‘এমার্জেন্সি নম্বর’, নামে লুকিয়ে নম্বরের পরিচয়। প্রতীকী চিত্র।
হাতে হাতে এখন টাচস্ক্রিন মোবাইল। আর সেই ‘স্পর্শকাতর’ মোবাইলে আচমকা হাত লেগে ডায়াল হয়ে যায় আপৎকালীন নম্বরে। এমন ঘটনা কমবেশি ঘটার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের সকলেরই। আমাদের চোখে তা ধরা পড়লেই ব্যস্ত হয়ে কেটে দিই ফোন। কিন্তু কী এই আপৎকালীন নম্বর? কেনই বা তার প্রয়োজন? জরুরি নম্বরে করা সেই ফোন কল কার কাছে যায়?
‘এমার্জেন্সি নম্বর’, এই নামেই লুকিয়ে নম্বরের পরিচয়। রাস্তাঘাটে, বাড়িতে, সময়ে-অসময়ে আচমকা পড়েছেন কোনও বিপদে। আপনি একা। পাশে দাঁড়ানোর মতো নেই কেউ। অথচ ঠিক সেই মুহূর্তে প্রাণ বাঁচাতে আপনার প্রয়োজন কারও সাহায্য। এই সব ক্ষেত্রে হাতের কাছে থাকা মোবাইলই সঙ্কটমোচনের একমাত্র চাবিকাঠি। সেই মোবাইলে থাকা জরুরি নম্বরে ফোন করে বিপদের কথা জানালে পৌঁছে যাবে সাহায্য। রক্ষা মিলবে বিপদ থেকে।
২০১২ সালের ডিসেম্বর মাস। দিল্লির রাজপথে দুষ্কৃতীরা ধর্ষণ করে খুন করেছিল এক প্যারামেডিক্যাল ছাত্রীকে। সারা দেশে জোরালো প্রভাব ফেলেছিল সেই নির্ভয়া কাণ্ড। সেই ঘটনাকে স্মরণে রেখেই ২০১৯ সালে চালু হয় মোবাইলে আপৎকালীন নম্বর রাখা। তৈরির সময়েই মোবাইলে বন্দি হয়ে যায় আপৎকালীন পরিষেবার নম্বর (ইন বিল্ট), যাতে ‘রং নম্বর’ না হয়। এই নম্বরে ফোন করা যাবে মোবাইল লক হয়ে গেলে। ‘মিটার’ বেড়ে যাওয়ার ভয় নেই। কারণ এই পরিষেবা বিনামূল্যে। আবার নেটওয়ার্ক না থাকলে বা ব্যবহারকারী মোবাইলের পিন নম্বর ভুলে গেলেও ফোন করা যাবে ওই নম্বরে। এমনকি মিসড কল দিলেও হবে কার্যসিদ্ধি। এই সব ক্ষেত্রে মিসড কল পাওয়ার পর অপারেটরের তরফে ফোন করা হয় ঘুরিয়ে। সারা দেশে অন্তত ৯০ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর কাছে রয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ফোন। এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম যুক্ত ফোনে আপৎকালীন নম্বর হল ১১২। এই নম্বরে যাওয়া সমস্ত ফোন কল পরিচিত ‘প্যানিক কল’ হিসাবে। কারণ ১১২ নম্বরটিতে যাওয়া সমস্ত ফোন কলকে দেখা হয় চূড়ান্ত রকমের অগ্রাধিকার দিয়ে। ঠিক যখন আপনার ‘জরুরি, খুব জরুরি দরকার।’
তথ্য ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এই পরিষেবা সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আওতায়। দেশের সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে এই নম্বরে করা যায় ফোন। তাঁর মতে, ১১২ এই আপৎকালীন নম্বরটি আসলে অপারেটরের। কী ভাবে কাজ করে এই পরিষেবা? দেশ জুড়ে এই পরিষেবা ছড়িয়ে রয়েছে জালের মতো। এই নম্বরে ফোন করলে অভিযোগকারীর সমস্যার কথা শুনে তা দ্রুত পাঠিয়ে দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে। যেমন, ১১২ নম্বরে কেউ ফোন করে জানালেন, তিনি বাড়িতে একা এবং আগুন লেগেছে তাঁর বাড়িতে। সেখান থেকে বেরোনোর কোনও উপায় তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। এই কথা ১১২ আপৎকালীন নম্বরে ফোন জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ফোন কল স্থানান্তরিত করা হবে রাজ্য সরকারের তৈরি করা এমার্জেন্সি রেসপন্স সেন্টার (ইআরসি) বা ডিস্ট্রিক্ট কমান্ড সেন্টার (ডিসিসি)-এ। এর পর আপৎকালীন বার্তা পেয়ে দমকল কর্মীরা পৌঁছে যাবেন বিপদগ্রস্তের বাড়িতে। পৌঁছে যাবে ইমার্জেন্সি রেসপন্স ভেহিকলও।
বিভাসের ব্যাখ্যা, মূল অপারেটরের ছাতার তলায় রয়েছে পুলিশ, দমকল, স্বাস্থ্য, নারী নিরাপত্তা, শিশু সুরক্ষা ইত্যাদি নানা বিভাগ। ওই নম্বরে ফোন গেলে ট্র্যাক করা যাবে অভিযোগকারীর পরিচয় এবং লোকেশন। যাতে সহজেই সাহায্য পৌঁছে দেওয়া যায় বিপদগ্রস্তের কাছে। এমনকি কী ধরনের বিপদ, তারও আঁচ পাবেন উদ্ধারকারীরা।
অ্যান্ড্রয়েড ফোন ছাড়াও ভারতের অ্যাপল ফোনে রয়েছে আমেরিকার মতো আপৎকালীন নম্বর ৯১১। এ ছাড়াও রয়েছে আরও একটি আপৎকালীন নম্বর ১১৮। কখনও কখনও মোবাইলের পাওয়ার বাটন ৩ বার তাড়াতাড়ি টিপলে চালু হয়ে যায় প্যানিক কল। আবার সাধারণ ফোনের ৫ অথবা ৯ বাটনটি একটু বেশি সময় ধরে চাপ দিলে চালু হয়ে যায় প্যানিক কল।
অনলাইনেও পাওয়া যায় এমার্জেন্সি পরিষেবা। সেই জন্য এমার্জেন্সি রেসপন্স সাপোর্ট সিস্টেম (ইআরএসএস)-এর ওয়েবসাইটে লগ ইন করে মেল বা এসওএস (সেভ আওয়ার সোলস) বার্তা পাঠানো যেতে পারে।
আপৎকালীন নম্বর হলেও, তা নিয়ে অভিযোগও রয়েছে। বিভাস বলছেন, ‘‘দেশে ফোর জি পরিষেবা আসার পর থেকে ১১২ নম্বরে ফোন করলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা ‘ওয়েটিং’ আসছে, এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। কেউ বিপদগ্রস্ত হয়ে আপৎকালীন নম্বরে ফোন করলে তাঁর ক্ষেত্রে সময়টা একটা বড় বিষয়। তবে এই অসুবিধা টু জি বা থ্রি জি-তে নেই।’’ আবার ২০১৯ সালের একটি তথ্য বলছে, দিল্লিতে ১১২ আপৎকালীন নম্বরটি চালু হওয়ার সপ্তাহ খানেকের মধ্যে শুধুমাত্র দিল্লি পুলিশের কাছে গিয়েছিল দিনে অন্তত ১০ হাজার ভুয়ো কল। তবে এই পরিষেবা চালু হওয়ার পর থেকে আপৎকালীন নম্বরে ফোন করে রক্ষা পেয়েছেন বহু মানুষ। যাঁদের কিছুতেই ‘হারাতে’ দেয়নি ১১২।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy