প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহিত
গত বছর লকডাউনে আমি বেঙ্গালুরুতে ছিলাম। একাই একটা ফ্ল্যাটে থাকতাম। প্রথম পর্যায় লকডাউন, খুব কড়াকড়ি। সপ্তাহে একদিন বাজারে যেতাম। তিন তলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামাই ছিল আমার গোটা সপ্তাহের একমাত্র শরীরচর্চা। বাকি দিনগুলোয় টুকটাক ঘরের কাজ, সারাদিন কম্পিউটার চালিয়ে একটানা ৮ ঘণ্টা কাজ, একবেলা রান্না আর বাকি সময়টা শুয়ে বসে নেটফ্লিক্স— এই ছিল আমার রোজনামচা। এই আলসে জীবনযাপনের ফল ভুগতে হল খুব তাড়াতাড়ি।
রোজই অফিসের কাজ শেষ করে ঘাড়ে ব্যথা নিয়ে শুয়ে পড়তাম। একদিন আর কাজ শেষ করতে পারলাম না। ৮ ঘণ্টার শিফ্ট শেষ করার আগেই প্রচন্ড ব্যথা। ব্যথা কমাতে চেয়ার ছেড়ে উঠে পায়চারি শুরু করলাম। কিন্তু শেষে ব্যথা বেড়ে এমন জ্বর এল যে বাধ্য হলাম বসকে জানাতে। জ্বর আসায় আমার হুঁশ ফিরল। কোনও রকমে খোঁজ খবর নিয়ে একা হাড়ের চিকিৎসকের কাছে গেলাম। তিনি জানালেন, স্পন্ডিলাইটিসে যেটা হয়, আমার ঠিক তাই হয়েছে। মাংসপেশি শক্ত হয়ে গিয়ে এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে যে আচমকা ঝটকায় জয়েন্ট থেকে হাড় সামান্য বেরিয়ে আসতে পারে। শুনে আমার তো রাজশেখর বসুর ‘চিকিৎসা সঙ্কট’এর মতো অবস্থা, ‘হাড্ডি পিলপিলাইয়া গিয়া’! কিন্তু অভয় দিলেন ডাক্তারবাবু। বললেন কাজে বসার চেয়ারটা অবলম্বে পাল্টে ফেলতে। আর কয়েক দিন বিছানা থেকে ওঠা মানা। সঙ্গে তিনি ফিজিয়োথেরাপি-র পরামর্শ দিলেন। ফিজিয়োথেরাপি-র প্রশিক্ষক আমায় একটা সেশনের শেষে কয়েকটি সহজ যোগাসন দেখিয়ে দিলেন। প্রত্যেক দিন সকালে সেগুলি নিয়ম করে করতাম। টানা এক মাস করার পর ঘাড়ে-পিঠে-কোমরের অসহ্য ব্যথা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল!
মা-দিদিমার দৌলতে খুব অল্প বয়স থেকেই স্পন্ডিলাইটিস ছিল। পেশায় সাংবাদিক। চেয়ার-টেবিলে বসে একটানা লেখালিখি করা ছাড়া উপায় কী? তাই ঘাড়ে ব্যথা থেকে নিস্তার পেতে যোগাভ্যাস শুরু করেছিলাম কয়েক বছর আগে। দার্জিলিং গিয়ে হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় পায়ের লিগামেন্ট ছিড়ে যায়। তিন মাস পর নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছিলাম। কবে থেকে যোগাসন করতে পারব একবার সাহস করে জানতে চেয়েছিলাম চিকিৎসককে। ধমক দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আগে বাবু হয়ে বসতে শেখো, তার পরে যোগাসনের কথা ভাববে।’’ ৬ মাস লেগেছিল মাটিতে ঠিক করে বাবু হয়ে বসতে। অনেক সময়ে মনে হতো, আর বোধহয় পা কোনও দিন স্বাভাবিক হবে না। ঠিক হয়ে যাওয়ার পরও প্রায় বছর খানেক পায়ের ব্যায়ামই প্রাধান্য পেত। সেই যে যোগাভ্যাস ছেড়েছিলাম, আর ধরিনি। সেই ফলই ভুগতে হয়েছিল গত বছর।
এ বছর চাকরি বদল হয়ে ফের কলকাতায়। কোভিড পরিস্থিতিতে কাজের চাপ এতটাই বেড়ে যায় যে নিজের শরীরচর্চার কথা তেমন মাথায় ছিল না। এক মাসের মাথায় আমার কোমর ফের জানান দিল যোগাভ্যাস না শুরু করলে ফের বিপদ। তাই প্রায় এক মাস হল মন দিয়ে যোগব্যায়াম শুরু করেছি। স্ট্রেচিং করে গায়ের ব্যথার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পাশাপাশি শুরু করেছি কিছু তুলনামূলক ভাবে কঠিন আসন। নিয়মিত যোগাভ্যাস করলে শরীর যে ধীরে ধীরে নমনীয় হচ্ছে, তা অনুভব করা যায়। প্রথম দিন যেখানে পা তুলতে অসুবিধা হচ্ছিল, সেখানে ৫ দিনের মাথায় সর্বাঙ্গাসন ঠিক মতো করতে পারার আনন্দটাই আলাদা।
তবে স্পন্ডিলাইটিস থাকলে সব আসন চলবে না। কোন কোন যোগাসনে আপনার উপকার হতে পারে, সেটা জেনে নেওয়া প্রয়োজন। যে আসনগুলো নিয়মিত করে উপকৃত হয়েছি তার একটি তালিকা রইল।
১। সেতুবন্ধন
২। ভুজঙ্গাসন
৩। হলাসন
৪। মার্জারি আসন
৫। ধনুরাসন
৬। বিতিলাসন
৭। তদাসন
৮। সলভাসন
শুরুতেই সব আসন করা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই শুরু করতে হবে ভুজঙ্গাসন দিয়ে। যে কোনও ধরনের ঘাড়ে ব্যথার জন্য এই আসন কার্যকরী। জেনে নিন কী ভাবে করবেন।
ভুজঙ্গাসন
পেটের উপর ভর দিয়ে উবু হয়ে শুয়ে পড়ুন। দু’পায়ের মধ্যে সামান্য দূরত্ব থাকবে। পা মাটির সঙ্গে লেগে থাকবে। হাত দুটো কনুই মুড়ে বুকের দু’পাশে নিয়ে আসুন। হাতের তালুর উপর চাপ দিয়ে শরীরে উপরাংশ তুলুন ধীরে ধীরে। মাথা পিছনে দিকে করুন। ২০ সেকেন্ড এই রকম থাকতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাস হবে স্বাভাবিক। ২০ সেকেন্ড পর ধীরে ধীরে আগের মতো শুয়ে পড়ুন। এভাবে মোট ৩ বার ব্যায়াম করতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy