Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Monsoon

A monsoon Story: ‘এক লড়কি ভিগি ভাগী সি’

মুখটা মাস্কে ঢাকা থাকলেও চোখদুটো ভীষণ চেনা লাগল রূপমের। এদিকে বৃষ্টি ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সংগৃহীত প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২২ ১৯:০৪
Share: Save:

অফিস থেকে বের হতে আজ বেশ দেরি হয়ে গিয়েছে রূপমের। বের হওয়ার সময়ে একগাদা ফাইল এসে ঢুকল। সেগুলো সেরে বের হতে যাবে ওমনি তেড়ে নামল বৃষ্টি। আর অপেক্ষা করল না রূপম। গায়ে বর্ষাতি চাপিয়ে হেলমেটটা নিয়ে নেমে এল পার্কিংয়ে। বাইক বের করে রওনা দিল বাড়ির উদ্দেশ্য়ে। ক্যামাক স্ট্রিট জায়গাটায় ভীষণ জল জমে বৃষ্টি হলেই। রাস্তাঘাট প্রায় শুনশান। হঠাৎ এক্সাইডে সামনে আসতেই একটা মেয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে দাঁড়ালো রূপমের বাইকের সামনে। এক ঝলক রূপমের মুখের দিকে তাকিয়ে সরি বলেই ফুটপাথে উঠে চলে গেল মেয়েটা। মুখটা মাস্কে ঢাকা থাকলেও চোখদুটো ভীষণ চেনা লাগল রূপমের। এদিকে বৃষ্টি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। বাইকটা সাইড করে রেখে একটা শেডের তলায় দাঁড়ালো রূপম। মেয়েটাও দাঁড়িয়ে আছে মেট্রোর গেটের ভিতর। ধীরে ধীরে রূপমও এগিয়ে গেল। মেয়েটার পাশে দাঁড়িয়ে থাকল কিছুক্ষণ। হঠাৎ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "পরমা না?" মেয়েটা কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ল যেন। ধীরে ধীরে মাস্কটা মুখ থেকে খুলে তাকাল রূপমের দিকে।

— “অনেক দিন পর দেখা হল। কেমন আছো রূপম দা?”

— “ভাল আছি। তুই?”

— “ভাল।”

বেশ কিছুক্ষণ আবার নীরবতা এসে দাঁড়াল দু’জনের মধ্যে। আট বছর পর আবার দেখা। পরমা তখন ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে সবে। আর রূপম তখন থার্ড ইয়ারে পড়ে। ইউনিয়নের তরফ থেকে আয়োজিত ফ্রেশার্সের অনুষ্ঠানে পরমার সঙ্গে রূপমের রোম্যান্টিক নাচের টাস্ক দেওয়া হয়। দু’জনে মিলে ‘প্যায়ার হুয়া ইকরার হুয়া’ তে নেচেছিল। সেই থেকেই আলাপ, বন্ধুত্ব, প্রেম এবং অবশেষে বিচ্ছেদ। তার পরে আর দেখা হয়নি দু’জনের। অবশেষে আট বছর পর এই বৃষ্টির মধ্যে মুখোমুখি দু’জন।

— “তুই কি এ’দিকে কোন কাজে এসেছিলি?”

— “হ্যাঁ। ধর্মতলার দিকে একটা কাজ ছিল। রাত হয়ে গেল ফিরতে। একটা বাস পেলাম এক্সাইড পর্যন্ত। এখান থেকে কী ভাবে বাড়ি ফিরব তাই ভাবছি।”

— “তোরা এখনও নিউ অলিপুরে থাকিস?”

— “না। ঠাকুরপুকুরে থাকি।”

— “ওহ বাহ। কবে গেলি?”

— “এইতো দু’বছর হল। তুমি এখনও বেহালাতেই থাকো?”

— “হ্যাঁ। আর কোথায় যাব বল!”

কথার বলতে বলতেই হঠাৎ ফোন বেজে উঠল রূপমের। ফোন ধরে বলল, “বৃষ্টিতে আটকে গেছি। বৃষ্টি থামলেই আসছি।”

— “ফোনে কী দেখছিস পারো? এই বৃষ্টিতে ক্যাব পাবি না।”

অনেক দিন পরে পুরনো চেনা নামটা শুনে একটু যেন চমকে উঠল পরমা। কোনওমতে সামলে নিয়ে বলল, “সত্যি যা বলেছ। দরকারে এদের পাওয়া যায় না।”

— “ঠাকুরপুকুর যাবি বললি তো? আমার সঙ্গে যেতে পারিস যদি অসুবিধা না হয়। আমি তো ওদিকেই যাব।”

— “না না থাক। তোমাকে আবার ঝামেলা নিতে হবে না। বৃষ্টি তো ধরে এসেছে। আমি ঠিক চলে যাব।”

— “আমার কোনও অসুবিধা নেই। তেমন হলে বেহালাতে নেমে যাস। ওখান থেকে অটো পেয়ে যাবি।”

পরমা ইতস্তত করছে দেখে রূপম বলে উঠল, “ভয় নেই। আট বছর হয়ে গিয়েছে পারো। তোর চেনা রগচটা, অল্পেতেই মাথা গরম করা রূপম দা আর নেই।”

একটু হেসে বাইকের পিছনের সিটে উঠে বসল পরমা।

বেহালা ট্রামডিপোর কাছে পৌঁছাতেই পরমা বলে উঠল, “আমাকে এখানেই নামিয়ে দাও রূপম দা।”

— “এখানে? কী করে যাবি?”

— “আমাকে নিতে এসেছে।”

— “কে?”

— “আমার বর।”

ইতিমধ্যেই একজন সুপুরুষ ব্যক্তি এগিয়ে এসেছে ওদের সামনে।

— “নমস্কার আমি শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। খানিক আগে পরমা মেসেজ করেই জানিয়েছিল হঠাৎ আপনার সঙ্গে দেখা হয়েছে। আপনার সঙ্গে ফিরছে জানিয়েছিল। আমিই বললাম এখানে নেমে যেতে। আমি চলে আসব বাইক নিয়ে। আপনার কথা অনেক শুনেছি পরমার মুখে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।”

— “না ঠিক আছে। একই দিকে আসতে হত আমাকে। তাই পারো, আই মিন পরমাকে এগিয়ে দিলাম। সাবধানে যাবেন।” বলেই বাইক স্টার্ট দিল রূপম। আবার বেজে উঠল ফোন। ব্লুটুথে ফোন রিসিভ করতেই ওই পাশ থেকে প্রশ্ন এল,

— “কী গো! কোথায় তুমি? এত রাতে হয়ে গেল। তুমি তো জানো তুমি না এলে তোমার মেয়ে কিছুতেই খেতে চায় না।”

— “এক্ষুনি আসছি।” বলে বউয়ের ফোনটা কেটে দিল রুপম। বাড়িতে তার মেয়ে অপেক্ষা করে আছে। আর দেরি করা ঠিক নয়।

এই প্রতিবেদনটি সংগৃহীত এবং 'আষাঢ়ের গল্প' ফিচারের অংশ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy