প্রতীকী ছবি।
চালু হয়ে গিয়েছে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়া। অন্য দিকে করোনার নতুন স্ট্রেন ক্রমশ ভ্রুকুটি হানছে। এই পরিস্থিতিতে কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে— নতুন স্ট্রেনের কারণেই কি করোনা বাড়ছে? নাকি মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব দেখা দিয়েছে? ভ্যাকসিনই বা কতটা সুরক্ষিত?
আসলে বিষয়গুলি তর্কসাপেক্ষ। মহারাষ্ট্রে পাওয়া নতুন ভারতীয় স্ট্রেন আরও বেশি সংক্রামক ও মারাত্মক হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন এইমসের প্রধান রণদীপ গুলেরিয়া। নভেম্বরের পর থেকে গোটা দেশে করোনা সংক্রমণের হার কমলেও কেরল ও মহারাষ্ট্রে তা সে ভাবে কমেনি। গত কয়েক সপ্তাহে মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাব, ছত্তীসগঢ় এবং জম্মু-কাশ্মীরে কোভিড সংক্রমণ বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত করোনা আয়ত্তে রয়েছে ঠিকই, কিন্তু ভোট ও বিয়ের মরসুমে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, সেই চিন্তায় চিকিৎসকমহল।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এ রাজ্যে করোনা সংক্রমণের গ্রাফ ওঠানামা করেছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলছেন, ‘‘অতিমারিতে দ্বিতীয় ঢেউ আসে। সংক্রমণের হার কমে গিয়ে ফের বাড়তে শুরু করে। সংক্রমণের হার শূন্য হয়ে গেলেও, রোগটি নির্মূল হয়ে গিয়েছে এমন ভাবার কারণ নেই। এই ভাইরাস ক্রমাগত নিজের মধ্যে বদল আনছে, যাকে আমরা মিউটেশন বলি। এই মিউটেটেড ভাইরাস আগের চেয়েও বেশি শক্তিশালী। আর করোনার গ্রাফ নীচের দিকে নামার পর থেকেই মানুষের মধ্যে গা-ছাড়া মনোভাব দেখা দিচ্ছে, যার ফল কিন্তু সাঙ্ঘাতিক হতে পারে।’’ সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় আমাদের হাতে। অতিমারির প্রকোপ শুরুর দিকের নিয়মগুলোই মানতে হবে। মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব, হাত ধোয়া এবং বাইরে থেকে ফিরে জামাকাপড় ছেড়ে ফেলা। আর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভিড়ে যাওয়া যাবে না।
ভ্যাকসিন সংক্রান্ত কিছু ধারণা
পয়লা মার্চ থেকে শুরু হয়েছে প্রবীণদের ভ্যাকসিন দেওয়া। ৬০ বছরের বেশি এবং ৪৫ বছরের বেশি বয়সি, যাঁদের কো-মর্বিডিটি রয়েছে, তাঁরা প্রতিষেধক পাবেন। কী ভাবে নেবেন, প্রক্রিয়া কী... সে সব প্রশ্ন তো রয়েছেই, তার সঙ্গে ভ্যাকসিন ঘিরে নানা বিভ্রান্তিও ছড়াচ্ছে। প্রতিষেধক নেওয়ার পরে মৃত্যুর খবর শোনা গিয়েছে। এতে অনেক প্রবীণই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলছেন, ‘‘ভ্যাকসিন নেওয়ার কারণেই যে মৃত্যু ঘটেছে, এমন তথ্য কিন্তু আমাদের হাতে নেই। হতেই পারে তিনি অন্য কোনও জটিল অসুখে ভুগছিলেন। বিষয়টি অনুসন্ধান সাপেক্ষ।’’ একই বক্তব্য বিশিষ্ট কার্ডিয়োলজিস্ট কুণাল সরকারের।
কোন কোন অসুখ থাকলে ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত নয়? ‘‘এমন কোনও অসুখ নেই যাতে ভ্যাকসিন নিলে সমস্যা হবে। কারও যদি খুব বেশি রকমের ড্রাগ অ্যালার্জি থাকে, মানে ওষুধ খেলে শ্বাসকষ্ট প্রচণ্ড বেড়ে যায়, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অল্প অ্যালার্জিতে ভ্যাকসিন নিলে সমস্যা হবে না,’’ বক্তব্য চিকিৎসক কুণাল সরকারের।
অ্যাসপিরিন বা ব্লাড থিনার জাতীয় ওষুধ যাঁরা খান, তাঁদের প্রতিষেধকে সমস্যা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ডা. দলুই বলছেন, ‘‘এ সব ক্ষেত্রে প্রতিষেধক নেওয়ার আগে-পরে এক-দু’দিন ব্লাড থিনার জাতীয় ওষুধ খাবেন না। আসলে সমস্যা কিছু নেই। ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরে এঁদের একটু বেশি ব্লাড বেরোতে পারে। সে ক্ষেত্রে একটু বেশিক্ষণ ওই জায়গাটা চেপে ধরে রাখলেই হবে।’’
ক্যানসার রোগী, ডায়ালিসিস চলছে বা অন্য জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কি প্রতিষেধক নেওয়া উচিত? ‘‘আরও বেশি করে নেওয়া উচিত। ক্যানসার পেশেন্ট বা খুব অসুস্থ কোনও ব্যক্তির যদি কোভিড হয়, সেটা আরও বেশি মারাত্মক হবে,’’ মত ডা. অনির্বাণ দলুইয়ের।
গর্ভবতী মায়েরা করোনা ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না, বলেও শোনা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এটিও ভ্রান্ত ধারণা। ডা. কুণাল সরকার জানালেন, ট্রায়ালের সময়ে গর্ভবতী মহিলার উপরে প্রয়োগ করা হয়নি বলেই হয়তো এই ধারণা ছড়াচ্ছে। কিন্তু এর পিছনে কোনও বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই।
যাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডি আছে বা করোনা হয়ে গিয়েছে, তাঁদের কি প্রতিষেধক জরুরি? এক বার সংক্রমিত হলেই যে সেই ব্যক্তির আর করোনা হবে না, তা নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়। প্রতিটি ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা আলাদা। তাই করোনা থেকে সেরে উঠলেও ভ্যাকসিন নেওয়া প্রয়োজন। আর প্রতিষেধকের প্রতিটি ডোজ়ই নিতে হবে। কারও ইমিউনিটি বেশি মানেই তাঁর করোনা হবে না, এটিও ভুল ধারণা। আপনার শরীর এই ভাইরাসটির সঙ্গে পরিচিত নয়। তাই স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিরও কিন্তু করোনা হতে পারে।
ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়েও ধন্দ আছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, প্রতিষেধক নির্দিষ্ট সময় অন্তর এবং পুরো ডোজ় নিতে হবে। প্রতিষেধকের ক্ষমতা যত দিন থাকবে, তত দিন করোনা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
চিকিৎসক মহল একবাক্যে ভ্যাকসিন নেওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন। যাঁদের জটিল অসুখ রয়েছে, তাঁরা নাম নথিভুক্ত করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেন যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, তার দায়িত্ব কিন্তু আমজনতার। করোনাবিধি মেনে চললে এই রোগ থেকে মুক্ত হতে সময় লাগবে না, আশ্বাস দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy