্রিয়, দেবশ্রী চৌধুরী, স্বপন দাশগুপ্ত, রাজু বিস্তের সঙ্গে বৈঠক
• ২০ জুলাই: পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে বৈঠক গত কয়েক দিনে আরও যাঁদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে: বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত, স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভল্লা, মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ আমলা
তিনি করোনা-আক্রান্ত জানানোর সঙ্গেই টুইটে আরও একটি বার্তায় অমিত অনুরোধ করেন যে, গত কয়েক দিনে যাঁরা তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁরা যেন পক্ষকাল নিভৃতবাস করেন। অমিত গত কয়েক দিনে যাঁদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। অমিতের পরামর্শ মানলে ঝুঁকি না-নিয়ে প্রধানমন্ত্রীরও নিভৃতবাসে যাওয়া উচিত। কারণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনিও ছিলেন।
তবে কি নরেন্দ্র মোদীও কোয়রান্টিনে যাচ্ছেন? এই প্রশ্নই রাত থেকে ঘুরপাক খাচ্ছে দিল্লির রাজনৈতিক মহলে।
कोरोना के शुरूआती लक्षण दिखने पर मैंने टेस्ट करवाया और रिपोर्ट पॉजिटिव आई है। मेरी तबीयत ठीक है परन्तु डॉक्टर्स की सलाह पर अस्पताल में भर्ती हो रहा हूँ। मेरा अनुरोध है कि आप में से जो भी लोग गत कुछ दिनों में मेरे संपर्क में आयें हैं, कृपया स्वयं को आइसोलेट कर अपनी जाँच करवाएं।
— Amit Shah (@AmitShah) August 2, 2020
বস্তুত, গত কাল থেকেই করোনার একের পর এক বড় ধাক্কা চলছে বিজেপি শিবিরে। গত কাল উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী কমল রানি বরুণ কোভিড-আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আজ উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সভাপতি স্বতন্ত্র দেব সিংহ এবং উত্তরপ্রদেশের জলসম্পদ মন্ত্রী মহেন্দ্র সিংহের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। মন্ত্রী কমল রানির মৃত্যুতে এ দিনের অযোধ্যা যাত্রা বাতিল করেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। অযোধ্যায় রামলালার অস্থায়ী মন্দিরের সহকারী পুরোহিত আগেই করোনা-আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেখানকার ১৬ জন পুলিশকর্মীও করোনা আক্রান্ত। অথচ বুধবার রামের জন্মক্ষণ অভিজিৎ লগ্নে মোদীর হাতেই মন্দিরের ভূমিপুজো হওয়ার কথা! বিশেষজ্ঞদের মতে, অমিত যেমন নিজের করোনা সংক্রমণের কথা না-লুকিয়ে প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, তেমনই মোদী যদি নিয়ম মেনে নিভৃতবাসে যান, সে ক্ষেত্রে দেশবাসীর সামনে দৃষ্টান্তস্থাপন হবে। আর না-গেলে প্রশ্ন তুলবেন বিরোধীরা। ফলে রীতিমতো জোড়া অস্বস্তির মুখে বিজেপি। সরকারের যুক্তি, মন্ত্রিসভার বৈঠকে পারস্পরিক দূরত্ব ও সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়েছিল।
আজ অমিতের আরোগ্য কামনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাহুল গাঁধী। কিন্তু মোদী আজ রাত পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে চুপ। আজ সকালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীকে তিনি জন্মদিনের অভিনন্দন জানিয়েছেন, দুপুরে শোক জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রীর মৃত্যুতে। বিকেলে অমিতের টুইটের পরে দেশের প্রায় সব নেতা টুইট করে ফেললেও রাত পর্যন্ত মোদী নীরবই। দিল্লিতে করোনা-নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমে কাজ করেছিলেন অমিত। মূলত তাঁর হস্তক্ষেপের পরেই দিল্লিতে সংক্রমণের হার কমতে শুরু করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে মন্ত্রিসভার বৈঠক ছাড়াও লাদাখ পরিস্থিতি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে নিজের মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করেছেন তিনি। দিন দশেক আগে গিয়েছেন নবতিপর নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর বাড়িতে। ওই সময়েই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে নালিশের বহর নিয়ে তাঁর কাছে গিয়েছিলেন বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা দু’দিন আগেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে আলোচনা করতে হাজির হয়েছিলেন অমিতের বাসভবনে। এঁদের অনেকেই অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শ মেনে নিভৃতবাসে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
করোনা-আবহে রামমন্দিরের ভূমিপুজো করা উচিত কি না, তা নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছিল। গোটা দেশে মোদী সরকার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাবেশের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, অযোধ্যার ভূমিপুজো কী ভাবে ছাড় পায়? সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘দেশের করোনা পরিস্থিতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সংক্রমণ ও উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রীর মৃত্যু স্পষ্ট বোঝাচ্ছে পরিস্থিতি ঠিক নেই।’’ তবে কাল প্রস্তুতি দেখতে যোগী অযোধ্যা যাবেন বলে জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন।
সুস্থ হয়ে এ দিনই মুম্বইয়ের নানাবতী হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন বলিউডের অমিত, অমিতাভ বচ্চন। সেই দিনেই করোনা সংক্রমণে হাসপাতালে ভর্তি হলেন রাজনীতির অমিত। সব মিলিয়ে বিজেপির মন্দির কর্মসূচির সামনে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন ‘করোনাসুর’ই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy