বৃষ্টির স্মৃতি রোমন্থনে তথাগত
এদিন এদিকে বৃষ্টি নেই...
হিসেব করতে পারি না আমি। তাই সফল ব্যবসায়ী নই। হতেও চাইও না। আমি তো নদীর শব্দ হতে ভালবাসি। জঙ্গলের চুপ ভালবাসি। পাহাড়ের থম ভালবাসি। ঢেউয়ের টান ভালবাসি। খাদের ঝুঁকি ভালবাসি। তোমার মত ভালবাসি। তাই ইকুয়েশন কীভাবে ভবিতব্যকে নিয়ন্ত্রণ করবে জানি না। তার আঁক কষে লাভও নেই। সময় তার পা মেপে রেখেছে। এই কথা ঠিক, আমি জীবনের কিছু অংশে স্বেচ্ছায় বাঁধা পড়েছি। যদিও শিকল নেই সেখানে। প্রবল বন্ধুত্ব আছে। ভালবাসা আছে নিজের গড়ে তোলা ছোট্ট রাজত্বের প্রতি। তবু আমি তোমাকে নিয়ে পাহাড়ে যেতে চাই। সমুদ্র মাখতে চাই, জঙ্গল শুনতে চাই। তাতে ইন্ধন যদি গোপনীয়তা হয়, তবে তাই হোক।
বাংলা সাল তারিখের খবর আমার আর রাখা হয় না। যেভাবে প্রথম চিঠির খবর রাখিনি। প্রথম প্রেমের একটা ডায়েরি ছিল। যাতে চিঠি লিখতাম। ভেব না তোমাকে অতীতের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছি। তুমি তোমার মতন করে এক্কেবারে নতুন — আনকোরা সত্যি,অভিজ্ঞতার মতন। আমার এ এক মস্ত সুবিধা যে স্মৃতি, মৃত্যু আমায় ভারী করে না। ছোটবেলার অভ্যেস। সামনাসামনি বলব একদিন। নিজেকে মাঝে মধ্যেই চমৎকার মনোবিজ্ঞানের কেস স্টাডি মনে হয়। স্মৃতিগুলো সব বইয়ে পড়া পাতার মতো।
কারও কারও সঙ্গে চেনা পরিচয়টা শতাব্দী পুরনো মনে হয়। মানুষটাকেও ভীষন চেনা লাগে। হয়ত একই দেখার আকাশ এক সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলাম কখনও। কোনও একটা সময়ের স্মৃতিতে আকাশে চাঁদ, তারা কিচ্ছু ছিল না। শুধু হাওয়া দিচ্ছিল হয়তো সেদিন। কোনও একটা গুহার বাইরে শুয়ে ছিলাম আমরা। আগুন প্রায় নিবু নিবু। পাশে পড়ে সকালে শিকার করে আনা বন্য শুয়োরের ছালটুকু। এবার আলাপ হলে আকাশে চাঁদ, সূর্য একই থাকবে। আর থাকবে আলো। একই ভূপ্রান্তের আলো। এক সঙ্গে সূর্যোদয়। এক সঙ্গে চাঁদ। এই বা কম কি!
এবার যখন বৃষ্টি হচ্ছে, তখন ভিজব ভেবেও ভেজা হয়নি। গতবারের কথা মনে পড়ছিল। সেবার একটা উত্তর কলকাতার ছাদের টবওয়ালা গাছগুলো কী ভীষন দুলছিল। কালবৈশাখী বোধ হয়। আমরা মাদুর ছেড়ে উঠিনি। একই ভাবে ছুঁয়ে গেছি দু’জন দু’জনকে। তার পরে তো বৃষ্টি এল। ভিজলেও গায়ে জল লাগেনি এতটুকু। তুমি কি এখনও ভেজো? কিলিমাঞ্জেরোর ওপরে কি বৃষ্টি হয়,নাকি শুধুই বরফ! তুমি যখন সোনালি ডানা মেলে সূর্য ঢেকে দাও, আমার ভীষন সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। আমাদের শহরে তো তখন মেঘ করেছে। ঘন কালো মেঘ। তখন বুঝতে পারি সোনালি ডানার ঈগল উড়ছে। কিলিমাঞ্জেরোর উপর দিয়ে উড়ছে। রোদ ঢেকে উড়ছে।
আমি ব্যস্ত থাকি। নানা কাজে ব্যস্ততার ভানে নিজেকে ডুবিয়ে রাখি। তবু জানো, মাঝরাতের দিকে জলে পা ডুবিয়ে হাঁটার শব্দ হয়। ঠিক খাটের পাশে। কোচিং থেকে ফেরার পথে চামড়ার জুতো জোড়া ছাতার ভেতর ঢুকিয়ে জমা জল মাড়িয়ে হাঁটছি দু’জন, ভিজছি দু’জন। তুমি এখনও ভেজো?
ফুটবলটা জলে যখন ভাসত মাঠে আমরা সবাই মিলে পা চালাতাম। জলে বলটা তখন গৌন হয়ে ভাসছে এদিক ওদিক। মাঠের কাদা গুলো ধুয়ে ফেলার পর হাত পা গুলো সাদাটে হয়ে যেত। আমি তোমার বাড়ির খাটের ওপর সপাটে পা’টা তুলে নির্লজ্জভাবে প্রমাণ করতাম আমিও বিকেলে চান করি। এক সঙ্গে কতদিন চান করিনি আমরা।
সমুদ্রে সেদিন লোক বেশি ছিল না। বৃষ্টির জন্যই বোধহয়! আমরা সাহসী ছিলাম। বুক জলে এক মাথা ঢেউ। শক্ত করে হাত ধরা। পা থেকে খালি বালি সরে যাচ্ছে। তুমি ভয় পাচ্ছিলে হারিয়ে যাওয়ার। হারাওনি আজও।এ বছর তোমার পাহাড়ে বৃষ্টি কেমন? যেবার ট্রেক করতে গিয়ে চুঙ্গি আর কোকোর সাথে ওই ভাঙা বাড়িটায় আটকে পড়লাম। মনে আছে, চুঙ্গি আর কোকো সেদিন ভিজেছিল। আমরা পারিনি ঠান্ডাতে। কুকুররা বরারবরই মানুষের চেয়ে বেশি ভালবাসতে জানে প্রকৃতিকে। সেদিন ঐ ছাউনিটাতে আমরা বৃষ্টির ছাট মেখেছিলাম শুধু।
তাই আর ভিজিনা আজকাল। জানো ছুটি আমি কোনওদিন তোমাকে পুরোপুরি পেয়ে উঠিনি। তুমি তো বারবার নানাভাবে এসেছ। আলাদা আলাদা জায়গাতে। আলাদা আলাদা শরীরে। তবে আমি ভাল পুরোটাই বেসেছি। যত বৃষ্টিই থাকুক না কেন।
এখন যখন মেঘ করে। তাকিয়ে আমি গল ফোর্টের জলছবি দেখতে পাই। সমুদ্রের ধারে তুমি আমি শুয়ে আছি। আমাদের চামড়া পুড়ছে। বাদামি চামড়া পুড়ছে। আমি জানি বৃষ্টিতেও পোড়া যায়।
ইতি- তোমার পুনশ্চ-ছুটি। এ তোমার একার গল্প নয়। এ আমার একার গোটা গল্প। যা আমি বার বার বেঁচেছি অন্য অন্য তুমির সঙ্গে। কিন্তু আমি জানি প্রতিবার তুমিই ছিলে যখন বৃষ্টি পড়ছিল। যখন আমরা ভিজছিলাম। বৃষ্টিতেই তো আমি বারবার ছুটি চেয়েছি। একটা রেনি ডে’র ছুটি। নিয়মভাঙা। তাই কাগজের নৌকো বানিয়ে, তার গায়ে লিখছি ভটভটি। তার পরে ভাসিয়ে দিচ্ছি কোনও একটা বৃষ্টির জলে। ভটভটি নামের একটা সিনেমা বানিয়েছি। সামনে রিলিজ,জানো তো! সেটাও তোমার আমার গল্প। বিশ্বাসের গল্প। যে গল্পে বৃষ্টিতেও কাগজের নৌকোরা ডোবে না।
এই প্রতিবেদনটি সংগৃহীত এবং ‘আষাঢ়ের গল্প’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy