আলমগঞ্জ এলাকায় যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে শুয়োর। নিজস্ব চিত্র।
উত্তরবঙ্গে এনসেফ্যালাইটিসের ভয়াবহ প্রকোপে শতাধিক মৃত্যু দেখে অনেকেরই মনে পড়ে গিয়েছে প্রায় তিন দশক আগেকার কথা। সে বারও জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপে বহু মৃত্যু হয়েছিল বর্ধমান ও লাগোয়া জেলাগুলিতে। এ বার পরিস্থিতি যাতে তেমন না হয় সে জন্য ইতিমধ্যেই কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
অধ্যক্ষ মঞ্জুশ্রী রায় বলেন, “গত বৃহস্পতিবার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে আমাদের চিকিত্সকদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলাম। সেখানে জেলার কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে কেউ ভর্তি হলে, তাঁকে তত্ক্ষণাত্ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যেই হাসপাতালে জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে প্রয়োজনে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস আক্রান্তদের জন্য ওয়ার্ড খোলা হবে। এছাড়া আইসিইউ-এ জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে গুরুতর আক্রান্তের জন্য একটি শয্যা সংরক্ষিত রাখার কথা বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি। মঞ্জুশ্রীদেবী বলেন, “রবিবারই স্বাস্থ্যভবন থেকে তাতে বলা হয়েছে, এত দিন আমরা প্রতি মাসের ১০ তারিখে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস সংক্রান্ত যে রিপোর্ট পাঠাতাম, এ বার থেকে তা প্রতিদিনই পাঠাতে হবে।”
পুরসভার তরফেও শহরের কিছু জায়গায় শুয়োর হঠাও অভিযান শুরু হয়েছে। আবার আলমগঞ্জ, ঝুরঝুরি পুল, সর্বমঙ্গলা পাড়া, স্টেশন রোড ইত্যাদি এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী নিজে শুয়োর হঠানোর কথা বলার পরেও অবাধে ঘুরছে শুয়োর। তবে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জাপানি এনসেফ্যলাইটিস বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই মূহুর্তে যদি আশপাশে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের বাহক কিউলেক্স বিশনোই প্রজাতির মশা সংখ্যায় বেশি না থাকে তাহলে, শুয়োরদের আটক বা অন্যত্র পাচার করে লাভ নেই। কারণ জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের আরএনএ ফ্লাভি ভাইরাস শূকর ও বকজাতীয় পাখির দেহে ঢুকলে সংখ্যায় বাড়ে। রক্তপানের সময় কিউলেক্স বিশোনোই মশার দেহে সেই ভাইরাস ঢোকে। সেই মশা মানুষকে কামড়ালে ভাইরাস মানবশরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে শুয়োর দেখলেই আতঙ্কে ভোগার দরকার নেই বলে বিশেষজ্ঞদের মত। ওই রোগের প্রতিকার খুঁজতে সম্প্রতি ন’বছর বন্ধ পড়ে থাকা রাজ্যের একমাত্র জাপানি এনসেফ্যালাইটিস স্টাডি সেন্টারটি খোলারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এনসেফ্যালাইটিস রুখতে
রাতে মশারি টাঙিয়ে ঘুমোতে হবে।
জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।
এলাকায় জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ধরা পড়লে শুয়োর থেকে সাবধান থাকতে হবে।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান তথা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার গদাধর মিত্র জানিয়েছেন, বৈঠকে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিদের ওই রোগ সম্পর্কে মানুষের সতেচন করার কথা বলা হয়েছে। যেমন, যেমন মশারি টাঙিয়ে শোয়া, জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা করানো ইত্যাদি বিষয়ে প্রচার চালাতে বলা হয়েছে। কারণ সাধারণত পুজোর পরেই ওই রোগের প্রকোপ বাড়ে। এছাড়া ওই রোগের নির্দিষ্ট চিকিত্সা না থাকায় জেলার সিংহভাগ মানুষকে টিকে দেওয়ার ব্যবস্থা করারও কথা বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের রক্ত ও কার্বোফিন্যাল ফ্লুইড বা সিএসএফ পরীক্ষার কিট আসে পুনের ন্যাশান্যাল ইন্সটিটিউট অফ ভাইরোলজি থেকে। ওই কিটের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। মঞ্জুশ্রীদেবী বলেন, “ইতিমধ্যে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসা জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্তদের জন্য চিকিত্সকদের একটি দলও গড়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy