প্রতীকী ছবি।
করোনার দু’টি টিকাকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের ছাড়পত্র দেওয়ার দশ দিনের মধ্যেই দেশে গণ-টিকাকরণ শুরু করতে সরকার সক্ষম বলে দাবি করলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ।
গত রবিবার, ৩ জানুয়ারি কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন টিকাকে ছাড়পত্র দিয়েছিল ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)। স্বাস্থ্যসচিবের কথা অনুযায়ী, তার দশ দিন পরের তারিখ ১৩ জানুয়ারি। তবে শাসক শিবিরের সূত্রের মতে, টিকাকরণের মতো ‘শুভ কাজ’ মকর সংক্রান্তির পরে করার পক্ষপাতী উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। মকর সংক্রান্তি পড়েছে ১৪ জানুয়ারি। আবার পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ১২ জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে টিকাকরণ শুরু করারও পক্ষপাতী বিজেপির একাংশ।
ব্রিটেন ও আমেরিকায় প্রতিষেধক জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্র পাওয়ার দু’-তিন দিনের মধ্যে টিকাকরণ শুরু হয়ে গিয়েছিল। গত রবিবার ডিসিজিআই জোড়া প্রতিষেধককে ছাড়পত্র দেওয়ার পর থেকেই গণ-টিকাকরণ অভিযান শুরুর দিন নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। আজ সেই জল্পনার অনেকটাই অবসান ঘটিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাপ্তাহিক সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব জানান, ‘‘জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্র পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যেই দেশে টিকাকরণ শুরু করার পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে।’’
একাধিক বার জানতে চাওয়া হলেও অবশ্য আজ টিকাকরণ শুরুর কোনও নির্দিষ্ট দিনক্ষণ স্পষ্ট করে জানাতে চাননি স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এই শীর্ষ কর্তা। যোগী আদিত্যনাথ ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন, তাঁর রাজ্য-সহ গোটা দেশে সংক্রান্তির পরেই টিকাকরণ শুরু হবে। মকর সংক্রান্তির দিনে অশুভ শক্তির বিনাশ হয়ে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বলে বিশ্বাস রয়েছে। বিজেপির একাংশের মতে, এখন ‘খর মাস’ চলছে। কোভিড অতিমারির হাত থেকে পরিত্রাণের জন্য সংক্রান্তির দিনটিকেই বেছে নিতে পারে কেন্দ্র। অবশ্য বিজেপিরই একটি অংশ মনে করছে, ১২ জানুয়ারি থেকে গণ-টিকাকরণ শুরু করলেও করতে পারে সরকার। ওই দিন যুব দিবস, স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন। ভোটমুখী বঙ্গবাসীকে বার্তা দিতে ওই দিন থেকে টিকাকরণ শুরু করার একটি ভাবনা-চিন্তাও দলের অন্দরে রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের মতে, বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকাকরণ অভিযান শুরু করার জন্য কোন দিনটিকে বেছে নেওয়া হবে, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই।
আরও পড়ুন: নিয়ম মেনেই সম্মতি, টিকা নিয়ে ফের অভয় কেন্দ্রের
প্রাথমিক ভাবে মোট তিরিশ কোটি দেশবাসীর টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্র। এঁদের মধ্যে এক কোটি স্বাস্থ্যকর্মী, দু’কোটি ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার (পুরকর্মী, পুলিশ, সেনা, আধাসেনা ইত্যাদি) ও ২৭ কোটি বয়স্ক নাগরিক। এক কোটি স্বাস্থ্যকর্মীর তথ্য রাজ্যগুলির কাছ থেকে কেন্দ্রের কাছে ইতিমধ্যেই চলে এসেছে। রাজ্যগুলিতে কাজ চলছে পরবর্তী দু’কোটি
টিকা-প্রাপকদের নাম সংগ্রহের। পশ্চিমবঙ্গে আজ টিকা বণ্টন নিয়ে সব জেলাশাসক এবং বিভিন্ন দফতরের সচিবদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, যে কোনও সময়েই টিকাকরণের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে পারে কেন্দ্র। ফলে আগে থেকে কেন্দ্রের নির্দেশিকা মেনে প্রাপকদের অগ্রাধিকার-তালিকা তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এ দিন। সূত্রের বক্তব্য, স্বাস্থ্যকর্মীদের পরের পর্যায়ে পুলিশকর্মী ও পুরকর্মীদের পাশাপাশি সাফাইকর্মী, জেলকর্মী, হোমগার্ড, সিভিক ভলান্টিয়ার, রাজস্ব-কর্মীরা টিকা পাবেন বলে আগেই জানিয়েছিল কেন্দ্র। ফলে তাঁদের নামের তালিকা তৈরির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সব জেলাশাসক এবং আধিকারিককে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। রাজ্য-কর্তারা মনে করছেন, তথ্যভাণ্ডার এবং অগ্রাধিকার-তালিকা তৈরি থাকলে টিকা হাতে এলেই কাজ শুরু করে দেওয়া সম্ভব হবে।
২৭ কোটি প্রবীণকে কী ভাবে চিহ্নিত করা হবে, তা ঠিক করতে একটি কমিটি তৈরি করেছে কেন্দ্র। প্রবীণদের মধ্যেও যাঁরা বিভিন্ন ‘ক্রনিক’ রোগে আক্রান্ত, তাঁরা টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের মাপকাঠি কী হবে, তা ঠিক করবে কমিটি। আজ নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভি কে পল বলেন, ‘‘কিসের ভিত্তিতে প্রবীণদের চিহ্নিত করা হবে, সেই রিপোর্ট খুব দ্রুত জমা দেবে কমিটি। তবে জুলাই মাসের মধ্যে তিরিশ কোটি দেশবাসীর টিকাকরণ সেরে ফেলার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy