নিশ্চয় যান প্রকল্পে চালকদের বিলের টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পরে টনক নড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের।
পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ওই প্রকল্পের অ্যাম্বুল্যান্সগুলির গত আর্থিক বছরের বিল নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। গাড়ি মালিকদের ভাড়া মিটিয়ে দেওয়া হলেও ওই বিলগুলি নিয়ে ফের খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েরা এই পরিষেবা কেমন পাচ্ছেন তা দেখে অবাক রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ও জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের কর্তারা। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে যে সমস্ত অ্যাম্বুল্যান্সগুলি নিশ্চয়যান প্রকল্পে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের পরিষেবা দেয়, সেগুলির বেশির ভাগেরই নিয়ম অনুযায়ী পরিকাঠামো নেই বলে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি। ১০২ নম্বরের যে টোল-ফ্রি ফোন পরিষেবা চালু করার কথা, তা এখনও চালু হয়নি। বিল সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে এই সব ঘাটতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের মাঝামাঝি রাজ্যের অন্য জেলার সঙ্গে পুরুলিয়াতেও এই প্রকল্প চালু হয়। প্রথমে এই প্রকল্পের নাম ছিল ‘মাতৃযান’। পরবর্তীকালে এই প্রকল্পের নাম বদলে হয় ‘নিশ্চয়যান’। জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের অর্থেই এই প্রকল্পটি চলে। উদ্দেশ্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বাড়ানো। নিখরচায় বাড়ি থেকে গর্ভবতী মহিলাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা ও প্রসবের পরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় অ্যাম্বুল্যান্সগুলির মাধ্যমে।
পরিষেবা দেওয়ার পরে নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন গাড়ির মালিক স্বাস্থ্য দফতরের কাছে বিল জমা করেন। পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল থেকে যে অ্যাম্বুল্যান্সগুলি এই পরিষেবা দেয়, তাদের বিল পরীক্ষা করতে গিয়ে বেনিয়ম নজরে এসেছে বলে অভিযোগ। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, “বিলে একটি অ্যাম্বুল্যান্স অনেক দূরে কোনও প্রসূতিকে দিতে গিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার অল্পক্ষণ পরেই ওই গাড়িতেই অন্য প্রসূতিকে নিয়ে রওনা করার কথা উল্লেখ রয়েছে অন্য বিলে। এটা কী ভাবে সম্ভব! আবার বাস্তবের তুলনায় বিলে বেশি দূরত্ব দেখানোও রয়েছে। এমনই নানা অসঙ্গতি আমরা দেখতে পাচ্ছি।” হাসপাতালের এক আধিকারিকের নজরে অসঙ্গতি ধরা পড়তে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। তারপরেই নড়াচড়া শুরু।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “দু’একটি ক্ষেত্রে দু’জন প্রসূতি মাকে একই সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার পর দু’টি পৃথক বিল দাখিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” বেশি কিলোমিটার দেখিয়ে যে সব গাড়ির বিল পাশ হয়ে গিয়েছে, সেই সব গাড়ির টাকা কেটে নিতে হবে বলে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। কী ভাবে এমন বেনিয়ম হল সম্প্রতি বৈঠকে তাও সুপারের কাছে জানতে চান তাঁরা। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জনা সেন বলেন, “এ রকম কিছু টাকা বেশি দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তা গাড়ির পরিষেবার বিল থেকে কেটে নেওয়া হবে।”
পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে বর্তমান এই প্রকল্পে ন’টি অ্যাম্বুল্যান্স চলছে। সম্প্রতি এই হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী অ্যাম্বুলেন্সগুলিতে যা যা পরিষেবা থাকা দরকার তা রয়েছে কি না তা দেখতে কয়েকটি গাড়িতে উঠে পড়েন। নিজে সিটে শুয়েও পড়েন। এই স্বাস্থ্যকর্তার নজরে পড়ে বেশির ভাগ গাড়িতেই অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্ট্রেচার, প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম ইত্যাদি নেই। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, “আমি নিজে কয়েকটি গাড়ির ভিতরে ঢুকে শুয়ে পড়ে দেখেছি। পরিকাঠামো সংক্রান্ত ঘাটতি রয়েছে। আর কিছু ত্রুটি আমাদের নজরে এসেছে। তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” সদরা হাসপাতালের এই প্রকল্পের একটি অ্যাম্বুল্যান্সের মালিক তুহিন মহাপাত্রের দাবি, “গোড়ায় পরিকাঠামো নিয়ে কিছু নির্দেশ ছিল না। নির্দেশ পেলে পালন করব। তবে বেনিয়ম কেউ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
১০২ টোল ফ্রি নম্বর কেন চালু হয়নি, তাও স্বাস্থ্য-কর্তারা জানতে চান। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিষয়টি দেখভাল করেন, তার মুখপাত্র দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের দাবি, বিএসএনএল সহযোগিতা না করায় ওই নম্বর চালু করা যাচ্ছে না। সংস্থার জেলা টেলিকম ইঞ্জিনিয়ার গৌতম মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, “এই সমস্যার কথা জানা ছিল না। কী ভাবে এই পরিষেবা চালু করা যায় দেখছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy