প্রতীকী ছবি।
বাড়িতেই চিকিৎসা চলছে করোনার? জেনে নিন খাদ্যতালিকায় কী কী রাখবেন?
রোগমুক্ত হতে গেলে যেমন ওযুধ প্রয়োজন, তেমনই জরুরি যথাযথ ডায়েট। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ে শরীরকে সারিয়ে তুলতে পুষ্টিকর খাবারের কোনও বিকল্প নেই। করোনা রোগীর খাদ্যতালিকায় কী কী রাখবেন ও কেন, জেনে নিন...
প্রোটিন-প্রধান
আমাদের শরীরে কোষের গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রোটিন। আর দুর্বল শরীরে শক্তির জোগান দিতেও প্রোটিনের চাহিদা এ সময়ে বেশি। তাই রোজ কিছুটা পরিমাণ প্রোটিন রাখতেই হবে খাদ্যতালিকায়। ডিম, মাংস, মাছ, ডাল, পনির, সয়াবিন... ঘুরিয়েফিরিয়ে খেতে পারেন সবক’টিই। ছোলা জলে ভিজিয়েও খেতে পারেন। ছাতু থাকতে পারে প্রাতরাশে। কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হলে ডাল, মাছ জাতীয় প্রোটিন বাছতে পারেন।
• ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড: এটি ইমিউন সেলের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। তাই এর জোগান বজায় রাখতে খেতে পারেন বিভিন্ন রকম বীজ ও মাছ। চিয়া সিডস, পাম্পকিন, সানফ্লাওয়ার সিডস রাখতে পারেন স্ন্যাকসে। টুনা, স্যামনেও এই ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় বেশি পরিমাণে। তবে স্থানীয় বাজারে এই ধরনের মাছ না পেলে কাতলা, রুই মাছও খেতে পারেন।
• ভিটামিন: এ সময়ে বিশেষ প্রয়োজন ভিটামিন সি-র। কারণ ভিটামিন সি অ্যান্টিবডি ফর্মেশন ও কোষের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। কমলালেবু, পাতিলেবু, আমলকী, কাঁচা আম, কাঁচা লঙ্কা ভিটামিন সি-র ভাল উৎস। এক গ্লাস জলে একটি পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। অনেকে ঈষদুষ্ণ বা গরম জলে খান, সেটার দরকার নেই। আমলকীতে ভিটামিন সি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। অবশ্যই তা কাঁচা খাওয়ার চেষ্টা করবেন। উচ্চ তাপমাত্রায় ভিটামিন সি-র কার্যকারিতা অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। ভিটামিন ই প্রয়োজন, কারণ এটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে। বাদাম, সবুজ শাক, আনাজে ভিটামিন ই পাওয়া যায়। ইনফেকশন কমাতে সহায়ক ভিটামিন বি-ও এ সময়ে জরুরি। এর জন্য শস্যজাতীয় খাবার, দুধ ও মাংসে ভরসা রাখতে পারেন।
• খনিজ: মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস হিসেবে এটি কাজ করে। ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম এ সময়ে খুব জরুরি। কারণ এরা শরীরে অনাক্রম্যতা তৈরি করে। দরকার জ়িঙ্কও। সেলেনিয়ামের জন্য চিকেন, দুধ ও ডিমে এবং ম্যাগনেশিয়ামের জন্য সবুজ আনাজপাতি ও ডালে ভরসা রাখতে পারেন।
• প্রিবায়োটিক, প্রোবায়োটিক: শরীরের বন্ধু ব্যাকটিরিয়া ও মাইক্রোঅরগ্যানিজ়মের ভারসাম্য বজায় রাখতে এই দু’টি উপাদানই খুব জরুরি। রসুন, পেঁয়াজ, কলা, বার্লি, ওটস, আপেলে পাবেন প্রিবায়োটিক। আর প্রোবায়োটিকের জন্য ভরসা রাখতে পারেন ফারমেন্টেড দুধ এবং টক দইয়ে।
• মশলাপাতি সমান জরুরি: অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানের জন্য মশলাপাতিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কখনও তা সর্দিকাশি সারাতে কার্যকর। কখনও কোলেস্টেরল কমাতেও সহায়ক। তাই রোজকার খাবারেও লবঙ্গ, দারুচিনি, আদা, গোলমরিচ, কাঁচা হলুদ রাখতে হবে।
মনে রাখতে হবে
• সুষম আহারই এ সময়ে সবচেয়ে প্রয়োজন। কার্বসও দরকার শক্তির জোগান দেওয়ার জন্য। তাই ভাত, রুটি পরিমাণ মতো খান।
• অন্য দিকে ফ্যাটের জন্য ভরসা রাখুন ভাল স্নেহে। আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট অর্থাৎ অলিভ অয়েল, সয় অয়েলে ভরসা রাখতে পারেন। মাখন, নারকেল তেল, ক্রিম জাতীয় স্যাচুরেটেড ফ্যাট বাদ দিতে হবে।
• রোজ ৮ থেকে ১০ গ্লাস জল খেতে হবে। এতে ডিহাইড্রেটেড হওয়ার ভয়ও থাকবে না। সুপ, ফলের রস সব মিলিয়ে যেন ৩-৪ লিটার জল গ্রহণ করা হয়, খেয়াল রাখুন। এ সময়ে ডাবের জলও খেতে পারেন। ডাবে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পাওয়া যায়, তা কাজে দেয় ইনস্ট্যান্ট এনার্জি বুস্টার হিসেবেও।
• মার্জারিন, চিজ় স্প্রেড, কুকিজ়, বিস্কিট, ফ্রায়েড ফুড, প্রসেসড ফুড এ সময়ে এড়িয়ে চলতে হবে।
• ফল অবশ্যই খাবেন। সকাল ও বিকেল দু’বেলা অন্তত এক বাটি করে ফল খেতে হবে।
খাবারের প্ল্যান
সকালে আদা, গোলমরিচ, লবঙ্গ, দারুচিনি ও তেজপাতা দিয়ে ফুটিয়ে ১ কাপ চা ও বিস্কিট খান। প্রাতরাশে দু’টি টোস্ট বা হাতে গড়া রুটি বা সুজি, সঙ্গে ১ কাপ সিদ্ধ আনাজ ও ১টি ডিম। সকালে ফলের মধ্যে মুসম্বি ও পেয়ারা রাখতে পারেন। দুপুরে ভাত ৩ কাপ, ডাল ১ কাপ, সব আনাজ দিয়ে একটা তরকারি ২ কাপ, ৭৫ গ্রাম মাছ বা ৭৫ গ্রাম চিকেন বা ৫০ গ্রাম পনির। সঙ্গে ১ কাপ টক দই। সন্ধেবেলা সকালের মতো ১ কাপ চা, সঙ্গে মুড়ি বা সুজি, অল্প ছানা (২৫০ মিলি দুধের)। শসা, পেঁয়াজ দিয়ে কলওঠা ছোলাও খেতে পারেন। রাতে ৩ কাপ ভাত বা ২টি রুিট, ডাল আধ কাপ, মিক্সড ভেজ ১ কাপ ও ৭৫ গ্রাম মাছ বা ৭৫ গ্রাম চিকেন বা ৫০ গ্রাম পনির। আদা, রসুন, হলুদ, লবঙ্গ, দারুচিনি, পাতিলেবু, গোলমরিচ, তেজপাতাও রাখতে হবে রোজকার রান্না বা খাদ্যতালিকায়। তবে শারীরিক সমস্যা অনুযায়ী ডায়েটে বদল হবে।
খুব কড়া ডায়েট তৈরি না করে, নিজের ডায়েট অল্প অদলবদল করে নিতে পারেন। যেগুলো প্রয়োজন সে রকম খাবার জুড়ে, প্রসেসড ফুড বাদ দিন। অনেকের ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বা কিডনির সমস্যা থাকতে পারে। গর্ভবতীও হতে পারেন। তাই খাদ্যতালিকা তৈরি করার আগে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেবেন অবশ্যই।
তথ্য সহায়তা: পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy