একা থাকার বোধকে বদলাতে গেলে তাই প্রথমেই পরিবর্তন আনতে হয় মনোজগতে। ছবি: আইস্টক।
একাকীত্ব মনের এক গভীর সমস্যা৷ কেউ একা থেকেও ‘একা’ নন৷ কেউ সব থেকেও ‘একা’৷ মন যা বলবে, আপনি আসলে তা-ই৷ কেউ একাকীত্বের মুহূর্ত ভরিয়ে তোলেন গানে–কবিতায়–কাজে বা অন্য ভাল লাগায়, কেউ ভুগতে থাকেন অনিশ্চয়তায়৷ একা থাকার দুঃখে, ভয়ে, হতাশায় মুহ্যমান হয়ে যান কেউ৷ কারও কাছে আবার সেটাই স্বাধীনতা৷
কাছের মানুষ দূরে সরে গেলে দুঃখের সেই অবসর কাজে ভরিয়ে তোলেন কেউ৷ মন তৈরি করে নেন৷ কেউ অভাব বোধে ভোগেন জীবনভর৷ এই যে বৈপরীত্ব তার মূলে রয়েছে মানুষটির ব্যক্তিত্ব, যার কিছুটা তাঁর একেবারে নিজস্ব, কিছুর কারণ লুকিয়ে আছে বেড়ে ওঠার পরিবেশে, শিক্ষাদীক্ষায়, পারিপার্শ্বিকে৷
এই বোধকে বদলাতে গেলে তাই প্রথমেই পরিবর্তন আনতে হয় মনোজগতে, বদলাতে হয় ঘটনার প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী৷ প্রথমে যুক্তিকে সঙ্গী করে৷ তার পর ধীরে ধীরে নানা অভ্যাসের মাধ্যমে আবেগকে তার সঙ্গে যুক্ত করে৷ এর বিভিন্ন ধাপও রয়েছে৷ জানেন সে সব?
আরও পড়ুন: পেটের মেদ নিয়ে দুশ্চিন্তা? প্রতি দিন এই সব ব্যায়ামেই ঝরিয়ে ফেলুন দ্রুত
একা থাকলে প্রথমেই যে চিন্তা মনে আসে তা হল, বিপদে কাকে পাশে পাব? অমূলক চিন্তা৷ কারণ, আপনি যদি সব সময় সবার পাশে থাকেন, তাঁরাও আপনার বিপদে পাশে থাকবেন৷ কাজেই স্বার্থপর না হলে বিপদে সঙ্গীর অভাব হবে না৷ গলাগলি করে থাকার ইচ্ছে না মিটলেই যদি ভাবেন একা হয়ে গেলেন, তা হলে বিপদ৷ কারণ সবার কাছে সম্পর্কের সংজ্ঞা এক নয়৷ অন্য জন হয়তো এত মিলমিশ ভালবাসেন না, শ্বাস ফেলার অবসর চান৷ তাঁকে সেটা দিয়ে দেখুন, আখেরে লাভই হবে৷ হয়তো তিনি আরও কাছে চলে আসবেন৷ সম্পর্কের গভীরতা বাড়বে৷ কারণ ঘ্যানঘ্যান করে বা দোষারোপ করে আর যাই হোক, নৈকট্য আদায় করা যায় না৷ একা হতে না চাইলে কোনও সম্পর্কেরই বেশি গভীরে যাবেন না৷ একটু দূরত্ব রাখুন৷ তাতে হতাশা আসে কম৷ সব দিক বজায় থাকে৷ হঠাৎ খুব একা লাগলে কী কী করলে একাকীত্ব দূর হতে পারে তার ফর্দ বানান৷ প্রায়োরিটি লিস্ট৷ স্বামী/স্ত্রী বা প্রেমিক/প্রেমিকার সঙ্গ হয়তো এক নম্বরে৷ তাঁকে পাওয়া গেল না৷ দু’নম্বরে কী আছে দেখুন৷ সন্তান, বন্ধু৷ হল না? সিনেমা, থিয়েটার, ঘুরে বেড়ানো৷ তাও হল না? টিভি দেখুন, গান শুনুন বা বই পড়ুন৷ ইচ্ছে করছে না? তা হলে দেখুন চার নম্বরে কী আছে৷ পাঁচ নম্বরে? কিছু না কিছু তো হবেই৷ যা পাচ্ছেন, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করুন৷
আরও পড়ুন: কালো জিরে দিয়েই সামলাতে পারেন নানা অসুখ, এই মশলার এ সব গুণের কথা জানতেন?
মন মানছে না? তা হলে শুনুন, পাওয়ার ব্যাপারে বেশি ছটফট করলে কিন্তু একাকীত্ব এড়াতে পারবেন না৷ আজ যা চাইছেন তা কাল পেলে কী এমন ক্ষতি, ভেবে দেখুন৷ ভাল করে ভাবলেই বুঝতে পারবেন ক্ষতি আসলে কিছু নেই৷ এ আপনার অস্থিরতা, একমুখী ভাবনা৷ কাজেই কষ্ট পেতে না চাইলে একটু নমনীয় করুন নিজেকে৷ একাকীত্ব বোধের সঙ্গে কখনও মিশে থাকে দুশ্চিন্তা, অশান্তি৷ ব্যস্ত থাকলে তা সব সময় সামনে আসে না৷ একা হলেই মনকে চঞ্চল করে তোলে৷ এ রকম হলে প্রধান কাজ টেনশন কমানো৷ কীভাবে করবেন তা জেনে নিন মনোবিদের কাছে৷ একাকীত্বের সময়টাকে কাজে লাগান৷ অর্থকরী কাজ করুন, এতে সময়ও কাটবে, হাতে টাকাপয়সা এলে আগ্রহও বাড়বে। সমমানসিকতার মানুষের সঙ্গে মেলামেশাও বাড়ান৷ আড্ডার মধ্যমণি হতে চাইলে একটু পড়াশোনা করুন৷ ভাল সিনেমা–থিয়েটার দেখুন৷ খেলা বা দেশবিদেশের খবরাখবর রাখতে পারলে ভাল৷ রসিকতার ভাঁড়ার পূর্ণ হলে তো কথাই নেই৷ মোট কথা, নিজস্বতা বলে কিছু একটা যেন থাকে৷ শরীর ঠিক রাখুন৷ ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাওয়া–দাওয়ার কোনও বিকল্প নেই৷ সঙ্গে একটু আধটু রূপচর্চা৷ সময় কাটবে৷ একাকীত্বের সবচেয়ে বড় দাওয়াই প্রেম৷ তবে বুঝেশুনে৷ যে কোনও সম্পর্কেই ভেবেচিন্তে না এগোলে বিপদে পড়ার আশঙ্কা আছে৷ প্রেমে ঝগড়া বা খিটখিট করে যাবেন না৷ তাতে অশান্তি বেড়ে আরও একা হয়ে যাবেন৷ কাজেই সহ্যশক্তিও একটু আধটু বাড়ান। ঘন ঘন বিরক্ত হলে মন ভাল থাকে এমন কিছু অভ্যাস করুন। একান্তই তা না পারলে মনোবিদদের সাহায্য নিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy