কুলদীপ সেঙ্গার। ছবি: পিটিআই।
নির্ভয়া কাণ্ডের সপ্তম বর্ষপূর্তি আজ। সেই ১৬ ডিসেম্বরেই বিচার পেলেন উন্নাওয়ের নির্ভয়া। এক দিন বিচার চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে গায়ে আগুন দিতে গিয়েছিলেন। ধর্ষণের পরে লাগাতার শাসাচ্ছিল বাহুবলী বিধায়ক। বাবাকে টেনে নিয়ে গিয়ে মারধর এবং পুলিশি হেফাজতে বাবার মৃত্যু, নম্বরপ্লেট কালো করা ট্রাকের ধাক্কায় নিজের চোখে দেখা দুই আত্মীয়ার মৃত্যু— তবু পিছু হটেননি নির্যাতিতা। আজ তাঁর সেই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েই উন্নাওয়ের অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় বিজেপি-বহিষ্কৃত বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারকে দোষী সাব্যস্ত করল দিল্লির তিসহাজারি আদালত। রায় শুনে নির্ভয়ার মা বললেন, ‘‘মেয়েটির শারীরিক অবস্থা যা-ই হোক না কেন, আশা করি, অপরাধীরা দোষী সাব্যস্ত হওয়ার রায় শুনে সে খুশি হবে।’’
ভারতীয় দণ্ডবিধি ও পকসো আইনের একাধিক ধারায় সেঙ্গারকে দোষী সাব্যস্ত করার পাশাপাশি আজ চার্জশিট পেশে অকারণে দেরি নিয়ে সিবিআই-কেও দুরমুশ করেন জেলা জজ ধর্মেশ শর্মা। তদন্ত চলাকালীন সিবিআইয়ের তরফে কেন কোনও মহিলা অফিসার ছিলেন না, নির্যাতিতার বাড়ি না-গিয়ে কেন তাঁকে বারবার সিবিআই অফিসে ডেকে পাঠানো হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। সাজা নিয়ে শুনানি শুরু বুধবার। চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ওই দিন যে-মহিলা নির্যাতিতাকে সেঙ্গারের বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই শশী সিংহকে অবশ্য বেকসুর খালাস করে দিয়েছে আদালত।
ধর্ষণের ঘটনার প্রায় দশ মাস পরে নির্যাতিতা যখন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে গায়ে আগুন দিতে গিয়েছিলেন, তখন, অর্থাৎ ২০১৮-র এপ্রিল থেকে জাতীয় সংবাদমাধ্যমে হইচই শুরু হয় উন্নাও মামলা নিয়ে। গ্রেফতার হয় সেঙ্গার। তবু আস্ফালন কমেনি তার। পুলিশ আর সিবিআইকে কটাক্ষ করেই তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘যারা খুশি তদন্ত করুক, আমার কিচ্ছু যায়-আসে না।’’ আজ রায় ঘোষণার পরে দেখা গেল, বোনের পাশে দাঁড়িয়ে কোর্টরুমেই চোখের জল ফেলছে বাহুবলী। আর শশী? বিচারক রায় পড়া শুরু করতেই মূর্ছা যান তিনি।
আরও পড়ুন: ভেবেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত নিরাপদ থাকব, বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন জামিয়ার পড়ুয়া
নির্যাতিতার বয়স কমিয়ে দেখানো হচ্ছে— গত ডিসেম্বরে এই মর্মে এফআইআর করে পকসো আইনের ধারা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল কুলদীপ। আজ দিল্লির আদালত জানাল, ঘটনার সময় নির্যাতিতা নাবালিকাই ছিলেন। রায় পড়তে গিয়ে বিচারক বললেন, ‘‘অভিযোগকারিণী তাঁর যৌন নিগ্রহ নিয়ে যা বলেছেন, তার মধ্যে সত্যতাই পেয়েছি। কোনও অসঙ্গতি নেই।’’
ঘটনার শুরু, ২০১৭-র ৪ জুন। নির্যাতিতা তখন সদ্য সতেরো। পড়শি শশী সিংহ কাজ দেওয়ার নাম করে নিয়ে যান বিধায়কের কাছে। অভিযোগ, শুধু কুলদীপ নয়। শশীর ছেলে এবং গাড়ির চালকও ধর্ষণ করে মেয়েকে পাঠিয়ে দিয়েছিল গ্রামের বাইরে। পরিবার পুলিশের কাছে গিয়ে মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগই দায়ের করে। চার দিন পরে মেয়ে উদ্ধার হওয়ার পর জানা যায় বাকিটা। বাঙ্গেরমউয়ের চার বারের বিধায়ক সেঙ্গারের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ নিচ্ছে না দেখে, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বাড়ির সামনে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন মেয়েটি। দেশ জুড়ে শোরগোল পড়তে গ্রেফতার করা হয় সেঙ্গারকে। তত দিনে আবার নির্যাতিতার বাবাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করে কুলদীপের ভাই অতুল এবং তার দলবল। পুরনো একটি মামলার সূত্রে তাঁকে পুলিশের হাতেও তুলে দেয়। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয় বাবার। এ বছরের জুনে অতুলেরই দায়ের করা ১৯ বছরের পুরনো মামলায় ১০ বছরের জেল হয়ে যায় নির্যাতিতার কাকারও। তার পর জুলাই মাসে রায়বরেলী জেলে কাকার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথেই নির্যাতিতার গাড়িকে ধাক্কা মারে ট্রাক।
তাঁদের প্রাণহানির আশঙ্কা যে রয়েছে এবং বিচার পেতে যে দেরি হচ্ছে, সে কথা জানিয়ে কিছুদিন আগেই সুপ্রিম কোর্টকে চিঠি লিখেছিলেন নির্যাতিতার মা। তাঁর আশঙ্কা এ ভাবে ‘সত্য’ হয়ে ওঠার পরে সক্রিয় হয় সুপ্রিম কোর্ট। কুলদীপের বিরুদ্ধে মোট ৫টি মামলা লখনউ থেকে দিল্লিতে সরিয়ে আনা হয়। প্রতিদিন শুনানি চালিয়ে ৪৫ দিনের মধ্যে বিচারপক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। বাকি চারটি মামলার শুনানি চলছে।
আজ সেঙ্গারকে কোর্টরুম থেকে বার করার সময় ভিড়ের মধ্যে হুল্লোড় পড়ে যায়। দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও উন্নাও এলাকায় দাপট কমেনি কুলদীপের। ক’দিন আগেও তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান উন্নাওয়ের সাংসদ সাক্ষী মহারাজ। আজ কংগ্রেসের প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার প্রশ্ন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আজও চুপ?’’ জনৈক নেটিজ়েন নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে টুইট করলেন— ‘‘আপনার প্রাক্তন দলীয় সহকর্মীকে নিয়ে কিছু তো বলুন!’’ উত্তরে স্মৃতি লিখলেন, ‘‘ধর্ষণের ঘটনায় কারও পাশে দাঁড়াব— এটা ধরে নেওয়াটা জঘন্য ব্যাপার। সে যে দলেরই হোক। আইন যে তার কাজ করেছে, তাতেই কৃতজ্ঞ বোধ করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy