চিত্র ১- গাছ থেকে পড়ে বাঁ হাত ভেঙে গিয়েছিল ফাঁসখাওয়া চা বাগানের শ্রমিক রাম নিরঞ্জন মাহাতোর ছেলে সপ্তম শ্রেণীর পড়ুয়া সঞ্জিতের। তাকে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিত্সকরা জানিয়ে দেন, এক্স রে করতে হবে। কিন্তু হাসপাতালে সেই ব্যবস্থা নেই। তাই বাধ্য হয়ে বাইরের একটি ক্লিনিক থেকে এক্স রে করে রিপোর্ট নিয়ে আসতে হয় তাদের। এরপরেই প্লাস্টার করা হয় সঞ্জিতের হাতে। হাসপাতালে ভর্তি ছেলের পাশে বসে বাবার ক্ষোভ এত বড় হাসপাতালে এক্স রে হয় না, তা ভাবতেই পারছিনা।
চিত্র ২- গত রবিবার রাতে পেটে প্রচন্ড যন্ত্রণা হওয়ায় ব্যবসায়ী যুবক সুব্রত সরকারকে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওষুধে কাজ না হওয়ায় তাঁর পেটে আলট্রা সোনোগ্রাফি করার পরামর্শ দেন চিকিত্সকরা। কিন্তু মেশিন বিকল হাসপাতালে। তাই বাইরে থেকে পরীক্ষা করে আনতে হয়। সুব্রত বাবুর পরিজনদের অভিযোগ, এরপর চিকিত্সক নেই এই অজুহাতে তাঁদের কোচবিহার হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যেতে বলা হয়। সুব্রতবাবুর ক্ষোভ, “হাসপাতালে ঠিকঠাক চিকিত্সা হয় না, তা আজ জানতে পারলাম।”
শুক্রবার, ২৯ নভেম্বরই মহকুমা স্তর থেকে জেলা স্তরে উন্নীত হয়েছে আলিপুরদুয়ারের এই হাসপাতাল। অথচ, সেখানে এসে সামান্য পরিষেবাটুকুও পাচ্ছেন না সঞ্জিত মাহাতো বা সুব্রত সরকারদের মতো রোগীরা। এমনই অভিযোগ, ভুক্তভোগীদের।
গত জুন মাসে আলিপুরদুয়ারে এসে জলপাইগুড়ি জেলা ভেঙে নতুন জেলা ঘোষণা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই চিকিত্সা পরিষেবার উন্নতির আশায় বুক বেঁধেছিলেন জেলার ছটি ব্লকের বাসিন্দারা। কিন্তু পাঁচ মাস কেটে গেলেও জেলা হাসপাতালে উন্নীত হওয়া দূরের কথা, মহকুমা হাসপাতালের যে পরিকাঠামো থাকা প্রয়োজন তাও না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে হাসপাতালে আসা রোগী ও তাঁদের পরিজনদের।
কোনও সময় ইসিজি,এক্সরে, আল্ট্রা সোনোগ্রাফি মেশিনের অপারেটর নেই, কোনও সময় আবার মেশিন বিকল। তাই পরিষেবা মেলেনা প্রায় কখনই। মহকুমা হাসপাতালে ৩৬ জন চিকিত্সক থাকার কথা। বর্তমানে তার অর্ধেক সংখ্যক চিকিসক দিয়ে পুরো হাসপাতালের কাজ চলছে। প্রতি দিন গড়ে আড়াই হাজার রোগী এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিত্সা করাতে আসেন। তাঁদের পরিষেবা দিতে অন্তত ন’জন জেনারেল ফিজিশিয়ান দরকার হলেও সে জায়গায় রয়েছেন মাত্র এক জন। হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পাশাপাশি প্রতিদিন ছটি ব্লক হাসপাতাল থেকে পালা করে চিকিত্সকদের নিয়ে এসে ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করেন কর্তৃপক্ষ। এরফলে বিঘ্নিত হচ্ছে ব্লক হাসপাতালগুলির পরিষেবাও।
যসোডাঙা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিএমওএইচ সুভাষ কর্মকারকেও অন্যদের মত নিয়মিত নিজের হাসপাতাল ছেড়ে আলিপুরদুয়ারে এসে রোগী দেখতে হচ্ছে। সুভাষ বাবুর কথায়, “ওখানে তিন জন চিকিত্সক। আমি আলিপুরদুয়ার চলে আসায় দু জন চিকিত্সকের পক্ষে রোগীর ভার সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে।”
আলিপুরদুয়ার হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার রেজাউল মিনাজও এই হাসপাতালের বর্তমান অবস্থায় হতাশ। তাঁর কথায়, “বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিত্সকরা জানিয়ে দিয়েছেন নিয়মিত এই হাসপাতালে তাঁদের পক্ষে এসে রোগী দেখা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের বিষয়টি বারবার জানিয়েছি। কর্মীর অভাব রয়েছে তাও জানানো হয়েছে।”বর্তমানে হাসপাতালের অন্তর্বিভাগের ২৫০ টি শয্যায় ৩৫০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
হাসপাতালের অব্যবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের পক্ষে গত ৩ নভেম্বর সুপারের অফিসের গেটে আড়াই ঘন্টা তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বসুর বলেন, প্রসূতি বিভাগে স্থানাভাবে প্রায় সময়ই শিশুদের নিয়ে মেঝেতে কাটাতে হচ্ছে সদ্য প্রসবাদের। কর্মীর অভাবে স্ট্রেচারে করে রোগীদের ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে সমস্যা হচ্ছে। মেয়েদের ওয়ার্ডের কাজ করছেন পুরুষ কর্মীরা।
জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মির্ধা বলেছেন, “ডিসেম্বর নাগাদ কয়েকজন চিকিত্সক আসবেন। ডিজিটাল এক্সরে চালু হবে। বাকি বিষয় গুলিও দেখা হবে।”
আগুনে পুড়ে ছাই দোকান। আগুনে পুড়ে ছাই হল ছ’টি দোকান। শনিবার গভীর রাতে চাকুলিয়া থানার চাকুলিয়া বাজার এলাকায় হঠাত্ই একটি দোকান থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন এলাকার বাসিন্দারা। দমকলের একটি ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy