পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম হল আগ্রার তাজমহল। যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত, শ্বেতশুভ্র পাথরের তাজমহল আসলে মুঘল সম্রাট শাহজাহান এবং তাঁর স্ত্রী মুমতাজের ভালবাসার স্মৃতিচিহ্ন। এই স্মৃতিসৌধটি দেখতে প্রতি বছর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন লক্ষ লক্ষ পর্যটক। মুক্তোর মতো সাদা সেই সৌধের রং না কি ক্রমশ সবুজ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বর্ষায় কিংবা গরমে পাথরের গায়ে এই ধরনের সবজেটে সংক্রমণ স্বাভাবিক হলেও শীতকালে এমনটা হওয়ার কথা নয়। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ জানিয়েছে, সাদা মার্বেল পাথরের রং বদলে যাওয়ার নেপথ্য রয়েছে ‘গোল্ডিকিরনোমাস’ নামক বিশেষ এক ধরনের পোকা।
আরও পড়ুন:
এই ধরনের কীট সাধারণ ঝাঁক বেঁধে থাকতেই পছন্দ করে। তাজমহলের গায়েই রয়েছে তাদের রাজত্ব। সেই ‘গোল্ডিকিরনোমাস’ কীটের মুখ থেকে নির্গত লালা, মল জমতে জমতেই সাদা পাথরের রং ক্রমশ সবুজ হয়ে যাচ্ছে বলে মত ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের। ২০১৫ সালে প্রথম এই কীটের আবির্ভাব ঘটে। যমুনা নদীর দূষিত জলই সেই পোকার আঁতুড়ঘর। মার্চ-এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর, বছরে দু’বার এই পোকাদের বংশবিস্তার করার সময়। তাই গরমকালেও যেমন এই পোকাদের বাড়বাড়ন্ত হয়, তেমন শীত আসার আগেও সংখ্যায় বাড়তে থাকে তারা।
আরও পড়ুন:
এই পোকাদের থেকে প্রেমের স্মৃতিসৌধ কি রক্ষা করা যাবে না?
পুরাতত্ত্ববিদ রাজকুমার পটেলের তত্ত্বাবধানে এক দল গবেষক এই বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখছেন। তদন্তে নেমে তাঁরা দেখেছেন, ২০১৫ থেকে একটু একটু করে সাদা মার্বেলের রং বদলে সবুজ হতে শুরু করেছিল। অনেকেই এর জন্য দূষণকেই দায়ী করছিলেন। তা অনেকাংশেই ঠিক। তবে করোনা অতিমারিতে দূষণের মাত্রা একটু হলেও কমেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই দাগে কোনও হেরফের হয়নি। গত বারের তুলনায় চলতি বছরে এই পোকারা আবার দ্বিগুণ গতিতে বংশবিস্তার করেছে। ফলে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু অনেকের মত, ঠিক মতো ঠান্ডা পড়লে পোকাদের দাপট খানিকটা হলেও কমবে।
আরও পড়ুন:
তাজমহলকে রক্ষা করতে এখন পর্যন্ত কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
তাজমহলের গা থেকে সবুজ দাগ মুছতে তৎপর ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ। তাদের উদ্যোগে ইতিমধ্যেই ‘ডিসটিল্ড ওয়াটার’ দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়েছে গোটা সৌধটি। কিছু দিন পোকাদের উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আবার তারা যথাস্থানে ফিরে এসেছে। পোকাদের হাত থেকে পৃথিবীর এই সপ্তম আশ্চর্যটিকে বাঁচাতে, পুরাতত্ত্ববিদ রাজকুমার পটেল এই বিষয়ে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের রসায়ন বিভাগের সঙ্গেও কথা বলেছেন।