
যেখানেই জমায়েতের খবর আসছে, সেখানেই পৌঁছোচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। —নিজস্ব চিত্র।
মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। সূত্রের খবর, বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, উপদ্রুত এলাকায় রবিবার সকাল ন’টা থেকে রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে টানা রুট মার্চের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বর্তমানে মালদহ জেলার কালিয়াচকের পল্লার পুর গ্রামে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ধুলিয়ানের অশান্ত অঞ্চলের মানুষেরা। সংখ্যা প্রায় শতাধিক। রাতেই জলপথে মালদহে এসেছিলেন তাঁরা।
ত্রাণ শিবিরে অশান্ত ধুলিয়ানের মানুষেরা। —নিজস্ব চিত্র।
অতি স্পর্শকাতর জায়গা গুলি চিহ্নিত করে আধা সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। মুর্শিদাবাদের সুতি ও শামসেরগঞ্জ থানায় জরুরি ভিত্তিতে প্রস্তুত করে রাখা হচ্ছে আধা সেনা। উপদ্রুত এলাকায় রাতভর চলছে টহলদারিও। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে কথাও বলছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা।
অশান্তি কবলিত এলাকায় শুরু হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ বাহিনীর রুট মার্চ। যেখানেই জটলা কিংবা জমায়েতের খবর আসছে, সেখানেই পৌঁছোচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপারের হাতে জঙ্গিপুরের স্পর্শকাতর এলাকার তালিকা তুলে দিলেন তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান।
মুর্শিদাবাদের সুতি ও শমসেরগঞ্জ থানা এলাকায় পৌঁছল কেন্দ্রীয় বাহিনী। সূত্রের খবর, আধাসেনা মোতায়েন নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে রাজ্য পুলিশের বৈঠক শুরু হয়েছে।
মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব শনিবার রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং ডিজিপি রাজীব কুমারের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে বৈঠক করেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন, ধুলিয়ানে অন্তত ৩০০ বিএসএফ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্য প্রশাসনকে অন্যান্য সংবেদনশীল জেলার উপরেও কড়া নজর রাখতে বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব। প্রয়োজনে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি রাজ্যকে সম্ভাব্য সকল সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে পৌঁছন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। পুলিশ সূত্রে খবর, অল্প সময়ের জন্য তিনি বৈঠক করেছেন মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার সুপার সূর্যপ্রতাপ যাদব ও জেলা পুলিশের অন্যান্য আধিকারিকের সঙ্গে। এর পর সেখান থেকে পৌনে ৮টা মিনিট নাগাদ তিনি জঙ্গিপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। প্রায় একই সময়ে জঙ্গিপুরের উদ্দেশে রওনা দেন বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের দুই শীর্ষ কর্তা। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, রাত ৯টা নাগাদ মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে বিএসএফের সঙ্গে রাজ্য পুলিশের বৈঠক রয়েছে। কী ভাবে আধাসেনা মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে, তার রণকৌশল ঠিক হবে ওই বৈঠকে।
মুর্শিদাবাদের ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গায় অশান্তির অভিযোগ তুলে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার মামলার শুনানি হল বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি রাজা বসু চৌধুরীর বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চে। ওই মামলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
রাজ্যের চারটি জেলা (মুর্শিদাবাদ, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা এবং কলকাতা)-র কিছু অংশে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আর্জি জানান শুভেন্দু। রাজ্যের আইনজীবী শুরুতে তাতে আপত্তি জানান। হাই কোর্টে রাজ্য জানায়, পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার ইতিমধ্যে মুর্শিদাবাদের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর থেকেও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হলে আপত্তি কোথায়, তা জানতে চায় আদালত। শুনানির একটি পর্যায়ে বিচারপতি সেন রাজ্যের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হলে অসুবিধা কোথায়? রাজ্যের ক্ষমতায় তারা (কেন্দ্রীয় বাহিনী) হস্তক্ষেপ করবে না। শুধুমাত্র পুলিশকে সাহায্য করবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। অতীতে ভোট পরবর্তী হিংসা সংক্রান্ত মামলা এবং আরও বেশ কিছু মামলায় যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তা-ও স্মরণ করায় আদালত।
ওয়াকফ আইন নিয়ে বাংলার একাধিক জায়গায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। কোথাও কোথাও তা হিংসাত্মক আকারও নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে শান্তিরক্ষার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার দুপুরে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে তিনি জানিয়েছেন, স্পষ্ট ভাবেই বলা হয়েছে, ‘সেই আইন’কে রাজ্য সরকার সমর্থন করে না। বাংলায় তা বলবৎও হবে না। তা হলে হিংসা কেন? প্রশাসক মমতা এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, হিংসায় যাঁরা উস্কানি দিচ্ছেন, তাঁদের কাউকে রেয়াত করা হবে না।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘‘সেই আইনটি কিন্তু আমরা করিনি। আইনটি কেন্দ্রীয় সরকার করেছে। তাই উত্তর যা চাওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চাইতে হবে।’’ রাজনৈতিক দলের চক্রান্তের কথাও উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লিখেছেন, ‘‘কিছু রাজনৈতিক দল ধর্মকে অপব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছে। তাদের প্ররোচনায় পা দেবেন না। আমি মনে করি, ধর্ম মানে মানবিকতা, সহৃদয়তা, সভ্যতা ও সম্প্রীতি। সকলে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখুন— এই আমার আবেদন।’’
হিংসা, গুন্ডামি বরদাস্ত করবে না পুলিশ। প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ করতেও পিছপা হবে না। মুর্শিদাবাদে গত কয়েক দিনের অশান্তি নিয়ে বার্তা দিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে রাজীব বলেন, ‘‘মানুষের জীবন রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। তাই যেখানে যতটুকু প্রয়োজন পুলিশ পদক্ষেপ করেছে। কিন্তু পুলিশের সংযমকে দুর্বলতা হিসাবে দেখবেন না। প্রয়োজনে কঠোরতম পদক্ষেপ করবে পুলিশ।’’ পাশাপাশি গুজব নিয়েও মানুষকে সতর্ক করেছেন রাজ্য পুলিশের প্রধান। চেয়েছেন সাধারণ মানুষের সহযোগিতা। এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিমের কথায়, ‘‘গুজব তৈরির কারখানা চালানো হচ্ছে। সবাই সতর্ক থাকুন।’’ জাভেদ জানান, এ পর্যন্ত মোট ১১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রাজীব জানিয়েছেন, শুক্রবার সুতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ চার রাউন্ড গুলিও চালিয়েছে। দু’জন জখম হন তাতে। তবে দু’জনেই বিপন্মুক্ত। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। এই প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা চেয়েছেন ডিজি। তিনি বলেন, ‘‘কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। পুলিশকে সহযোগিতা করুন। গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি খারাপ করবেন না।’’ বেসরকারি সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদে অশান্তির ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।
রাজীবের হুঁশিয়ারি, ‘‘চরম পর্যায়ে গেলে আমরাও (পুলিশ) কঠোর এবং কঠিনতম পদক্ষেপ করব। গুন্ডামি বরদাস্ত করব না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মানুষের জীবন রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। প্রাণ দেওয়ার প্রয়োজন হলে পুলিশ প্রাণ দেবে। কারণ, সেটা আমাদের কর্তব্য। আর যাঁরা বদমায়েশি করছেন, তাঁরা সাবধান হোন। আগুন এবং মানুষের আবেগ নিয়ে খেলবেন না।’’ তিনি জানান, পুলিশের কন্ট্রোল রুম খোলা থাকছে। গন্ডগোল হলে ফোন করে থানায় খবর দিতে পারেন যে কেউ। পুলিশ সামলাবে। রাজীব এ-ও জানান, সেনা যা করতে পারে পুলিশ সেটা পারে না। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ট্রিগার হ্যাপি নয়। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে আমাদের কড়া পদক্ষেপ করতে হচ্ছে।’’
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ ও তার জেরে অশান্তির ঘটনা অব্যাহত। আইন বাতিলের দাবিতে শুক্রবার বিকেলে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল মুর্শিদাবাদের সুতি ও উমরপুর।বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়েছে। অভিযোগ উড়িয়ে পুলিশের পাল্টা দাবি, তাদের উপরেই ইট-পাটকেল, বোমা-গুলি ছোড়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা একটি সরকারি বাস, একটি ছোট গাড়ি, তিনটি মোটরবাইক ও ট্র্যাফিক গার্ডের অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। বিক্ষোভ এবং গোলমাল থামাতে নবান্নের তরফে এডিজি সিআইএফ, এএসপি মালদহ-সহ চার জন আইপিএস-কে সুতিতে পাঠানো হয়েছে। বাড়তি বাহিনী পাঠানো হয়েছে ব্যারাকপুর এবং বহরমপুর থেকেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy