চলছে স্বাস্থ্যপরীক্ষা। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
মহকুমা জুড়ে বাড়ছে জ্বরের প্রাদুর্ভাব। সে জন্য দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে আলাদা করে একটি ক্লিনিক খুললেন কর্তৃপক্ষ। জ্বরে আক্রান্ত কোনও রোগী এলেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওই ক্লিনিকে। জ্বরের উপসর্গ দেখে তাঁর রক্ত পরীক্ষাও করা হচ্ছে। সোমবার সকাল থেকে এই ক্লিনিক খোলা হয়েছে এই হাসপাতালে। তবে এনসেফ্যালাইটিসের কোনও কিট না থাকায় ওই রোগের রক্ত পরীক্ষা এখানে করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ দিন সকাল থেকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ‘ফিভার ক্লিনিক’ খোলা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চারদিকে জ্বরের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। হাসপাতালেও অনেকে জ্বর নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। তাঁদের চিকিৎসার সুবিধার জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে। এই ক্লিনিকে রোগীদের উপসর্গ দেখে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা কারও রক্ত পরীক্ষা করার প্রয়োজন মনে করলে তাঁর রক্তও পরীক্ষা হচ্ছে সেখানে। কারও শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু থাকলে তার রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। তবে ডেঙ্গি বা এনসেফ্যালাইটিসের ক্ষেত্রে রিপোর্ট পেতে আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, এনসেফ্যালাইটিসের প্রাথমিক উপসর্গ হল ক্ষণে-ক্ষণে অজ্ঞান হওয়া, খিঁচুনি, হাত-পা কাঁপতে থাকা। তবে এ দিন সে রকম কোনও রোগী হাসপাতালে আসেনি বলে জানানো হয়েছে।
প্রথম দিন হাসপাতালের এই ক্লিনিকে ১৬ জন রোগী জ্বর নিয়ে এসেছিলেন। চিকিৎসকেরা বেশ কয়েক জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন। তবে এখনও পর্যন্ত কারও মধ্যে ম্যালেরিয়া পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ডেঙ্গি বা এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গও দেখা যায়নি বলে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাস জানান, এই সময়ে জ্বরের প্রকোপ খুব বেশি। ভাইরাল ফিভার থেকে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গিও এ সময় হতে পারে। এ বার আবার রাজ্যের কিছু এলাকায় জাপানি এনসেফ্যালাইটিসেরও প্রভাব রয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের মহকুমার মানুষ যাতে আতঙ্কিত না হন, সে জন্যই হাসপাতালে আলাদা করে একটি ফিভার ক্লিনিক খোলা হয়েছে।” তিনি জানান, জ্বর হলে অযথা আতঙ্কিত না হয়ে হাসপাতালে চলে আসতে হবে। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে এ ধরনের ক্লিনিক খোলাকে স্বাগত জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন আইএমএ। সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্য সহ-সভাপতি মিহির নন্দী বলেন, “মানুষের মধ্যে যাতে কোনও রকম আতঙ্ক না ছড়ায়, সে জন্য এই পদক্ষেপ প্রশংসনীয়।”
কাঁকসার গাড়াদহ গ্রামে যে কিশোর এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন, সোমবার তার রিপোর্টে ম্যালেরিয়া ধরা পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। কাঁকসা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বাতী রায়চৌধুরী এ কথা জানান। তিনি জানান, এখন ছেলেটির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এ দিনও গাড়াদহ গ্রামে একটি শিবির করা হয়। সেখানে ছিলেন ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন কর্মী। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “ওই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে যাতে আতঙ্ক না ছড়ায় তার জন্য আমাদের কর্মীরা সেখানে গিয়েছিলেন। কেউ অসুস্থ হলে তাঁর চিকিৎসাও করা হয়েছে।” কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি খবর পেয়ে ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের কাছে ওখানে ফের শিবির করার আহ্বান জানিয়েছি। বাসিন্দারা যেন আতঙ্কিত না হন সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, জেলায় এখনও পর্যন্ত জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ ধরা পড়েনি। তবে এই রোগের ব্যাপারে গ্রামে গ্রামে প্রচারপত্র বিলি করে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগ হয়েছে। এর সঙ্গে জেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের প্রথমে ম্যালেরিয়ার জন্য রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। কোনও ধরনের ম্যালেরিয়া না ধরা পড়লে সেই রোগীর সিরাম এবং সিএসএফ পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হবে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
সোমবার থেকে যে প্রচারপত্র বিলি শুরু হয়েছে, তাতে জানানো হয়েছে, ধানখেত, পট পচা জল, ডোবা, ঝোপঝাড়ে যে মশা জন্মায়, তার কামড়ে এই রোগ হয়। শুয়োর, বক ইত্যাদি প্রাণীর মধ্যে এই জীবাণু বৃদ্ধি পায়। এই রোগের লক্ষণ হল, মাথাব্যথা, জ্বর, কাঁপুনি, খিঁচুনি, অচেতন হয়ে পড়া ইত্যাদি। রোগ প্রতিরোধ করতে মশারি টাঙিয়ে শোওয়া, হাত-পা ঢাকা জামাকাপড় পরা, ঘরের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং শুয়োর, পাখি, গৃহপালিত পশুর খোঁয়াড় থেকে দুরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জ্বর বা অন্য শারীরিক সমস্যা হলে দেরি না করে নিকটবর্তী উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালেও যেতে বলা হয়েছে।
জ্বর হলেই ম্যালেরিয়া সংক্রান্ত রক্ত পরীক্ষা করতে বলা হচ্ছে কেন? বর্ধমানের সিএমওএইচ প্রণবকুমার রায় বলেন, “এই পরীক্ষা রুটিন। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।” ডেপুটি সিএমওএইচ দ্বৈপায়ন হালদার বলেন, “বর্ধমানে সারা বছর কয়েকশো মানুষের ম্যালেরিয়া হয়। বিশেষত, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়খণ্ড থেকে যাঁরা এই জেলায় ধান কাটতে আসেন, তাঁরাই ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। কয়েক জনের রক্তে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার জীবাণুও মেলে। তবে আমরা ইতিমধ্যে ৭৫ হাজার ম্যালেরিয়া কিট কিনেছি। তাতে ভাইভ্যাক্স ও ফেলাসিফেরাম ম্যালেরিয়ার রক্ত একই সঙ্গে পরীক্ষা করা সম্ভব। জ্বর নিয়ে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কেউ ভর্তি হলে গোড়া থেকে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস আক্রন্ত বলে ধরে না নিয়ে যেন ম্যালেরিয়া সংক্রান্ত রক্ত পরীক্ষা করা হয়, সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy