গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
‘ফেক নিউজ’, গুজব ছড়ানো রুখতে এবার ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’ প্রযুক্তিই তুলে দিতে চাইছে কেন্দ্র। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ধারা পরিবর্তন করে এই অংশ জুড়তে চায় মন্ত্রক। ইতিমধ্যেই নয়া আইনের খসড়া তৈরি হয়েছে। একপ্রস্ত আলোচনা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গেও। কিন্তু তাদের কাছে তেমন সাড়া মেলেনি। তাই এবার আম জনতার মতামতকেই হাতিয়ার করতে চাইছে কেন্দ্র, মত ওয়াকিবহাল মহলের। যদিও কেন্দ্রের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার এবং গুজব বা ভুয়ো খবর ছড়ানো রুখতেই কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ।
কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৭৯ নম্বর ধারায় নয়া খসড়ায় বলা হয়েছে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলিকে স্বয়ংক্রিয় এমন ব্যবস্থা অন্তর্ভূক্ত করতে হবে, যাতে সন্দেহজনক বা বেআইনি ‘কনটেন্ট’ চিহ্নিত করা যায়। শুধু তাই নয়, ইচ্ছে করলেই যাতে সেগুলি মুছে বা নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া যায়, সেই ব্যবস্থাও প্রয়োগ করতে হবে। মন্ত্রকের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘২০১৮ সালে বেশ কয়েকটি কিছু গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তার বেশিরভাগেরই উৎস গুজব বা ভুয়ো খবর, যেগুলি ফেসবুক, হোয়াটস্অ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছিল।’’ কিন্তু এই সব ফেক নিউজ কোথা থেকে বা কে ছড়িয়েছিল, তা জানা যায়নি ওই ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’ প্রযুক্তির জন্যই।
তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’ হল এমন এক কম্পিউটার কোডিং পদ্ধতি, যাতে শুধুমাত্র প্রাপক এবং প্রেরকই নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান করা মেসেজ বা তথ্য দেখতে পারেন। ওই কোড ব্রেক করতে না পারলে সেই মেসেজ অন্য কারও পক্ষে দেখা বা হাতে পাওয়া সম্ভব নয়, এবং ওই কোড ব্রেক করা কার্যত অসম্ভব।
আরও পড়ুন: পর্ন সাইট রুখতে গিয়ে খাল কেটে কুমির ডেকে আনল কেন্দ্র?
এবার এই প্রযুক্তি বন্ধ করতে নয়া আইন আনতে চায় কেন্দ্র। তার জন্য শুক্রবারই ওই আইনের খসড়া নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্র। ছিলেন গুগল, ফেসবুক, হোয়াটস্অ্যাপ, অ্যামাজন, ইয়াহু, টুইটার, শেয়ার চ্যাট-এর মতো তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার পাশাপাশি সেবি এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার সংস্থাগুলির প্রতিনিধিরা ছিলেন ওই বৈঠকে। সংস্থাগুলিকে আগামী ৭ জানুয়ারি ফের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে বলা হয়েছে। তার পর ১৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
একটি সূত্রে খবর, ওই বৈঠকে হোয়াটস্অ্যাপ কর্তৃপক্ষ স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, তারা এই প্রযুক্তি তুলে দিতে চায় না। কারণ সেটা বন্ধ করলে এই মেসেজিং অ্যাপের স্বতন্ত্রতা এবং গ্রাহকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হবে। কারণ এই ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’ প্রযুক্তিই তাদের অ্যাপের ইউএসপি। যদিও কেন্দ্রের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেটা সম্ভব না হলে, কোন সূত্র থেকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তার উৎস জানানোর প্রযুক্তি তৈরি করতে হবে। মার্ক জাকারবার্গের সংস্থা জানিয়েছে, ‘‘ফেক নিউজের উৎস খোঁজার প্রযুক্তি তাঁরাও তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।’’ অন্য সংস্থাগুলির তরফেও তেমন সাড়া মেলেনি বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: জিএসটি শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব! দাবি জেটলির, শীতঘুম ভাঙল মোদীর, খোঁচা কংগ্রেসের
নয়া আইন লাগু হওয়ার পর সরকার মাসিক নোটিফিকেশন ব্যবস্থা চালু করতে চায়। অর্থাৎ মাসে মাসে ব্যবহারকারীদের নোটিস পাঠিয়ে সতর্ক করা হবে। কোনও ভুয়ো খবর, গুজব বা আপত্তিকর কোনও তথ্য ছড়ালে তার উৎস খুঁজে বের করে তাঁকে আলাদা করে নোটিস পাঠানো হবে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তার জবাবদিহি বা উত্তর দিতে হবে ব্যবহারকারীকে।
আগেও এ নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। এই এন্ড-টু এন্ড এনক্রিপশন তুলে দেওয়া আদপে বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা— তিনটিরই পরিপন্থী। নয়া এই আইন চালুর উদ্যোগ শুরু হতেই সেই বিতর্ক আরও জোরালো হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে পক্ষে-বিপক্ষে সওয়াল। এবার সেই সোশ্যাল মিডিয়াতেই মতামত জানতে চাইছে কেন্দ্র।
তবে কেন্দ্রের তরফে আশ্বস্ত করা হয়েছে, সরকার নাগরিকদের বাক স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তা রক্ষায় বদ্ধপরিকর। কিন্তু এই সোশ্যাল মিডিয়াকেও অন্তত কিছুটা দায়বদ্ধ হতে হবে যেন, এর মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, অপরাধ বা উত্তেজনায় ইন্ধন না দেওয়া হয়। তা ছাড়া, দুষ্কৃতী, জঙ্গিরাও এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নানা জঙ্গি দলে নিয়োগ, বিদ্বেষ-বিভেদমূলক তথ্য বা গুজব ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করছে।
কয়েক মাস আগে থেকেই এই নয়া আইন চালু করতে তৎপর হয়েছিল কেন্দ্র। তার মধ্যে দু’দিন আগেই কেন্দ্রীয় ১০টি তদন্তকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত কম্পিউটার ও মোবাইলের তথ্যে নজরদারির অধিকার দিয়েছে কেন্দ্র। বিরোধীরা তো বটেই আম জনতার মধ্যেও তা নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তার পর তথ্য প্রযুক্তির এই নয়া আইন চালুর আগে তাই সব পক্ষের মতামত দেখে নিতে চাইছে কেন্দ্র।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy