Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Varicose Veins

শিরা ফুলে ফিনকি দিয়ে রক্ত, কী করবেন ভেরিকোজ় ভেনে?

এই অসুখে কোন কোন লক্ষণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে? এই রোগের চিকিৎসা কী? চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে আলোচনা করা হল বিশদে

An image of veins

বেশ কয়েক বছর ধরেই এই অসুখের নাম পরিচিত মানুষের কাছে। তবে ঠিক কী কারণে এই অসুখের প্রাদুর্ভাব, তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই অনেকেরই। ‌ প্রতীকী ছবি।

শ্রেয়া ঠাকুর
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৩ ০৮:৫৪
Share: Save:

বছর পঞ্চাশ বয়স হয়েছে রমা বসুমল্লিকের। শহরের এক স্কুলে বায়োলজি পড়ান তিনি, টানা দাঁড়িয়ে ক্লাস করাতে না পারলে ঠিক আশ মেটে না। সে দিন স্কুল থেকেই ফিরছিলেন, হঠাৎ পায়ের কাফ মাসলের পিছন দিকে ভিজে ঠেকল। হাত দিতেই দেখলেন— রক্ত! আতঙ্ক নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতেই আবিষ্কৃত হল, ভেরিকোজ় ভেনের সমস্যায় আক্রান্ত তিনি।

বেশ কয়েক বছর ধরেই এই অসুখের নাম পরিচিত মানুষের কাছে। তবে ঠিক কী কারণে এই অসুখের প্রাদুর্ভাব, তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই অনেকেরই। ‌এই প্রসঙ্গেই কার্ডিয়োথোরাসিক ও ভাস্কুলার সার্জন ভবতোষ বিশ্বাস জানালেন, অসুখটা পরিচিত হলেও ঠিক চিকিৎসকের কাছে মানুষ আসেন অনেক পরে। প্রথমে অন্য অসুখের লক্ষণ ভেবে সেই অনুসারে চিকিৎসা শুরু করেন। পরে পরিস্থিতি জটিল হয়ে গেলে খোঁজ পড়ে ঠিক চিকিৎসকের— অর্থাৎ কার্ডিয়োথোরাসিক ও ভাস্কুলার সার্জনের।

কাদের হয় এই অসুখ?

ডা. বিশ্বাস জানালেন, ভেরিকোজ় ভেনের সমস্যা আদতে একটা পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজ়িজ় বা ভেনাস ডিজ়িজ়। সাধারণত, দিনের বেশির ভাগ সময় দাঁড়িয়ে কাজ করেন যাঁরা, তাঁদেরই এই অসুখটির সম্ভাবনা থাকে বেশি। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কর্মী, শেফ, শিক্ষক-শিক্ষিকা, বাস কন্ডাক্টর, কারখানার শ্রমিক, গবেষক বিবিধ পেশার মানুষদের হতে পারে এই অসুখ।

অসুখের লক্ষণ কী কী?

ভেরিকোজ় ভেনের সমস্যা ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে। প্রথমে পা ফুলতে শুরু করে। বিশেষত খানিকক্ষণ দাঁড়ানোর পরেই পা ফুলতে শুরু করে। কেউ মোজা পরলে আরও ভাল করে বোঝা যায়, মোজার ইলাস্টিক যেখানে থাকে সেটা ত্বকের উপরে কেটে বসে যায়। এর পর শুরু হয় হালকা চুলকানি, স্বল্প ঘা। এই পরিস্থিতিতে মানুষ ত্বকের ডাক্তার বা জেনারেল ফিজ়িশিয়ানের কাছে যান। বিষয়টা তলিয়ে দেখেন না। এর পর ঘা বাড়তে শুরু করে, সেই সঙ্গে পায়ের ত্বকের রং বদলাতে শুরু করে। রোম ঝরে যায়। শিরাগুলি ফুলে ওঠার পরে ত্বকের উপরে গাঢ় বেগুনি বা নীল রঙের শিরার আঁকাবাঁকা রেখা দেখা যায়। এর পরে শুরু হয় ঘা থেকে রক্তপাত। অনেক সময়ে ফিনকি দিয়েও রক্ত বেরোয়। ‘ডিসট্রেস ব্লিডিং’ অর্থাৎ হঠাৎ রক্তপাত হয়ে বিছানা ভিজে যেতে পারে। সকালে ঘুম থেকে উঠে রোগী হয়তো দেখলেন রক্তে ভিজে গিয়েছে বিছানা, এটা তাঁর পক্ষে মানসিক চাপও। তবে যেহেতু রক্ত শিরা থেকে বেরোয়, তাই এই রক্তপাতে প্রাণহানির আশঙ্কা প্রাথমিক ভাবে থাকে না।

অসুখের কারণ

মানবদেহের পায়ের শিরাগুলি দু’টি সারিতে বিভক্ত। এই দুই সারির সংযোগকারী অংশে মইয়ের মতো থাকে আন্তঃশিরা। এই শিরাগুলির মধ্যে একমুখী ভালভ রয়েছে। অর্থাৎ এই শিরাগুলির মধ্যে রক্ত দেহের সারফেস তথা উপরিতল থেকে গভীর শিরার দিকেই যেতে পারে। রক্তপ্রবাহের সময়ে, কোনও কারণে (অনেক সময় পেটের মধ্যে টিউমর, গ্ল্যান্ড যদি প্রধান শিরাকে আটকে দেয়, রক্তপ্রবাহ বাধা পায়।) যদি শিরার মধ্যে থাকা ভালভ ঠিক মতো কাজ না করে বা দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন রক্ত বিপরীত দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করে। এতে শিরাগুলি প্রসারিত হতে থাকে। ফলে গভীর শিরা থেকে রক্ত চলে আসে ত্বকের উপরিতলে। রক্ত জমে ফুলে ওঠে রক্তনালি। তার পরেই হতে থাকে আলসার। এ বার যখন মানুষ দাঁড়িয়ে থাকেন, তখন পায়ের শিরার উপর যান্ত্রিক চাপ পড়ে, তাতে সমস্যা আরও বাড়তে থাকে। শরীরের উপরিতলে জমতে জমতে একটা সময় ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে শুরু করে।

আর একটা বিষয় হল, পায়ের রক্ত মূলত প্রবাহিত হয় কুঁচকি থেকে গোড়ালি পর্যন্ত একটি মূল শিরা দিয়ে। কুঁচকির কাছে স্যাফেনোফিমোরাল জাংশন দিয়ে সারা দেহের রক্ত সেই শিরায় প্রবেশ করে। তার আগেও অপ্রধান শিরা, নানা রক্তবাহপথে রক্ত পৌঁছয় মূল শিরাতে। সেই পথের মাঝখানে থাকে একমুখী পারফোরেটর।এই পারফোরেটর খারাপ হলেও হতে পারে ভেরিকোজ় ভেন।

  • জন্মগত: জন্মগত ভাবে কারও শিরার গঠনের জন্য অসুখটি হতে পারে। বিভিন্ন মানুষের পায়ের পেশি ও শিরার গঠন ও ক্ষমতা বিভিন্ন হয়। সেই নিরিখে কেউ বেশিক্ষণ দাঁড়ালেও তার কিছু হয় না। কারও আবার অল্পক্ষণ দাঁড়ালেই সমস্যা শুরু হয়।
  • অন্য কারণসমূহ: ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, ওবেসিটি থাকলে এই অসুখের সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। এমনকি মাত্রাতিরিক্ত ধূমপানও ডেকে আনতে পারে এই বিপদ। এ ছাড়া শিরার সমস্যার কারণেই এই অসুখ হতে পারে। দেখা যেতে পারে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের ক্ষেত্রেও। এর সঙ্গে যোগ হয় অসুখটি চিনতে না পেরে ফেলে রাখার প্রবণতা।

তা হলে চিকিৎসা?

ডা. বিশ্বাস জানালেন প্রথমেই আলট্রাসোনোগ্রাফি-ডপলার টেস্ট করতে হবে। তাতে শিরার মধ্যে রক্তপ্রবাহের গতি ও দিকটি বোঝা যায়। সেই অনুসারে শুরু হবে চিকিৎসা। পা তুলে টানা বিশ্রাম, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পায়ের যত্ন নিয়মিত নিলে সাময়িক ভাবে অসুখটি নিয়ন্ত্রণে আসে, যদি না গভীর ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। পায়ের নীচে বালিশ দিয়ে বিশ্রাম নিতে বলা হয় এই, এতে পায়ের শিরা হৃৎপিন্ডের থেকে উঁচু অবস্থানে থাকে। রক্তের বিপরীত প্রবাহ ও চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পাশাপাশি, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে ডায়াবিটিস ও হাইপারটেনশন। পায়ের ঘা শুকিয়ে এলে বড় ক্রেপ ব্যান্ডেজ দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখতে হবে গোড়ালি থেকে কুঁচকি পর্যন্ত। তবেএই চিকিৎসা চলে ভেরিকোজ়ভেনের প্রাথমিক অবস্থায় বা মাঝারি আক্রান্ত হওয়ার সমস্যায়। অসুখ আরও ছড়িয়ে পড়লে প্রাথমিক ভাবে এই চিকিৎসার পরে অস্ত্রোপচারের দিকে যেতে হবে। অস্ত্রোপচারের পরেও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। তবে পারফোরেটর গুরুতর আক্রান্ত হলে তা সারানো কার্যত অসম্ভব।

ফিরে আসতে পারে কি ‌এই অসুখ?

ডা. বিশ্বাস জানালেন, সাধারণত তিনটে কারণে অসুখটি ফিরে আসতে পারে।

  • অস্ত্রোপচার যথাযথ হয়নি।
  • আগের শিরা সারিয়ে তোলা হলেও নতুন করে একাধিক শিরা আক্রান্ত হয়েছে।
  • লাইফস্টাইল নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি ঠিক মতো। ওজন, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিস ও হাইপারটেনশন।

লেজ়ার অস্ত্রোপচার বা কি-হোল অস্ত্রোপচার করাতে চাইলে:

ডা. বিশ্বাস জানালেন, অসুখ ছড়িয়ে পড়লে অস্ত্রোপচার (ওপেন সার্জারি) করা সমীচীন। বিশেষত যে রোগীকে সেরে উঠে ফের দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করতে হবে তার ক্ষেত্রে। তবে, রোগের প্রথম পর্যায়ে লেজ়ার বা কি-হোল অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Vericose Veins Health Tips
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy