জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ছবি: সংগৃহীত
বাক্স বাক্স টাকা লরি বোঝাই করে নিয়ে যেতে হল ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায় বাড়ি থেকে। শেষমেশ গ্রেফতারও হতে হল তাঁকে। যদি তিনি গ্রেফতার হওয়ার সময়ও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি নির্দোষ, কোনও অন্যায় করেননি।
ন্যায়-অন্যায়ের বিচার করবে আদালত। তদন্ত হবে নিয়ম অনুযায়ী। সেই অনুযায়ী চার্জশিট তৈরি হবে। সেগুলো সবই পরের ব্যাপার। কিন্তু শনিবার সকাল থেকেই অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নাম মুখে মুখে। তিনি মডেলিং করেন, অভিনেত্রী— এর আগে কত জন জানতেন জানা নেই। তবে এখন অনেকেই বলে দিতে পারবেন প্রসেনজিতের কোন ছবিতে তিনি ছিলেন, বা কোন পুজোর মুখ হয়েছিলেন। সবই গ্রেফতার মন্ত্রী, মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে নাম জড়ানোর সুবাদে।
সকালে থেকে টিভিতে খবরের চ্যানেল খুলে বসে আছে বাঙালি। কিংবা কেউ পড়ছেন খবরের অ্যাপে। সবটাই সিনেমার টানটান চিত্রনাট্যের মতো। এক মন্ত্রী, তাঁর সঙ্গে এসএসসি-র দুর্নীতির যোগ, সঙ্গে আবার সুন্দরী মডেল-অভিনেত্রীর নাম। বাঙালির উচ্ছ্বাস আর দেখে কে! কেউ বলছেন, ‘কত বাক্স টাকা, কত গয়না, বাপরে! একটা বাক্সও যদি আমরা পেতাম’। আবার কেউ বলছেন, ‘একটা টাকাও কি ওর কপালে জুটত? ওকে তো রাখতে দিয়েছিল। বেচারি ফেঁসে গেল খালি খালি’।
এ ভাবে ‘খালি খালি’ বহু বার বহু ছোট-বড় অভিনেত্রী ‘ফেঁসে’ গিয়েছেন। কেউ আবার একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছেন। এর আগেও ‘রোজ ভ্যালি কাণ্ডে’ জড়িয়ে পড়েছিল সিনেমা জগতের বহু নাম। সেখানে টলিগঞ্জের প্রথম সারির নায়িকারও ছিলেন। আবার গত বছর থেকে সুকেশ চন্দ্রশেখরের সঙ্গে নাম জড়িয়ে ইডির কবলে পড়েছিলেন বলিউডের জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ বা নোরা ফতেহিও। প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা নিয়ে এখনও জ্যাকলিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ইডি। এবং জ্যাকলিনও প্রমাণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি কোনও অন্যায় করেননি।
বার বার গ্ল্যামার জগতে বহু নাম জড়িয়ে পড়ে দুর্নীতির সঙ্গে। কোনও মডেল বা অভিনেত্রী যাকে হয়তো কেই সে ভাবে চিনতেন না, তাঁদের এই সময়ে সংবাদমাধ্যম বা নেটমাধ্যমের দৌলতে চিনে যায় সাধারণ মানুষ। আবার কখনও কখনও বহু নামী অভিনেত্রীর সঙ্গে হয়তো যোগ পাওয়া যায় কোনও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ বা গ্যাংস্টারের। কিন্তু এমনটা কেন হয় বার বার? কেন অভিনেত্রী বা মডেলরাই ‘সৎ’ হয়েও ‘ফেঁসে’ যান এ সবের সঙ্গে? গ্ল্যামারের আলোতে গা ডোবাতেই কি তাঁদের বার বার তাক করে অন্ধকার জগৎ? না কি সিনেমার মতো ‘বেহিসাবি’ ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যে কোনও দুর্নীতি ঢেকে দেওয়া সহজ? কোন ছবি কত ব্যবসা করল, কত লাভ হল, কত ক্ষতি হল— তার যেমন কোনও স্বচ্ছ হিসাব নেই, তেমনই কোন অভিনেতা-অভিনেত্রীর কত আয়, কোন মাধ্যমে আয়, তা স্পষ্ট ভাবে অনেকেই জানেন না। তাই কোন টাকা ‘সাদা’, কোন টাকা ‘কালো’, তা বোঝাও কিঞ্চিৎ মুশকিল। ফলে অন্য কোথাও থেকে কালো টাকা যদি এসে মিশে যায় সেই সম্পত্তির সঙ্গে, তা হলে দুই আলাদা করাও অসুবিধার।
আবার অন্য আরও কারণ থাকতে পারে। সুন্দরী অভিনেত্রী মানেই তাঁর সব গুণ চেহারার, মস্তিষ্ক নিয়ে সে ভাবে আর কে বিচার করেন? ‘থিঙ্কিং অ্যাক্ট্রেস’দের ‘বাজারদর’— বা কত? সকলেই চান এমন সুন্দরী যাকে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা যাবে। যার বিছানার তলায় কিছু কোটি কালো টাকা রাখলে সে তেমন প্রশ্নও করবে না। অভিনেত্রীরাও এই কারণেই বুঝে যান, কোনও প্রশ্ন না করে ‘বোকা’ সেজে থাকাও বেশি সুবিধার। তাঁদের প্লাস্টিক সার্জারি বা জিমের খরচ মিটে গেলেই হল, কোথা থেকে টাকা এল তা জেনে কী লাভ!
যত বার রাজনীতি আর বিনোদন দুনিয়ার মিলিত দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে তত বার প্রশ্ন উঠেছে, অভিনেতাদের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের খুল্লমখুল্লা যোগাযোগ আদতে শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা? ছোট-বড় পর্দার অভিনেতা, পরিচালক, কলাকুশলীদের সম্মাননা প্রদান সাধারণের চোখে ধুলো দেওয়া? কী বলছেন শাসকদল ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রী? বিষয়টি নিয়ে এর আগেই আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে স্পষ্ট নিজের মতপ্রকাশ করেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী তৃণা সাহা। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ কাউকে ব্যবহার করে না। ইচ্ছের বিরুদ্ধে কেউ কাউকে ভুল পথেও নিয়ে যেতে পারে না। মনে রাখতে হবে, এক হাতে তালি বাজে না!’’
তৃণার জবাব ফের একই প্রশ্ন উস্কে দিল সকলের মনে? কেউ কি না জেনে সত্যিই ‘ফেঁসে’ যান? না কি সবই হিসাব কষে করা সুচিন্তিত পদক্ষেপ?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy