Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

এ শুধুই ভোট রাজনীতি! দাবি ক্ষুব্ধ ল বোর্ডের

কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধের তকমা দিতে মোদী সরকারের অধ্যাদেশকে ‘রাজনৈতিক গিমিক’ আখ্যা দিল মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০৪
Share: Save:

কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধের তকমা দিতে মোদী সরকারের অধ্যাদেশকে ‘রাজনৈতিক গিমিক’ আখ্যা দিল মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড।

মুসলিমদের এই সংগঠন সুপ্রিম কোর্টে দাবি তুলেছিল, আদালতের এ বিষয়ে নাক গলানো উচিত নয়। মুসলিম সমাজই তাৎক্ষণিক তিন তালাক বন্ধের ব্যবস্থা নেবে। আজ মোদী সরকার তিন তালাক বন্ধ করতে তিন বছরের জেলের শাস্তির অধ্যাদেশ জারির পরে সর্বভারতীয় মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মহিলা শাখার নেত্রী আসমা জেহরা বলেন, ‘‘এই অধ্যাদেশ সরকারের ব্যর্থতা। সিলেক্ট কমিটি হল না। রাজ্যসভায় আলোচনা হল না। বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হল না। এতে মহিলাদের কোনও নিরাপত্তা মিলবে না। এটি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে।’’ একে পুরোটাই ভোটে ফায়দা তোলার চেষ্টা বলে আখ্যা দিয়েছে পার্সোনাল ল বোর্ড।

আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ দাবি করেছেন, মুসলিম মহিলাদের অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েই এই অধ্যাদেশ জারি হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে বিজেপি আগামী বিধানসভা ভোট ও লোকসভা ভোটে যথেষ্ট সংখ্যক মুসলিমদের, বিশেষ করে মুসলিম মহিলাদের প্রার্থী করবে কি? সে প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে রবিশঙ্কর বলেন, ‘‘এর সঙ্গে রাজনীতিকে যুক্ত করা ঠিক নয়। এ’টি মহিলাদের সম্মানের প্রশ্ন।’’

খোঁচা অবশ্য এড়ানো যাচ্ছে না। সিপিআই(এম-এল)-এর নেত্রী কবিতা কৃষ্ণণের প্রশ্ন, ‘‘তিন তালাক প্রকৃত বিবাহ বিচ্ছেদ নয়। স্ত্রী-কে ছেড়ে চলে যাওয়া। সেই অপরাধে যদি মুসলিম পুরুষের শাস্তি হয়, তা হলে হিন্দু পুরুষের শাস্তি হবে না কেন?’’

আরও পড়ুন: তিন তালাক ফৌজদারি অপরাধ, অর্ডিন্যান্স জারি করল কেন্দ্র

তাঁর প্রশ্ন, সরকার আইন করছে, স্বামী তিন তালাক দিলে স্ত্রী-সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণের ভার নিতে হবে। আবার স্বামীকে জেলেও পাঠানো হচ্ছে। তা হলে তিনি রক্ষণাবেক্ষণের খরচা দেবেন কোথা থেকে? কংগ্রেসের প্রশ্ন, স্বামীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ব্যবস্থা আইনে নেই কেন? তিন তালাকের পর স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর অধিকারের বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্রর পাল্টা যুক্তি, ‘‘মুসলিম মহিলারা কি নিজের দায়িত্ব নিজেরা নিতে পারবেন না? স্বামীর উপরেই নির্ভর করতে হবে?’’ এমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়াইসির প্রশ্ন, ‘‘স্বামী জেলে থাকলে স্ত্রী-সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণের ভার কি মোদী সরকার নেবে?’’ তাঁর মতে, এই অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে ল বোর্ডের সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা উচিত। মহিলা অধিকার কর্মী শবনম হাসমির যুক্তি, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেই তিন তালাক অবৈধ হয়ে গিয়েছে। এখন তাকে আইন করে ফৌজদারি অপরাধের তকমার দেওয়ার পিছনে একমাত্র উদ্দেশ্য হল ধর্মীয় মেরুকরণ।’’

তিন তালাক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলাকারী ইশরাত জহান এই অধ্যাদেশকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘‘এত দিন পর্যন্ত মহিলাদের ভোগান্তি হত। এখন পুরুষদের এত মাথাব্যথা কেন হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।’’ মামলাকারী সংগঠন ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলনের নেত্রী জাকিয়া সোমান বলেন, ‘‘সর্বসম্মতিতে সংসদে সিদ্ধান্ত হলে ভাল হত। এ বার অন্তত সবাই সমর্থন করুন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE