পরিকাঠামোগত অভাবের কারণ দেখিয়ে এ বছরেই রাজ্যে এমবিবিএসের ১১৯৫টি আসন বাতিলের সুপারিশ করেছিল মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)। কিন্তু গত ১৩ জুন দিল্লিতে সংস্থার কার্যকরী কমিটি জরুরি বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ রাজ্যের চারটি মেডিক্যাল কলেজে আপাতত ৪০০ আসন ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এর ফলে ১৬৫৫টি আসনে ছাত্র ভর্তি করা যাবে।
পশ্চিমবঙ্গে এমবিবিএসের কোনও আসনই যাতে বাতিল না হয়, তার জন্য দিল্লিতে দরবার করেছেন রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি, পেশায় চিকিৎসক সুভাষ সরকারও। শুক্রবার এ নিয়ে তিনি দেখা করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনের সঙ্গে। সে দিনই মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শনিবার এ ব্যাপারে হর্ষবর্ধন বলেন, “আসন ফেরানোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে এমসিআই-ই। কিন্তু রাজ্য যদি আমার কাছে আবেদন জানায়, তা হলে সব আসন ফেরানোর জন্য আমি এমসিআইকে অনুরোধ করব।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ কথা বললেও প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ এমসিআই কেন নরম মনোভাব নিল? তা হলে প্রাথমিক কড়াকড়ি কি লোক দেখানো? এমসিআইয়ের নৈতিকতা বিষয়ক (এথিক্যাল) কমিটির সদস্য সুদীপ্ত রায় বলেন, “রাজ্যের যে চারটি কলেজকে আসন ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলি দ্বিতীয় বার পরিদর্শন করেছিলেন কাউন্সিলের কর্তারা। পরিকাঠামোগত যে ফাঁকফোকরগুলি প্রথম বার চিহ্নিত করা হয়েছিল, সে সব পূরণ করা হয়েছে দেখেই ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি কলেজে এখনও দ্বিতীয় বার পরিদর্শন শেষ হয়নি বলে সেগুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।”
শুধুই কী তাই? না কি আসন বাতিলের সুপারিশের পরে এমসিআই মনে করছে, সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত হয়নি? ওই সংস্থার কার্যকরী কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, সারা দেশে ৫০ হাজার এমবিবিএস আসনের মধ্যে হাজার ষোলো আসন বাতিলের সুপারিশ যে বাস্তবসম্মত নয়, শুক্রবারের বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ ওঠে। তাতে অধিকাংশই একমত হন, খুব অল্প সংখ্যক শিক্ষক বা প্রয়োজনের তুলনায় কম ক্লাসঘরের মতো পরিকাঠামোগত ত্রুটি না থাকলে আসন আটকে রাখা ঠিক নয়। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটা হওয়ারই ছিল। এমসিআই যে ভাবে গোটা দেশের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আসন বাতিল করছিল, তা অবাস্তব। ধাপে ধাপে ওরা সব বাতিল আসনই ফেরত দেবে বলে আমাদের অনুমান।”
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শুক্রবারের জরুরি বৈঠকে এমসিআই যে ৪০০টি আসন ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলি হল দুর্গাপুর আই কিওর মেডিক্যাল কলেজের ১৫০টি আসন, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ৫০টি এবং মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হলদিয়া আই কেয়ার মেডিক্যাল কলেজের ১০০টি করে আসন। এমসিআই সূত্রের খবর, দুর্গাপুর আই কিওরের ব্লাড ব্যাঙ্কের লাইসেন্স ও রুরাল হেলথ ক্লিনিক ছিল না। ছিল না বাতানুকূল এক্স-রে ঘরও। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে হস্টেল, সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ও অপারেশন টেবিলের সংখ্যা নিয়ে আপত্তি ছিল তাদের।
একই ভাবে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে সেন্ট্রাল স্টেরিলাইজেশন ইউনিটে পরিকাঠামোর অভাব ও দুই শয্যার মধ্যে প্রয়োজনীয় দূরত্ব না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল এমসিআই। হলদিয়া আই কেয়ারে বিশেষ কিছু যন্ত্রের অভাব নিয়েও আপত্তি ছিল তাদের। এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “প্রথম বার পরিদর্শনে গিয়ে এমসিআইয়ের প্রতিনিধিরা ওই অভাবগুলি পূরণ করতে বলেছিলেন। পরবর্তী কালে কলেজ কর্তৃপক্ষ সেগুলির সন্তোষজনক সমাধান করায় তাঁদের আসন ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়ে দিয়েছে এমসিআই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy