Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Tarpan

মহালয়ায় তর্পণ শুধুই পূর্বপুরুষের জন্য নয়, জীব-জন্তু-গাছও পায় জল, মেলে অপার পুণ্য

শুধুই শাস্ত্র নয়, মহালয়ায় তপর্ণের সঙ্গে পুরাণেরও যোগ রয়েছে। মহাভারতে কর্ণ সম্পর্কে বলা হয়েছে সূর্য-পুত্র দান ধ্যান করলেও তা ছিল স্বর্ণ, রত্ন, মণিমাণিক্য।

কেন তর্পণ করা হয়?

কেন তর্পণ করা হয়?

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১:২২
Share: Save:

মহালয়া। অমাবস্যার অন্ধকার পেরিয়ে আলোকজ্জ্বল দেবীপক্ষকে আগমনের দিন। শাস্ত্রবিশেষজ্ঞরা জানান যে, পিতৃপক্ষের অবসানে তাই জীবনে মহা লগ্ন নিয়ে আসে ‘মহালয়া’। তর্পণের শেষে তাই সূর্যপ্রণাম করে অসুরবিনাশিনী দেবীকে আহ্বান করে বলা হয়— শোক, তাপ, দুঃখ, অমঙ্গল, অন্ধকার কাটিয়ে আলোকে উত্তরণের এগিয়ে নিয়ে চলো দেবী।

অনেকেই মনে করেন, তর্পণ শুধুই পূর্বপুরুষদের জন্য। কিন্তু শাস্ত্র মতে তা নয়। পৃথিবীর সামগ্রিক সুখের কামনা মিশে থাকে তর্পণে। তাই তর্পণ মন্ত্রে বলা হয়, ‘তৃপ্যন্তু সর্বমানবা’। অর্থাৎ মানব সভ্যতাকে তৃপ্ত করার দিন মহালয়া। তৃপ্তি সাধনের জন্যই তর্পণ। মহালয়ের এই লগ্নে যাঁদের পুত্র নেই, যাঁদের কেউ নেই, তাঁদেরও স্মরণ করা হয়ে থাকে। শাস্ত্রজ্ঞ নবকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সেই কারণেই মন্ত্রে বলা হয়, ‘ওঁ নমঃ যে বান্ধবা অবান্ধবা বা, যে অন্য জন্মনি বান্ধবাঃ। তে তৃপ্তিং অখিলাং যান্ত, যে চ অস্মৎ তোয়-কাঙ্খিণঃ’। এর অর্থ হল, যাঁরা আমাদের বন্ধু ছিলেন, যাঁরা বন্ধু নন, যাঁরা জন্ম-জন্মান্তরে কখনও আমাদের বন্ধু ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে যাঁরা আমাদের কাছে জল পেতে চান, তাঁরা সম্পূর্ণরূপে তৃপ্তিলাভ করুন।’’

নবকুমার আরও জানান, হিন্দুশাস্ত্রে নানা রকম তর্পণের উল্লেখ রয়েছে। দেব তর্পণ, গুরু তর্পণ, মনুষ্য তর্পণ, ঋষি তর্পণ, দিব্যপিতৃ তর্পণ, যম তর্পণ, ভীষ্ম তর্পণ, পিতৃ তর্পণ, মাতৃ তর্পণ, অগ্নিদগ্ধাদি তর্পণ, রাম তর্পণ ও লক্ষণ তর্পণ। পিতৃপক্ষের অবসানের দিনে যে মন্ত্রোচ্চারণ করা হয় তাতে রয়েছে— ‘আব্রহ্ম স্তম্বপর্য্যন্তং জগত্তৃপ্যতু’। স্তম্ব শব্দের অর্থ তৃণগাছি। অর্থাৎ ব্রহ্মা থেকে তৃণগাছি পর্যন্ত সবাইকে জল দেওয়া যায় একই মন্ত্রে। পশু, মানুষ, আত্মীয়-অনাত্মীয়, জাত-বেজাত কোনও ফারাক না দেখে সকলের শুভকামনার দিন মহালয়া। নবকুমার বলেন, ‘‘কেউ যদি চান তবে অনাত্মীয় বা সন্তানহীন কোনও প্রিয় জনকেও স্মরণ করা যায় তর্পণের মাধ্যমে।’’ নাম-গোত্র জানা না-থাকলে ‘যথা নাম’ বলে মন্ত্রোচ্চারণের রীতিও রয়েছে।

শুধুই শাস্ত্র নয়, মহালয়ায় তপর্ণের সঙ্গে পুরাণেরও যোগ রয়েছে। মহাভারতে কর্ণ সম্পর্কে বলা হয়েছে সূর্য-পুত্র দান ধ্যান করলেও তা ছিল স্বর্ণ, রত্ন, মণিমাণিক্য। তিনি পিতৃপুরুষের পরিচয় না জানায় পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে কখনও জল বা খাদ্য দান করেননি। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে মৃত্যুর পর স্বর্গে গেলে খাদ্য হিসেবে তাই তাঁকে দেওয়া হয় শুধুই সোনা-রত্ন। জীবিত অবস্থায় যা দান করেছেন তারই অংশ। তখনই কর্ণকে দেবরাজ ইন্দ্র জানান, পিতৃপুরুষকে কখনও তিনি জল দেননি বলেই মৃত্যুর পরে তিনি জল পাবেন না। এই ভুল সংশোধনের জন্য এক পক্ষকালে মর্ত্যে ফিরে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দিয়ে পাপস্খলন করেন কর্ণ। সেই এক পক্ষ কালই পিতৃপক্ষ। যার শেষ মহলয়ায়।

আবার শ্রী শ্রী চণ্ডীতে রাজা সুরথের কাহিনি রয়েছে। সুরথ যবনদের কাছে পরাজিত হয়ে মনের দুঃখে বনে চলে যান। সেখানেই দেখা হয় মেধা ঋষির সঙ্গে। সেখানে তিনি শোনেন মহাময়ার কাহিনি। বলা হয়, মহালয়ার দিনে তর্পণ করে সমাধি নদীর তীরে তিন বছর তপস্যার পরে দুর্গাপুজো শুরু করেন।

হিন্দু বিশ্বাসে এমনটাও বলা হয় যে, মহালয়ার দিন তর্পণ করলে পূর্বপুরুষের আশীর্বাদ মেলে। সাংসারিক সুখ, সমৃদ্ধির সঙ্গে মেলে শান্তি।

অন্য বিষয়গুলি:

tarpan mahalaya Durga Puja 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy