চিন্তিত এনআরসি-ছুট মমতা হাজং। নিজস্ব চিত্র
মাটিয়ার জেলখানাই আপাতত রুজির ব্যবস্থা করছে। টানছে সংসার। আবার এই জেলই হয়তো ঘর ভাঙবে মমতা আর অমিত হাজংয়ের।
গত বছর ১৮ ডিসেম্বর ‘ডিটেনশন সেন্টার’ তৈরির কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছিল মাটিয়ায় দলগোমার কপি খেতে। আর সে দিনই কপাল ঠুকে প্রবেশপথের সামনে দরমার ছাউনি দিয়ে দোকান খুলে ফেলেন অমিত-মমতা। তখনও জানতেন না, চূড়ান্ত এনআরসি থেকে মমতা নিজেই বাদ পড়বেন। উথলে ওঠা দুধে এক মুঠো চা পাতা ফেলে দিয়ে মমতা বলেন, “অনেক শ্রমিক, অফিসারের আনাগোনা শুরু হল। দোকানও জমে উঠল। এনআরসি শুনানিতে বার কয়েক গিয়েছিলাম। বলেছিল, চিন্তা কিসের। কিন্তু ৩১ অগস্ট সব উল্টোপাল্টা হয়ে গেল।” স্বামী, সন্তান, মায়ের নাম থাকলেও তাঁর নামের পাশে লেখা, ‘রিজেক্টেড’।
শরণার্থী শংসাপত্র, অন্য যা কিছু প্রমাণ ছিল—সব সম্বল করে এনআরসিতে পরিবারের নাম ঢোকাতে আবেদন করেছিলেন অমিত। বলেন, “বৌকে যদি এই জেলে ঢুকিয়ে দেয়, পরিবার ভেসে যাবে। আমি আদালতে দৌড়ব, না ছোট ছোট ছেলেমেয়ের দেখভাল করব।” তিলে তিলে চোখের সামনে তৈরি হচ্ছে ঘরগুলো। আর বুকের মধ্যে হাতুড়ি পেটার শব্দ পাচ্ছেন মমতা। এখন যে চার দেওয়ালের বাইরে সকলের মুখে চা-মিঠাই জোগাচ্ছেন, ক'দিন পরে হয়তো তার ভিতরেই ঠাঁই হবে তাঁর।
এ দিকে, গত ডিসেম্বর থেকেই সরকারের তরফে তাড়া দেওয়া হচ্ছে, যাতে অন্তত ১০০০ জনকে রাখার ব্যবস্থা জলদি করা যায় মাটিয়ায়। তবে ঠিকাদারদের বক্তব্য, কাজে দেরি হবে। কারণ, সরকারি টাকা নিয়ম মতো আসে না। নেই বিদ্যুৎ সংযোগ, জলের লাইন, নর্দমা। অন্যতম সরবরাহকারী চন্দন কলিতা জানান, কারাগারের কংক্রিট দেওয়ালের জন্য স্ল্যাব আনতে হবে বড় ট্রেলারে। কিন্তু কাঠের সেতু দিয়ে ট্রেলার আসতে পারবে না। তাই জঙ্গল সাফ করে রাস্তা তৈরি করতে হবে।
চিফ ইঞ্জিনিয়ার রবীন্দ্র দাস জানান, ‘ডিটেনশন সেন্টারের’ বাইরে থাকবে অফিসারদের তিনটি, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের একটি আবাস। অদূরে হাইস্কুল। তৈরি হবে ৫০ হাজার লিটারের জলের ট্যাঙ্ক, নিরাপত্তা কর্মীদের ব্যারাক। আলাদা ব্যবস্থা প্রসূতি, অসুস্থ ও মায়েদের জন্য। বাবা-মায়ের সঙ্গে শিবিরে থাকা বাচ্চাদের জেলের মধ্যে প্রাথমিক স্কুলে ও পরে বাইরের স্কুলে পড়ানো হবে।
রাজ্য সরকারের তরফে আরও ১০টি ‘ডিটেনশন সেন্টার’ গড়ার প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রে। তবে ১১টি কেন্দ্র হলেও সর্বাধিক ৩৫ হাজার মানুষের জায়গা হবে। বাকিরা কোথায় থাকবেন? জবাব নেই এখনও।
মালতী হাজং অবশ্য ভবিষ্যতে কী হবে, তার জবাব হাতড়াতে রাজি নন। তালিকায় তাঁর নাম থাকলেও মেয়ে শেফালির নাম বাদ। মা জানান, মেয়ের বার্থ সার্টিফিকেট ছিল না। সেইসঙ্গে এ-ও বলেন, ‘‘এই সব ভেবে বসে থাকলে তো পেট চলবে না। তাই এখানে রোজ কাজ করছি। মা-মেয়ে মিলিয়ে দিন প্রতি ৫০০ টাকা করে যত দিন ঘরে আসছে, সেটাই লাভ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy