Advertisement
০৬ জানুয়ারি ২০২৫
Memory

মরচে না ধরে যেন স্মৃতিতে

বিশ্ব জুড়ে ক্রমশ বাড়ছে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। মস্তিষ্ক সচল রাখতে তাই সময় থাকতেই সতর্ক পদক্ষেপ জরুরি

নবনীতা দত্ত
শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:২০
Share: Save:

এ দেশ তথা সারা বিশ্বে ক্রমশ বাড়ছে ডিমেনশিয়া ও অ্যালঝাইমার্স রোগের প্রকোপ। একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা বলছে ২০৫০-এর মধ্যে বিশ্ব জুড়ে ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পাবে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, অচিরেই এই রোগ মহামারির আকার নিতে পারে। প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা যত বাড়ছে তাঁদের মধ্যে ডিমেনশিয়া ও অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। কয়েক দশক আগেও হয়তো এত ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কথা শোনা যেত না। কিন্তু এখন চেনাশোনা গণ্ডির মধ্যে, অনেকের পরিবারেই এমন রোগে আক্রান্তরা রয়েছেন। গোড়া থেকেই যদি কিছু প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ করা যায়, তা হলে এই রোগ দূরে রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।

ডিমেনশিয়া সারে না, তার গতি কমানো যায়

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, এই অসুখটা পুরোপুরি সারানোর মতো চিকিৎসা এখনও পর্যন্ত নেই। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আবীর মুখোপাধ্যায় বলছেন, “ডিমেনশিয়ার কোনও ডিজ়িজ় মডিফায়িং মেডিকেশন নেই। অর্থাৎ এমন ওষুধ নেই, যা এই রোগ সারাতে পারে। ওষুধের মাধ্যমে রোগের গতিটা একটু কমানো যায়। এ ক্ষেত্রে আর একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, দেশে প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা বেশি হলে সেই দেশে এই রোগের হার বেশি। যে কোনও উন্নত দেশ, যেমন জাপান এখন ওল্ড কান্ট্রি হিসেবে গণ্য হয়। কারণ সেখানে বার্থরেট কমে গিয়েছে। এ দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যাও বেশি। ফলে সে সব দেশে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তের হারও বেশি। তুলনামূলক ভাবে আমাদের দেশকে এখনও ইয়ং কান্ট্রি হিসেবে গণ্য করা হয়। এখানকার জন্মহার অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। কিন্তু যত দিন যাবে, এ দেশেও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যদি না আমরা এখন থেকেই সচেতন হই।”

ডিমেনশিয়া আটকানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ

তার জন্য কম বয়স থেকেই সচেতন হতে হবে। মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেট একটি গবেষণায় ইতিমধ্যেই ১২টি রিস্ক ফ্যাক্টর চিহ্নিত করেছে। সেই ফ্যাক্টরগুলো বিবেচনা করেই প্রিভেনটিভ মেজ়ার নিতে হবে। চিকিৎসক আবীর মুখোপাধ্যায় বললেন, “এগুলোকে আবার মেডিক্যাল, সোশ্যাল ও লাইফস্টাইল ফ্যাক্টর হিসেবে ভাগ করা যায়। যেমন হাইপারটেনশন, ওবেসিটি, ডায়াবিটিস, হিয়ারিং লস, ডিপ্রেশন, ট্রম্যাটিক ব্রেন ইনজুরি— এই ছ’টি হল মেডিক্যাল কারণ। জীবনযাপনের দিক থেকে দেখতে গেলে ফিজ়িক্যাল ইনঅ্যাক্টিভিটি, ধূমপান, অ্যালকোহলের নেশাসক্তি আর সোশ্যাল ফ্যাক্টর হিসেবে দারিদ্র, শিক্ষার অভাব, বায়ুদূষণকে চিহ্নিত করা হয়। এগুলোই বিভিন্ন ভাবে ডিমেনশিয়ার জন্য দায়ী। যেমন বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে এয়ার পলিউট্যান্ট যদি শরীরে ঢোকে, তখন সেগুলোও ক্ষতি করে। দারিদ্র আর শিক্ষার অভাব আবার একে অপরের সঙ্গে যুক্ত।”

সেই জন্য কম বয়স থেকে বেশি বয়স পর্যন্ত মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে প্রত্যেকেরই এক্সারসাইজ় জরুরি। তবে এই ফ্যাক্টরগুলির সঙ্গে সম্প্রতি ল্যানসেট আরও দু’টি রিস্ক ফ্যাক্টর সংযোজন করেছে। তার মধ্যে একটি হল আনট্রিটেড ভিশন লস (যেমন ক্যাটারাক্ট, গ্লকোমা) এবং এলডিএল কোলেস্টেরল। এর মধ্যে এলডিএল কোলেস্টেরল ফ্যাক্টরটা আবার কার্ডিয়াক রিস্কও বটে! তাই ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করার জন্য কোনও নির্দিষ্ট বয়স নয়, বরং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কম বয়স থেকেই এই ফ্যাক্টরগুলো নিয়ন্ত্রণ করেই চলতে হবে।

কী কী পদক্ষেপ করা যেতে পারে

  • নিয়মিত কাগজ পড়া, বই পড়া, পাজ়ল সলভ করা, সুডোকু-শব্দছক করার মতো ছোট ছোট অভ্যেস বজায় রাখা যায়। এতেই অনেকটা কাজ হবে।
  • যে কোনও নেশা ছাড়তে হবে। অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যালকোহল সেবন চলবে না। এ ক্ষেত্রে আবীর মুখোপাধ্যায় বলছেন, “মাঝেমধ্যে তা-ও চলতে পারে। কিন্তু সপ্তাহে অ্যালকোহল সেবনের পরিমাণ যেন ২১ ইউনিটের বেশি না হয়।”
  • চল্লিশের কাছাকাছি বয়স হলেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। হাইপারটেনশন যেন গ্রাস না করে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খেতে হবে।
  • ধূমপান বন্ধ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে প্যাসিভ স্মোকিংয়ের শিকার না হন। সেকেন্ড-হ্যান্ড টোব্যাকো স্মোকিংও চলবে না।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ওবেসিটি দেখা দিলে ওজন কমিয়ে ফেলতে হবে।
  • শ্রবণশক্তি সুস্থ রাখতে খুব কোলাহল, হর্ন, সাউন্ডের জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে। দিনের বেশির ভাগ সময়ে কানে ইয়ারফোন গুঁজে জোরে গান শোনা বা সিরিজ় দেখাও কমাতে হবে। আর শ্রবণশক্তি হ্রাস পাচ্ছে মনে হলে তা ফেলে রাখবেন না। দরকারে হিয়ারিং এড ব্যবহার করুন।

আর একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, ডিমেনশিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেলেও অনেক সময়ে পরিবারের অন্য সদস্যরা তা এড়িয়ে যান। অনেক ক্ষেত্রে বয়স হয়েছে ভেবে বিষয়টায় সে ভাবে আমল দেন না। ফলে রোগ শনাক্ত হতেই অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যায়। তাই ডিমেনশিয়ার লক্ষণগুলো জেনে রাখা দরকার। রোজ করেন এমন কাজ সম্পূর্ণ করতে না পারলে, কথা বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেললে, চেনাজানা জায়গা বা বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করলেও উত্তরে দ্বিধা থাকলে, অহেতুক ঘরের মধ্যে ঘুরে বেড়ানোর মতো কিছু লক্ষণ দেখা গেলেই সতর্ক হন। যত আগে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন, তত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু হবে। আর এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, পরিবারের সদস্যদের লড়াইটা বেশি। কারণ ডিমেনশিয়া আক্রান্ত রোগীরা কখন খাচ্ছেন, কী করছেন বা করবেন... কোনও কিছুই ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কেয়ারগিভারের সাহায্য নিতে পারেন। শহরে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তদের নিয়ে অনেক সংস্থাও কাজ করছে। প্রয়োজনে তেমন সংস্থার সাহায্য নিতে পারেন।


অন্য বিষয়গুলি:

Memory Alzheimer's Disease
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy