রক্তচাপের সমস্যা বয়স্কদেরই কেবল হয়, এই ধারণাকে আর ঠিক বলা যাবে না। রক্তচাপের তারতম্যে এখন বেশি ভুগছেন কমবয়সিরাই। রাতে কম ঘুম, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, অতিরিক্ত নেশার কবলে পড়ে আজ রক্তচাপ বাড়ছে, তো কাল কমছে। কেউ কেউ তো পাকাপাকি ভাবে হাইপারটেনশনের রোগী। ব্যাগে ওষুধ নিয়েই ঘুরতে হয়। অনেকেই ভাবেন, ওষুধ খেয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে আর সমস্যা হবে না। তা কিন্তু নয়। রক্তচাপের হেরফের যে শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে, তা জানা নেই বেশির ভাগেরই। শুনলে চমকে উঠতে হয়, উচ্চ রক্তচাপের রোগী কিন্তু ভবিষ্যতে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিনাশের শিকারও হতে পারেন।
হাইপারটেনশনের সঙ্গে স্মৃতিনাশের যোগাযোগ কোথায়, এই নিয়ে আমেরিকা ও চিনের গবেষকেরা গত কয়েক বছর ধরেই গবেষণা চালাচ্ছেন। প্রায় ৩৩ হাজার রোগীর উপরে সমীক্ষা চালিয়ে তাঁরা দাবি করেছেন, উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে স্মৃতিনাশের নিবিড় যোগাযোগ আছে। কী ভাবে? গবেষকেরা ৪০ বছর ও তার বেশি বয়সি হাইপারটেনশনের রোগীদের সমীক্ষাটি চালিয়েছেন। রোগীদের দু’টি দলে ভাগ করেছেন। ১৭ হাজার রোগীকে নিয়মিত রক্তচাপের ওষুধ খাইয়ে, সুষম খাবার ও জীবনযাপনে বদল এনে দেখেছেন, তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক আছে। বাকিদের কোনও রকম যত্ন নেওয়া হয়নি। বছর চারেক পরে দেখা গিয়েছে, প্রথম দলের ৬৬৮ জন যাঁদের ভাল রকম যত্ন নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের স্মৃতিনাশের ঝুঁকি ১৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। অন্য দলটির ৭৩৪ জন রোগী রক্তচাপের হেরফেরের কারণে স্মৃতিনাশের শিকার হয়েছেন।
আরও পড়ুন:
রক্তচাপ বেশি হলেই যে স্মৃতিনাশে ভুগতে হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে আশঙ্কা থেকেই যায়। গবেষকদের ব্যাখ্যা, রক্তচাপ বাড়লে রক্তবাহী ধমনীগুলিতে রক্ত চলাচলের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। রক্তনালি নালিগুলি সঙ্কুচিত হয় বা শক্ত হয়ে যায়। ফলে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। দিনের পর দিন মস্তিষ্কে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ কমে গেলে মস্তিষ্কের কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনও দেখা গিয়েছে, হাইপারটেনশনের রোগীদের মস্তিষ্কের রক্তজালিকাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই কারণে আচমকা রক্তনালি ব্লক হয়ে গিয়ে মিনি স্ট্রোক বা ‘ট্র্যানসিয়েন্ট ইসকিমিক অ্যাটাক’ বা ‘টিআইএ’ হতে দেখা যায়। আর স্ট্রোকের রোগীদের ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা হলে স্নায়বিক রোগও হতে পারে।
সমীক্ষা বলছে, ভারতে প্রতি তিন জন প্রাপ্তবয়স্কের এক জন উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি। বাড়তি ওজন কমানো, সুষম আহার, পর্যাপ্ত ঘুম ও নিয়মিত শরীরচর্চা করলেই রক্তচাপ বশে থাকবে।