শ্রীরামপুর যক্ষ্মা হাসপাতালের রোগমুক্তি হতে চলেছে।
ওয়ালশ হাসপাতালকে ‘সুপার স্পেশালিটি’ মানে উন্নিত করে এক ছাদের তলায় আনল রাজ্য সরকার। আপাতত ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। নতুন এই ব্যবস্থায় জেলা স্বাস্থ্য দফতর কার্যত হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন এই হাসপাতালে শ্রীরামপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে তো বটেই, সিঙ্গুর, হরিপাল, তারকেশ্বর-সহ জেলার নানা প্রান্ত থেকেও বহু রোগী চিকিৎসা করাতে আসেন। কিন্তু পরিষেবা নিয়ে তাঁদের অভাব-অভিযোগ রয়েছেই। পর্যাপ্ত শয্যার অভাবে অনেক রোগীকে মেঝেতেও শোয়ানো হয়। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই হাসপাতালকে ‘সুপার স্পেশালাটি’ স্তরে উন্নীত করার কথা ঘোষণা করেন। সেই মতোই এ বার সিদ্ধান্ত নিল স্বাস্থ্য দফতর।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এই মূহূর্তে ওয়ালশের শয্যাসংখ্যা ২৭০। বর্তমানে যেখানে মর্গ এবং রান্নাঘর রয়েছে, নতুন প্রকল্পে সেখানে ৩০০ শয্যার নতুন ভবন গড়া হবে। শয্যাসংখ্যা বাড়লে রোগীদের আর মেঝেতে শুতে হবে না। সেখানে রোগ-নিণর্র্য়ের ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে আধুনিক মানের অপারেশন থিয়েটার। ডায়ালিসিস ইউনিটেরও পরিকল্পনা রয়েছে। আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে চোখেরও যাবতীয় চিকিৎসা করা হবে। বর্তমান মর্গটিকে সরিয়ে আধুনিক মানের মর্গ তৈরি হবে। বিকল হয়ে পড়ে থাকা লিফ্টটি দ্রুত সারানোর চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া, ওই প্রকল্পের বাইরে বর্তমান অন্তবির্ভাগের পাশেই একটি দোতলা ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে ১২ শয্যার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) এবং ২০ শয্যার অসুস্থ নবজাতকদের পরিচর্যা কেন্দ্র (এসএনসিইউ) থাকবে। এ জন্য প্রায় দু’কোটি টাকা খরচ হবে।
হাসপাতালের সুপার ত্রিদীপ মুস্তাফি বলেন, “চুক্তি অনুযায়ী কাজ শুরুর ১৫ মাসের মধ্যে তা শেষ হওয়ার কথা। সেই অনুযায়ী ২০১৬ সালের মধ্যে সব কিছু চালু হয়ে যাবে বলে আশা করছি।” শ্রীরামপুরের চিকিৎসক-বিধায়ক সুদীপ্ত রায় বলেন, “গত কয়েক বছরে এখানকার সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অনেকটাই বদল ঘটাতে পেরেছি আমরা। নতুন প্রকল্প অনুমোদনও পেয়ে গিয়েছে। ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এর ফলে, সাধারণ মানুষকে আরও বেশি পরিষেবা দেওয়া যাবে।”
বর্তমান হাসপাতালটি রয়েছে ০.৯১ একর জমিতে। সুদীপ্তবাবু জানান, নতুন প্রকল্পে স্থানাভাব মেটাতে সংলগ্ন যক্ষ্মা হাসপাতালটিও ওয়ালশের সঙ্গে জুড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ফলে, যক্ষ্মা হাসপাতালের প্রায় আধ একর এলাকাও সংযুক্ত হয়ে যাবে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, দু’টি হাসপাতাল মিলে গেলে যক্ষ্মার জন্য আলাদা একটি বিভাগ রাখা হবে। হাসপাতালের পরিসীমার বাইরে নতুন ভবনের পাশে এক ব্যক্তি ২৩ কাঠা জমি দিতে চেয়ে রোগী কল্যাণ সমিতির কাছে গত সোমবার লিখিত প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। ত্রিদীপবাবু বলেন, “যক্ষ্মা হাসপাতালটি যুক্ত হলে এবং বাড়তি ২৩ কাঠা জমি পাওয়া গেলে জায়গার সমস্যা অনেকটাই মিটবে।”
তবে, ঝকঝকে ভবন বা আধুনিক যন্ত্রপাতি এলেই কি পরিষেবার চেহারা আমূল বদলানো যাবে? হাসপাতালের অন্দরেই কিন্তু সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
স্বাস্থ্য দফতরের তরফে অবশ্য হাসপাতালের কর্মসংস্কৃতির বেহাল অবস্থা পাল্টানোর চেষ্টা করা হয়েছে অতীতে। বছর খানেক আগে বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যেরা হাসপাতাল ঘুরে গিয়ে কড়া রিপোর্ট জমা দেন। তার পরেই ওয়ালশের তৎকালীন সুপারিন্টেন্ডেন্টকে উত্তরবঙ্গে বদলি করে দেওয়া হয়। কর্তব্যে গাফিলতি এবং স্বাস্থ্যকর্তাদের হয়রান করার অভিযোগে এক সঙ্গে বেশ কয়েক জন চিকিৎসককেও বদলি করে দেওয়া হয়। তার পরেও অবশ্য কিছু চিকিৎসকের সঠিক সময়ে হাসপাতালে উপস্থিত না হওয়ার ‘রোগ’ সারেনি বলেই হাসপাতাল সূত্রের খবর।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “হাসপাতালে কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে চেষ্টার কসুর করা হয়নি। রোগীদের তরফে নির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy