Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পরিকল্পনাই সার, উন্নতির চিহ্ন নেই পরিষেবায়

জমি একটাই। আর সেই জমির উপর মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য জেলা, জেলা হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এত ঘোষণা হলেও সেই জমি, রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালের বাস্তব চিত্র কিন্তু পাল্টায়নি।

রামপুরহাট শহরে মিছিল তৃণমূলের। —নিজস্ব চিত্র।

রামপুরহাট শহরে মিছিল তৃণমূলের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৪ ০৩:৪৩
Share: Save:

জমি একটাই। আর সেই জমির উপর মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য জেলা, জেলা হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এত ঘোষণা হলেও সেই জমি, রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালের বাস্তব চিত্র কিন্তু পাল্টায়নি। যা আছে সেটা থেকেই পরিষেবা যাচ্ছেন না মানুষজন। ফলে প্রায়ই পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে রোগীর পরিজনদের।

প্রসঙ্গত, এই রামপুরহাট হাসপাতালকে বোলপুর ও সিউড়ি হাসপাতালের সঙ্গে মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এর জন্য হাসপাতাল চত্বরে ইতিমধ্যে দু’একর জায়গা রাজ্যের ডাইরেক্টর অফ হেলথ সার্ভিস পরিমাপ করে গিয়েছে। যে জায়গায় মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল হবে, সেই জায়গায় কেবলমাত্র বোর্ড টাঙানো হয়েছে। আবার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালকে জেলা হাসপাতালে উন্নীত করেন। তার পরেও রামপুরহাটকে স্বাস্থ্য জেলা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন তিনি। এই হাসপাতালকে ঘিরে মেডিক্যাল কলেজ গড়ার অনুমোদন মিলেছে বলে দাবি করে শুক্রবার রামপুরহাট শহরে মিছিল করেন তৃণমূলের কর্মী সমর্থকেরা। নেতৃত্বে ছিলেন দলীয় বিধায়ক তথা উচ্চশিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা দফতরের পরিষদীয় সচিব আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। এটাকেই হাতিহার করে এ দিন ঢোল ও বাদ্যযন্ত্র সহযোগে জেলায় দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে এক প্রকার প্রচার সেরে ফেলেন কর্মী-সমর্থকেরা।

রামপুরহাট পাঁচমাথা মোড়ে মিছিল শেষে তিন মিনিটের পথসভায় আশিসবাবু দাবি করেন, “লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণা হওয়ার দিন কয়েক আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে ফ্যাক্স মারমত জানান, রামপুরহাটে মেডিক্যাল কলেজ হচ্ছে। তার অনুমোদনও মিলেছে। রামপুরহাটের মতো একটা জায়গায় মেডিক্যাল কলেজ হবে এটা খুব গর্বের এবং আনন্দের বিষয়। মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের জন্য আমরা এই মিছিলের আয়োজন করি।”

একই জমির উপর একটার পর একটা ঘোষণা। অথচ দেখা যাচ্ছে, জেলা হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণার আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও শয্যা সংখ্যা ২৮৬-তেই থেকে গিয়েছে। সেখানে অন্তত ৫০০টি শয্যার ব্যবস্থা করতে হবে। আবার স্বাস্থ্য জেলা ঘোষণার পরে কেবলমাত্র এক জনকে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর কোনও স্বাস্থ্য আধিকারিক দেওয়া হয়নি। নিয়ম মতো নির্দিষ্ট জায়গায় এখনও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিস ঘর তৈরি হয়নি। সপ্তাহ খানেক আগে রাজ্যের সহকারী স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলা মনিটারিং দলের প্রধান সুবীর কীর্তনীয়া এই হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। কেন এখনও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের ভবন নির্মিত হয়নি তা জানতে চেয়েছিছিলেন। হাসপাতাল সুপার হিমাদ্রি হালদার বলেন, “ভবন নির্মাণের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। ওই দফতরের মুখ্য বাস্তুকারের কাছে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।”

এত ঘোষণা। অথচ কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না দেখে রামপুরহাটের বাসিন্দা সমাজসেবী সেলেম শেখ, মতিউর রহমান বলেন, “সব কিছু হোক ঠিক আছে। কিন্তু যেখানে পরিষেবা ঠিকমতো পাওয়া যায় না, রোগীরা শীতকালে ভাঙা জানলার ধারে বসে রাত কাটান, রোগীরা বিছানার চাদর পান না, জরুরী বিভাগে দু’জন করে চিকিৎসক থাকেন না সেখানে এই সব সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হবে ভাবা উচিত। এ ছাড়া আরও সমস্যা হয়েছে।”

রামপুরহাটে মেডিক্যাল কলেজের বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রায়গঞ্জ, পুরুলিয়া, কোচবিহার— এই তিনটি জায়গার সঙ্গে রামপুরহাটে মেডিক্যাল কলেজ গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু দিন আগে সরকারী অনুমোদন মিলেছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের মৌ চুক্তিও হয়েছে। কেন্দ্র দেবে ১৫০ কোটি টাকা এবং রাজ্য ৫০ কোটি টাকা দেবে। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ গড়ার জন্য ২০ একর জায়গা হাসপাতাল চত্বর এবং শহরের ভিতর পুরনো হাসপাতালের জায়গা আছে। নির্বাচন বিধি লাগু হয়ে যাওয়ায় এখনই সব কথা বলা যাচ্ছে না।” তাঁর আশ্বাস, “মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, স্বাস্থ্য জেলা যেমন গড়ে তোলা হবে তেমনই মেডিক্যাল কলেজ করতে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। তার বাস্তবায়ন সময় সাধ্য ব্যাপার।”

অন্য বিষয়গুলি:

medical service rampurhat mahakuma hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE