Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বিষ্ণুপুর হাসপাতাল চত্বরেই অবাধে চরছে শুয়োর, কুকুর

উত্তরবঙ্গে লাফিয়ে বাড়ছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যুর সংখ্যা। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মানচিত্রে দক্ষিণবঙ্গের বাঁকুড়া, বীরভূম ও বর্ধমান জেলাও এনসেফ্যালাইটিস জোন হিসেবে পরিচিত। অথচ বিষ্ণুপুর হাসপাতাল চত্বরে দিব্যি ঘুরে বেরাচ্ছে এনসেফ্যালাইটিসের অন্যতম প্রধান বাহক শুয়োর। কোনও হুঁশই নেই বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের।

শুয়োরের আস্তানা। নিজস্ব চিত্র।

শুয়োরের আস্তানা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৪ ০২:৫৭
Share: Save:

উত্তরবঙ্গে লাফিয়ে বাড়ছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যুর সংখ্যা। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মানচিত্রে দক্ষিণবঙ্গের বাঁকুড়া, বীরভূম ও বর্ধমান জেলাও এনসেফ্যালাইটিস জোন হিসেবে পরিচিত। অথচ বিষ্ণুপুর হাসপাতাল চত্বরে দিব্যি ঘুরে বেরাচ্ছে এনসেফ্যালাইটিসের অন্যতম প্রধান বাহক শুয়োর। কোনও হুঁশই নেই বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের।

তবে বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরেশ দাস বলেন, “বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতাল চত্বরে শুয়োরের উত্‌পাতের কথা জানা ছিল না। যে ভাবেই হোক ওদের আটকাতে হবে। আমি সুপারকে নির্দেশ দিচ্ছি এলাকায় সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করতে।” বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, রোগীদের ওয়ার্ডের গা ঘেঁষে থাকা নালাগুলিতে এক পাল শুয়োর চড়ে বেরাচ্ছে। ওই নালার নোংরা জল ও ময়লা ঘেঁটে তারা দিব্যি ঘুরে বেরাচ্ছে সারা হাসপাতাল চত্বর।

রোগীদের ক্ষোভ, শুয়োর দেখে অনেকে ভয় পাচ্ছেন। তা ছাড়া নোংরা মেখে হাসপাতাল চত্বরে ঘোরায় পরিবেশ যেমন নোংরা হচ্ছে, তেমনই দুগর্ন্ধও ছড়াচ্ছে। কিন্তু অবাক ব্যাপার, হাসপাতালের কর্মীরা এ সব দেখেও দেখেন না। সবাই কোনও রকমে নিজেদের কাজ সেরে চলে যাচ্ছেন। চিকিত্‌সক, আধিকারিক থেকে জনপ্রতিনিধি সবারই গয়ংগচ্ছ ভাব। ফলে কুকুর, ছাগলের সঙ্গে মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলে শুয়োরও ওয়ার্ডের ভিতর ঢুকে পড়ছে বলে অভিযোগ। অনেক সময় রোগীদের ফেলে দেওয়া খাবারে মুখ দিয়ে যাচ্ছে।

জয়পুর থেকে আসা এক রোগীর আত্মীয় সুভাষ রায় বলেন, “এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে চারপাশে এত হইচই চলছে। কিন্তু ওই রোগের বাহক শুয়োর তো দেখছি খোদ হাসপাতাল চত্বরেই ঘুরে বেরাচ্ছে। রোগীদের তো শুয়োর থেকে উল্টে দূরে থাকার কথা। এখানে তো সব উল্টো দেখছি। কুকুর, ছাগলও প্রচুর ঘোরাঘুরি করছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কি এ সব নজরে পড়ে না?” সোনামুখী থেকে ভর্তি হওয়া এক রোগীর আত্মীয় সুদীপ্ত দে বলেন, “এখানে তো দেখছি শুয়োরও হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে পড়ছে। চিকিত্‌সকরাই তো রোগীদের এ সব থেকে দূরে থাকতে সচেতন করবেন, তার বদলে এখানে দেখছি উল্টো ছবি। সবার চোখের সামনে কী ভাবে এই ভয়ঙ্কর অবস্থা চলছে?”

বিষয়টি কানে যেতেই মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) পলাশ সেনগুপ্ত বলেছেন, “এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর যেখানে বিভিন্ন পদক্ষেপ করছে, সেখানে জেলা হাসপাতালের স্বীকৃতি পাওয়া বিষ্ণুপুর হাসপাতাল চত্বরই শুয়োরের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র শুনে অবাক হচ্ছি। সব জেনেও চোখ বুজে থাকা মেনে নেওয়া যায় না। আমি সুপারের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলব।”

হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা বিষ্ণুপুর পুরসভার কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এনসেফ্যালাইটিস রাজ্যে যে ভাবে থাবা বসাচ্ছে, এখনই হাসপাতাল চত্বরে শুয়োর ঢোকা বন্ধ করা উচিত। এ ক্ষেত্রে সুপারকে আমরা সব রকম সহযোগিতা করতে রাজি আছি।”

হাসপাতালে শুয়োর আসছে কোথা থেকে? হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ অভিযোগ করেছেন, আবাসনে থাকা কিছু কর্মীই লুকিয়ে চুরিয়ে শুয়োর চাষ করছেন। যদিও হাসপাতালের আধিকারিকরা তা অস্বীকার করেছেন। হাসপাতাল চত্বরে শুয়োর, কুকুর, ছাগলের উপদ্রবের কথা স্বীকার করে নিয়ে সুপার সুভাষচন্দ্র সাহা দাবি করেন, “পাঁচিল না থাকায় এই সমস্যা। আশপাশের ঝুপড়ি থেকে শুয়োরও ঢুকছে। এনসেফ্যালাইটিসের অন্যতম ওই বাহক যাতে না ঢুকতে পারে, সে জন্য শুয়োর যাঁরা প্রতিপালন করেন তাঁদের সতর্ক করতে মাইকে প্রচার করা হবে। এ জন্য পুরসভার কাউন্সিলরদেরও সাহায্য নেওয়া হবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE