দিল্লি হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়ি থেকে গত ১৪ মার্চ রাতে উদ্ধার হয়েছিল রাশি রাশি টাকার নোট। এ বার ‘নগদকাণ্ডে’র তদন্তে নেমে ঘটনার পর এলাকায় যাওয়া আট পুলিশকর্মীর মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করল দিল্লি পুলিশ। তাঁদের মধ্যে তুঘলক রোড থানার স্টেশন হাউস অফিসারও রয়েছেন। সকলের ফোন ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, এসএইচও উমেশ মালিক, হেড কনস্টেবল রূপ চাঁদ, সাব ইনস্পেক্টর রজনীশ, বুধবার রাতে এলাকায় টহল দিতে আসা দুই পুলিশকর্মী এবং আরও তিন পিসিআর কর্মীর ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আট জন পুলিশকর্মীর মোবাইল পাঠানো হয়েছে ফরেন্সিক পরীক্ষায়। অগ্নিকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছোনোর পর তাঁরা কোনও ভিডিয়ো রেকর্ড করেছিলেন কি না কিংবা ওই ভিডিয়োগুলি কোনও ভাবে কাটছাঁট করা হয়েছিল কি না, সে সব খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়াও, এই আট পুলিশকর্মীর বয়ানও রেকর্ড করেছে দিল্লি পুলিশ।
আরও পড়ুন:
‘নগদকাণ্ডে’র তদন্তে তিন বিচারপতির একটি কমিটি গঠন করেছিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না। তাঁরা বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন। সেই তদন্তের অংশ হিসাবেই বুধবার দুপুরে বিচারপতির বাসভবন পরিদর্শনে গিয়েছিলেন নয়াদিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার দেবেশ মাহলা। দেবেশের নেতৃত্বে পুলিশের ছয় সদস্যের একটি দল বিচারপতির বাসভবন থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। পাশাপাশি, জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এলাকার বাসিন্দা এবং নিরাপত্তারক্ষীদেরও। ছয় সদস্যের ওই দল দুপুর প্রায় ১টা ৫০ মিনিট নাগাদ বিচারপতি বর্মার ৩০, তুঘলক রোডের বাংলোয় পৌঁছোয়। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদপর্ব চলে।
প্রসঙ্গত, ‘নগদকাণ্ডে’ ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, দমকলকর্মীরা রাশি রাশি আধপোড়া নোট দেখার পরেও দীর্ঘ আট ঘণ্টা ধরে কোনও পদক্ষেপ কেন করল না পুলিশ? এমনই আরও নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে তিন বিচারপতির কমিটি। যদিও আগেই দিল্লি পুলিশের কয়েক জন ঊর্ধ্বতন কর্তা এই দাবি অস্বীকার করেছেন। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-কে তাঁরা জানিয়েছেন, যখন তাঁরা ঘটনাটি জানতে পেরেছিলেন, তত ক্ষণে প্রায় আট ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছিল। ১৪ মার্চ রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ আগুন লাগলেও সকাল ৮টা নাগাদ অতিরিক্ত ডিসিপি (নয়াদিল্লি) সকালের ডায়েরিতে আগুনের বিস্তারিত বিবরণ নথিভুক্ত করেন। এর পর পুলিশ কমিশনারকে বিষয়টি জানানো হয়। দেখানো হয় অগ্নিকাণ্ডের পর তোলা ভিডিয়োগুলিও। অথচ, গত ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বিচারপতি বর্মার নিরাপত্তার দায়িত্বে ৪০ জন সিআরপিএফ কর্মী এবং দিল্লি পুলিশের তিন জন কর্মীকে পালাক্রমে তাঁর বাড়ির বাইরে মোতায়েন করা হয়েছিল। সে কারণেই প্রশ্ন উঠছে, পুলিশ প্রহরা থাকা সত্ত্বেও কেন ঘটনার রাতে বিচারপতির বাড়ি তল্লাশি করে দেখা হল না? কেন উপস্থিত পুলিশকর্মীরা বিষয়টি নথিবদ্ধ করলেন না, সে প্রশ্নও উঠেছে। এর পরেই অগ্নিকাণ্ডের সময় প্রথম উপস্থিত থাকা পুলিশকর্মীরা তাঁদের ফোন দিল্লি পুলিশের সদর দফতরে জমা দিয়েছেন। তদন্তে এই ফোনগুলি ব্যবহার করা হবে।