Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল

বিশ্রামাগার নেই, সাফাই হয় না আবর্জনাও

নারায়ণগড়ের বারিকবাড়ের কানাই মাণ্ডি স্ত্রীকে ভর্তি করেছিলেন মহকুমা হাসপাতালে। বাড়ি দূরে হওয়ায় সকাল ১১টায় স্ত্রীকে খাবার দিতে এসে হাসপাতালেই পুরো দিনটা থাকেন কানাইবাবু। বিকেল ৪টের সময় স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বাড়ি ফিরে যান তিনি। কিন্তু সমস্যা হল, পাঁচ ঘণ্টা থাকবেন কোথায়? হাসপাতালে কোনও বিশ্রামাগার না থাকায় খোলা আকাশের নীচেই অপেক্ষা করতে হয় রোগীর পরিজনদের।

হাসপাতালে কংক্রিটের বসার জায়গায় শুকোচ্ছে কাপড়। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

হাসপাতালে কংক্রিটের বসার জায়গায় শুকোচ্ছে কাপড়। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

নারায়ণগড়ের বারিকবাড়ের কানাই মাণ্ডি স্ত্রীকে ভর্তি করেছিলেন মহকুমা হাসপাতালে। বাড়ি দূরে হওয়ায় সকাল ১১টায় স্ত্রীকে খাবার দিতে এসে হাসপাতালেই পুরো দিনটা থাকেন কানাইবাবু। বিকেল ৪টের সময় স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বাড়ি ফিরে যান তিনি। কিন্তু সমস্যা হল, পাঁচ ঘণ্টা থাকবেন কোথায়? হাসপাতালে কোনও বিশ্রামাগার না থাকায় খোলা আকাশের নীচেই অপেক্ষা করতে হয় রোগীর পরিজনদের।

রোদে-বৃষ্টিতে নাজেহাল রোগীর আত্মীয়েরা। শীতের রাতে প্রচণ্ড ঠান্ডাতেও কষ্টের মধ্যে পড়তে হয় তাঁদের। হাসপাতাল ভবনের বাইরে কোনও শৌচাগারও না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়। কয়েক বছর আগে পুরসভার উদ্যোগে হাসপাতালের প্রবেশ পথের বাইরে তৈরি শৌচাগার টাকা লাগে। ফলে বাড়ছে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম। হাসপাতাল চত্বরে পড়ে থাকা ছড়াচ্ছে দূষণ। ক্ষুব্ধ দুর্ভোগের শিকার রোগীরা। পরিস্থিতি দেখে সম্প্রতি হাসপাতাল চত্বরে শৌচাগার গড়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেছে।

খড়্গপুর মহকুমার দশটি ব্লকের মানুষের চিকিৎসার সুবিধার জন্য ১৯৮১ সালের ২ অক্টোবর খড়্গপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল গড়ে ওঠে। পরে এই হাসপাতাল মহকুমাস্তরে উন্নীত হয়। হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে চারশো জন রোগী চিকিৎসা করাতে আসেন। অথচ বহির্বিভাগে রোগী ও তাঁর পরিজনেদের বসার জন্য সাকূল্যে ১২টি চেয়ার রয়েছে। ফলে প্রচণ্ড ভিড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে তাকতে হয় রোগীদের। হাসপাতালের অন্তর্বিভাগেও কোনও বসার জায়গা নেই। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে গাছের তলায় কয়েকটি কংক্রিটের তৈরি বসার জায়গা রয়েছে। তবে সেখানে আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় দুর্গন্ধে বসাই দায়। বাধ্য হয়ে সেখানেই নাক বন্ধ বসে থাকেন রোগীর আত্মীয়েরা।

বছর দশেক আগে ২০০৪ সালে বিধায়ক জ্ঞান সিংহ সোহন পালের বিধায়ক তহবিলের টাকায় একটি রাত্রিবাস তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। খড়্গপুর পুরসভার তত্ত্বাবধানে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা ব্যায়ে হাসপাতালের পাশেই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জমির এককোণে প্রায় ৪০০ বর্গফুট আয়তনবিশিষ্ট একটি রাত্রিবাস নির্মিতও হয়। রাত্রিবাস ব্যবহারের জন্য দিনপ্রতি মাথা পিছু ১০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। সেখান থেকে ৫০ মিটার দূরে একটি শৌচাগারও তৈরি করা হয়। শৌচাগার ব্যবহারের জন্যও টাকা লাগে। পরে রাত্রিবাস-সহ শৌচাগারটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারি ফেডারেশনকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেওয়া হয়। শৌচাগার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রয়েছেন একজন কেয়ারটেকারও। তবে যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে রাত্রিবাসের চারিদিকে আগাছায় ভরে গিয়েছে। রয়েছে মশার দাপটও। অনেকক্ষেত্রে অনেক জটিল রোগীর আত্মীয়দের রাতেও হাসপাতাল চত্বরেই থাকতে হয়।

নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ায় আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে দূষণ।

রাত্রিবাসে থাকার জন্য ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য নঅনেকেরই নেই। তাই বাধ্য হয়ে কিন্তু শীতেও মাটিতে মাদুর পেতেই শুতে হয় তাঁদের। খড়্গপুর-২ ব্লকের পলশার বিপুল সামন্ত বলেন, “মেয়ে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি। কখন কী প্রয়োজন হয়, তাই সকাল থেকে এখানে বসে রয়েছি। দিনের বেলা যেমন-তেমন ভাবে নয় কাটিয়ে দেব, কিন্তু রাতেই চিন্তা। সকলের পক্ষে তো রাতে ১০ টাকা ব্যয় করে থাকা সম্ভব নয়। তাই হাসপাতালে ন্যুনতম একটি ছাউনি দেওয়া সুসজ্জিত বসার জায়গা থাকা প্রয়োজন।”

প্রশ্ন উঠছে, হাসপাতাল চত্বরের পরিকাঠামো উন্নয়নে কেউ কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না?

কর্মচারি ফেডারেশনের হাসপাতালের উপদেষ্টা দিলীপ সরখেল বলেন, “ওই ঘর ভাড়া থেকে যে টাকা আসে তা রক্ষণাবেক্ষণের কাজে চলে যায়। এমনকী ওই টাকা দিয়েই প্রতি বছর আমরা রোগীদের ফল বিতরণ করি। এর পরেও আমরা যতটা সম্ভব সবকিছু পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করি। তবে পারিকাঠামো উন্নয়ন ও রাত্রিবাসে দোতলা নির্মাণের জন্য আমি বিধায়ককে অনুরোধ করেছি। উনি বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।” হাসতাপালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা খড়্গপুর পুরসভার চেয়ারম্যান রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “আমরা একটা বিশ্রামালয় গড়েছি। যথাসম্ভব বিশ্রামালয়ের রক্ষণাবেক্ষণও করা হয়। সেখানে রোগীর আত্মীয়রা থাকতে পারেন।” তাঁর আরও বক্তব্য, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও একটি বিশ্রামালয় তৈরি করা উচিত। কিন্তু এখানে প্রস্তাব রাখলেও তা কার্যকর হয় না। তাই আমি সমিতির বৈঠকে যাওয়াই ছেড়ে দিয়েছি।” রোগীর পরিজনেদের দুর্ভোগ কাটাতে কী ভাবছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতালের বহির্বিভাগের রোগীর পরিজনেদের জন্য কিছু বসার চেয়ার রয়েছে। তবে অন্তর্বিভাগের জন্য নিশ্চয়ই একটি ছাউনি-সহ বিশ্রামালয় থাকা প্রয়োজন। শীঘ্রই এই প্রস্তাব পূর্ত দফতরে জানাব।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE